যে কারণে ইলিয়াস কাঞ্চনের পাশে থাকা জরুরী
প্রকাশিত হয়েছে : ৭:৩৪:৫৩,অপরাহ্ন ২৪ নভেম্বর ২০১৯
আরিফুল আলম জুয়েল:
সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক বা সাধারন মানুষ ট্রাফিক আইন মেনে চলুক, সিন্ডিকেট কিংবা চাঁদাবাজি সবকিছুই বন্ধ হোক, সড়ক দুর্ঘটনা না ঘটুক এসব কে না চায় বলুন!
কিন্তু একদল হায়েনা সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়িত হোক তা চাই না- এর জন্য নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের কর্নধার চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে লেগেছেন!
হ্যাঁ, নিয়মিত রাস্তায় পাওয়া গেছে কাঞ্চন সাহেবকে,মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন। মাইক হাতে টি শার্ট পরিহিত অবস্থায় কাকরাইল এলাকায় তাকে নিয়মিত পাওয়া যায়- চালকদের বুঝাচ্ছেন, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি না চালানোর অনুরোধ করেছেন।
যাত্রীদের বলেছেন সড়ক আইনের কথা, পথচারী পারাপারের নিয়মের কথা। কিন্তু কে শোনে কার কথা, আমরা কি কখনো শুনেছি তাঁর কথা! গত সাতাশটি বছর ধরে রাস্তায় নেমেছেন, গাড়ির চালকদের হাতজোড় করে অনুরোধ করেছেন সড়ক পরিবহন আইন মেনে চলার জন্য। বলেছেন পারিবারিক বন্ধনের কথা, বলেছেন সমাজের কথা, বলেছেন একটি পরিবারের কেউ যখন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হোন, তখন তাদের কেমন লাগে!
আমরা কি করেছি, তাকে দেখেও না দেখার ভান করেছি, মুচকি হেসে নিজের ইগোকে সমুন্নত রেখেছি! কিন্তু কাঞ্চন সাহেব দমে যাননি, প্রায় প্রতিদিনই নতুন উদ্যমে শুরু করেছেন তাঁর আন্দোলন! নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে সংগঠন চালিয়েছেন, অফিসের ভাড়া দিয়েছেন, লিফলেট ছাপিয়ে বিলি করেছেন সেগুলো।
এত ঝড়-ঝাপটার পরে আজ যখন সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হয়েছে, তখন পরিবহন ব্যবসার ধর্মপিতারা গাড়ি বন্ধ করে দিয়ে মানুষকে জিম্মি করতে চাইছে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স তাদের দিতে হবে, মানুষ মারার অধিকার তারা চায়! তাই তারা রাস্তায় গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে। মানুষের দুর্ভোগের উপর দাড়িয়ে পরিবহন মালিক আর শ্রমিকেরা অট্টহাসি হাসছে! শুধু তাই নয়, গাড়ি বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চনকে নিয়েও নোংরামী শুরু করেছে তারা।
কাঞ্চনের ছবি নিয়ে ব্যানার বানিয়ে টানিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন স্থানে, সেই ছবির সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে ঝাড়ু আর জুতা।
বিভিন্ন সময়ে তাকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছে বিভিন্ন পরিবহন সংস্থার লোকজন। রাজপথে তার কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে, তার ছবি পোড়ানো হয়েছে। পরিবহন শ্রমিকদের বিভিন্ন সমাবেশ থেকে তার ওপরে হামলা চালানোর উস্কানিও দেয়া হয়েছিল নানা সময়ে, এমনকি তার গাড়িতে ধাক্কা দিয়ে তাকে প্রচ্ছন্ন হুমকিও দেয়া হয়েছে।
ব্যানারে কি লেখা হয়েছে সেটা না হয় বাদই দিলাম। কি আর লিখবে, যে মানুষটির ছবি পোড়ানো হয়, ছবির গলায় জুতার মালা পড়ানো হয় তার নামে ব্যানারে তো কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তাই লিখবে! ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক আইন নিয়ে সব সময় সোচ্চার ছিলেন, প্রতিবাদ করেছেন অনবরত, লাইসেন্স ছাড়া যেন কোন গাড়ি না চলে, আনফিট কোন গাড়ি যেন না চলে রাস্তায়, সে দাবী তুলেছেন বারবার। সে জন্যই কি আজকে তাকে ধুয়ে তুলোধুনো করা হচ্ছে। এই কি তার প্রতিদান! আমরা তো এভাবেই প্রতিদান দিতে অভ্যস্থ, এ আর নতুন কি!
প্রসঙ্গত, ১৯৯৩ সালে চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন।
এ দুর্ঘটনায় পর অভিনয় থেকে নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে গড়ে তোলেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ নামের একটি সংগঠন। এ সংগঠনের ব্যানারে দেশজুড়ে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন এবং জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসচাপায় নিহত হওয়ার ঘটনায় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সড়কে নিরাপত্তার দাবিতে সারা দেশের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে।
শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে একাত্মতা ঘোষণা করে রাজপথে তাদের পাশে ছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এরপর থেকেই পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা তাঁর প্রতি ক্ষুব্ধ হন। আচ্ছা আপনার কি মনে হয়, ইলিয়াস কাঞ্চন কি একতরফাভাবে গাড়ির মালিক, ড্রাইভার বা শ্রমিকদের দায়ী করেছেন দুর্ঘটনার জন্য! না, তিনি পথচারীদের ও দায়ী করেছেন, একই সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায় ও দিয়েছেন।
তারপরও একদল ঘিলুহীন মানুষ কিছু মানুষকে উস্কে দিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে! প্রিয় ইলিয়াস কাঞ্চন, আপনি বেদের মেয়ে জোছনার প্রেমে পড়েছিলেন, নিরাপদ সড়কের প্রেমে পড়েছেন, পড়েছেন মানবিকতার প্রেমে- রাস্তায় মৃত্যু বন্ধ করতে চেয়ে আপনি উল্টো গাল-মন্দ, মশকরা শুনছেন। নিজেকে অভিশাপ না দিয়ে আপনি আপনার কাজ চালিয়ে যান, হায়েনার দল যাই করুক না কেন, আমরা আছি আপনার পাশে। আমরা অবশ্যই নিরাপদ সড়ক চাই!