সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূলদের অনেকেই পাচ্ছে না সরকারি শীতবস্ত্র
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ জানুয়ারি ২০২০, ৩:১২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। এতে সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে ছিন্নমূল ও নিম্নআয়ের মানুষ। প্রচণ্ড শীতে হতদরিদ্রদের কিছুটা উষ্ণতা দিতে সারাদেশে কম্বলসহ অন্যান্য শীতবস্ত্র পাঠাচ্ছে সরকার। আর তা পেতে দীর্ঘলাইন ধরে ভিড় করছেন তারা। তবে অনেকেই সরকারি বরাদ্দের শীতবস্ত্র না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া কেউ কেউ কম্বল বিতরণে অনিয়ম ও তা নিম্নমানের বলেও অভিযোগ তুলেছেন। কেউ কেউ বলছেন, ‘প্রতিবারই শোনা যায় সরকারি কম্বল দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা কখনও পাইনি।’ তবে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের দাবি, চাহিদার তুলনায় শীতবস্ত্র কম হওয়ায় কাউকে কাউকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ
জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলার ১১টি উপজেলায় ৭ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৩টি দুস্থ পরিবার রয়েছে। অথচ সুনামগঞ্জে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৫৫ হাজার ৪০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। হাওর, নদী ও পাহাড়বেষ্টিত এ জেলায় শীতের কারণে নিম্ন আয়ের লোকজন ও কৃষিজীবীরা বিপাকে পড়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে যত কম্বল এসেছে তার সবই বিতরণ করা হয়েছে। নুতন করে আরও ২০ হাজার কম্বলের জন্য আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলোর প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী বিতরণ করা হবে।’
মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজারে শীতের তীব্রতায় কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রা। বিশেষ করে চা-বাগান এলাকায় শীত সবচেয়ে বেশি। চা-গাছগুলো ঘন কুয়াশার আবরণে ঢাকা পড়ছে। শীতে স্বাভাবিক জনজীবনের কার্যক্রম ব্যাহতের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন স্থানে জ্বর-সর্দিসহ ডায়রিয়া ও ঠাণ্ডাজনিত রোগ দেখা দিয়েছে।
মৌলভীবাজার জেলা দুর্যোগ ও ত্রাণ পুনর্বাসন কর্মকর্তা আশরাফ আলী বলেন, ‘মৌলভীবাজার জেলা সদরসহ সাতটি উপজেলায় ৪১ হাজার ২০০ কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। আরও দুই হাজার বরাদ্দ আসছে। সেগুলোও বিতরণ করা হবে। নগদ ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ আসছে। সেখান থেকে শিশুদের পোশাক কেনা হবে দুই লাখ। বাকি টাকা দিয়ে শীতবস্ত্র (কম্বল) কিনে বিতরণ করা হবে।’
রংপুর
রংপুর জেলায় তিন লাখ হতদরিদ্র শীতার্ত পরিবারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার কম্বল। শীতবস্ত্র না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে নিম্নআয়ের অনেক মানুষ। এদিকে শীতে আগুনে পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে বেশ কয়েক ব্যক্তি নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
মৃত আরেফা বেগমের মেয়ে মমতাজ বেগম জানান, তার মা ৯০ বছরের বৃদ্ধা ছিলেন। এই শীতে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্র তাদের ছিল না। দুটি কাঁথা আর একটা পাতলা কম্বল দিয়ে শীত নিবারণ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে তার মা মারা যান।
একই কথা জানালেন মনোয়ারা বেগমের ছেলে জামান। তিনি রিকশা চালান। বলেন, যা আয় তা দিয়ে সংসার চলাই দুষ্কর, শীতবস্ত্র কেনার সামর্থ্য নেই। ফলে আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে তার মা মারা যান। তাদের বাড়ি রংপুর নগরীর স্টেশন ও কোটারপাড়া এলাকায়।
জেলা প্রশাসক আসিব আহসান বলেন, ‘শীতার্তদের গরম পোশাক দিতে পারলে ভালো হতো। তারপরও আমরা অনেককেই শিশুদের পোশাকসহ টাকা দিয়েছি। মন্ত্রণালয় আরও শীতবস্ত্র দেবে বলে জানিয়েছে।’
কুমিল্লা
কুমিল্লা জেলায় শীতার্তদের জন্য সরকার এক লাখ ২৪ হাজার কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে। তিন লাখ শীতার্তের জেলায় প্রয়োজনের তুলনায় কম্বলের পরিমাণ কম হওয়ায় গ্রামগঞ্জের অধিকাংশ ছিন্নমূল, হতদরিদ্র ও অসহায় মানুষ বঞ্চিত হয়েছে।
কুমিল্লা জেলার প্রায় তিন লাখের বেশি শীতার্ত মানুষ সরকারের এই কম্বল পাওয়ার যোগ্য বলে দাবি করেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনিরুল হক।
বগুড়া
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজাহার আলী মন্ডল জানান, জেলায় সোয়া লক্ষাধিক মানুষ ছিন্নমূল ও দুস্থ। ত্রাণ মন্ত্রণালয় গত নভেম্বর থেকে ২ জানুয়ারি পর্যন্ত তিন দফায় ৭৭ হাজার ৭০০ কম্বল পাঠিয়েছে। নতুন করে আরও ৩৬ হাজার কম্বলের চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের মাধ্যমে শীতবস্ত্র বিতরণের কথা থাকলেও তা করছে না। এজন্য তাদের চিঠি দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।
এদিকে শীতে রেল স্টেশন, টার্মিনাল, খোলা মাঠ ও রোড ডিভাইডারে আশ্রয় নেওয়া ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। বগুড়া স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে আশ্রয় নেওয়া গাবতলীর সুখানপুকুরের ভিক্ষুক আফজাল হোসেন (৬৫) জানান, তিনি কম্বল পাননি। বাড়িতে তার স্ত্রী ও চার সন্তানকে কেউ কম্বল দেয়নি। শহরের রিকশাচালক সোনাতলার আসাদ আলী একটা কম্বল পেয়েছেন। কিন্তু কম্বল গায়ে জড়িয়ে রিকশা চালানো কঠিন। তাই কম্বলটি বাড়িতে রেখে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘কম্বলের পরিবর্তে সোয়েটার বা অন্য গরম কাপড় দিলে ভালো হতো।’ স্টেশনের প্লাটফরমে থাকা পথশিশু সোলায়মান (১৪) জানায়, সে একটা কম্বল পেয়েছে; কিন্তু সেটা সব সময় গায়ে দেওয়া যায় না। একই কথা বলেছেন আরও অনেকে।