মৌলভীবাজারে গণশিক্ষার নামে টাকা লোপাট!
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ১০:০৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলায় উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো এর অধীনে মৌলিক স্বাক্ষরতা (গণশিক্ষা) এর নামে লাখ লাখ টাকা লোপাট হচ্ছে। ছয় মাসের প্রকল্পের উপকরণের নামে এনজিও সংস্থা ওয়াফ ও নামে মাত্র শিক্ষকদের মাধ্যমে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী ছাড়া স্থানে স্থানে নামে মাত্র স্কুল ও শিক্ষক নিয়োগ দেখিয়ে ছয় মাসে সরকারি এসব টাকা গচ্চা গেলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বয়স্কদের জন্য গণশিক্ষা কার্যক্রম দেশের অন্যান্য স্থানের মতো মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ ও কুলাউড়া উপজেলায় বিগত বছরের জানুয়ারি থেকে কার্যক্রম শুরু হয়। প্রকল্পের কার্যক্রম জুন মাসে সম্পন্ন হয়। স্থানীয় এনজিও সংস্থা হিসেবে কমলগঞ্জের দায়িত্ব পায় ওয়াফ ও কুলাউড়া উপজেলার দায়িত্ব পায় প্রচেষ্টা। শুরু থেকেই নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার মধ্যদিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাড়ায় চালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিবা ও রাত্রিকালীন দুই শিফট চালু করে। বাস্তবে গণশিক্ষার সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে স্কুল চালু দেখানো হয়। স্কুল চালুর পর চা বাগানের নামমাত্র হাতে গোনা দু’একটি স্কুল দেখানো হলেও বাস্তবে কোন শিক্ষার্থী ও স্কুল পরিচালনায় শিক্ষকের উপস্থিত হননি। সরকারি প্রকল্পের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।
এনজিও সংস্থা ওয়াফ এর বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলায় ৩শ’ টি শিখন কেন্দ্র চালু দেখানো হয়। ৩শ’টি গণশিক্ষা কেন্দ্রে বিপরীতে পুরুষ ও মহিলা শিক্ষার্থীদের জন্য ৬শ’ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। এদের দেখাশুনার জন্য পুরো উপজেলায় ১৫ জন সুপারভাইজার নিয়োগ হয়। শিক্ষকদের মাসিক ১২শ’ টাকা ও সুপারভাইজারদের ২৫শ’ টাকা বেতনে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়াই গণশিক্ষা কার্যক্রম দেখানো হয়। স্কুল শুরু থেকে খাতা, কলমসহ নানা উপকরণের ভুয়া বিল দেখিয়ে এক সাথে ছয়মাসের উপকরণ ক্রয়ের নামে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এসব বিষয় নিয়ে নানা সময়ে অভিযোগ পাওয়া গেলেও দেখার কেউ নেই। যাদের নাম আছে স্কুল নেই তারাও টাকা তুলে নিয়েছে। এসব ক্ষেত্রে শিক্ষকদের কাছ থেকে এনজিওরা কিছু টাকা কর্তন করে নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক ও সুপারভাইজাররা জানান, স্কুল না থাকলেও বলা হয়েছে স্কুল দেখাতে। তাছাড়া স্কুল চালু করতে গেলে কোথাও বয়স্ক শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না। দু’একজন থাকলেও নানাভাবে বয়স্কদের নাম লিখিয়ে স্কুল দেখাতে হয়েছে। এসব প্রকল্পে আমাদের নিয়োগ দেওয়া হলেও টাকা আংশিক দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা দিতে গড়িমসি করছে। তবে এনজিও সংস্থা ওয়াফ গণশিক্ষার নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, ২০১৯ জুলাই মাসে এনজিও সংস্থা ওয়াফ এক সাথে ৬ মাসের উপকরণ ক্রয়ের ১৮ লাখ টাকা বিল ইউএনও স্বাক্ষরের জন্য দাখিল করে। কিন্তু ইউএনও আশেকুল হক উপকরণ বিষয়টি তিনি জানেন না বলে স্বাক্ষর দিতে রাজি হননি। পরে এনজিও সংস্থা ওয়াফ চাপে বিলে স্বাক্ষর দেন।
অভিযোগ বিষয়ে ওয়াফ এর নির্বাহী পরিচালক মো. আব্দুল মালিক বলেন, আসলে দেখাশুনার পর্যাপ্ত লোকবল ছিল না। তবে কিছু সমস্যা হলেও প্রকল্পের কার্যক্রম ও গণশিক্ষা ঠিকমতো পরিচালিত হয়েছে। কোথাও কোনো টাকা লোপাট হয়নি। তাছাড়া গত জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে।
কমলগঞ্জের গণশিক্ষা প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার সাইফুল ইসলাম বলেন, আসলে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগে এনজিওরা কিছু ফাঁকি দিয়েছে। তবে চা বাগানে মোটামোটি স্কুল দেখা গেছে। তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে যারা স্কুল চালায়নি, তারাও টাকা তুলে নিয়েছে। তাছাড়া যতোটুকু সম্ভব কাজ আদায় করে নেওয়া হয়েছে। আর প্রকল্পের কাজ গত জুন মাসে শেষ হয়েছে।
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জানান, প্রকল্প মেয়াদ শেষ হলেও শিক্ষকদের বকেয়া বেতন দুইধাপে প্রদান হয়েছে।
উপকরণ ক্রয়ে অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, এখানে দুইধাপে বিল হয়। প্রথম ধাপে উপকরণ ক্রয় এবং দ্বিতীয় ধাপে শিক্ষকদের বেতন। উপকরণের বিল আটকে দিলেও পরে নানা চাপে স্বাক্ষর করতে হয়েছে। তিনি আরো জানান, অভিযোগ শুনে কয়েকটি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন বন্ধ করেছেন।