সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা সড়ক নির্মাণে ৭৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ আগস্ট ২০১৯, ৩:০২ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
দিরাই-শাল্লা-জলসুখা সড়ক নির্মাণসহ ১২টি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলোতে ব্যয় হবে প্রায় ৩ হাজার ৪৭০ কোটি ২০ টাকা। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি টাকা।
প্রকল্পে অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িতদের শাস্তি বিধান নিশ্চিতের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় এমন নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব নূরুল আমিন, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম এবং ভৌত অবকাঠামো বিভাগের শামীমা নার্গিস। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মেঘনা নদীর ভাঙন থেকে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পটি প্রথম সংরক্ষণ অনুমোদনকালে প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশনা দেন। প্রকল্পে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। একনেক সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এ কথা বলেছেন। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের ব্রিফ করলেও ওই প্রকৌশলীর নাম বলেননি তিনি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্রেও সেই প্রকৌশলীর নাম জানা যায়নি।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌরসভার সংরক্ষণের জন্য একটি সংশোধিত প্রকল্প এসেছে। এখানে আর একটি প্রকল্প অতীতে করা হয়েছিল, যেখানে গাফিলতি ছিল। সেই ইঞ্জিনিয়ারের ভুলের জন্য ঐ প্রকল্পে আমাদের বহু ক্ষতি হয়েছিল। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হয়নি এবং সবকিছুই জলে গেছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওই একই লোক নাকি এখানে আবার ইঞ্জিনিয়ার। হাউ ইস ইট পসিবল? তার ভুলের জন্য আমাদের এত বড় ক্ষতি হয়েছে তাকে তিরস্কার না করে তাকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে- এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এ সময় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার কোনো সদুত্তর দিতে না পারলে প্রধানমন্ত্রী ওই প্রকৌশলীর শাস্তি নিশ্চিত করার কথা বলেন। পরিকল্পনামন্ত্রী আরো বলেন, সেখানে উপস্থিত পানি সম্পদমন্ত্রী বলেছেন তিনি নাকি এই বিষয়ে অবহিত রয়েছেন। তিনি নিজেই বিষয়টি দেখছেন। একনেক সভা শেষে তিনি (মন্ত্রী) এবং সচিব গিয়ে এর বিরুদ্ধে জোরালো ভূমিকা নেবেন এবং তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান। এদিকে রাঙ্গামাটি সড়ক বিভাগের অধীন পাহাড়ের ভূমিধস থেকে সড়ককে রক্ষায় ড্রেনসহ স্থায়ী প্রতিরক্ষামূলক আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করা হবে। এ জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ২৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চলতি বছর হতে ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করবে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। এ ছাড়া ৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১২ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ১৬৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ৩০৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়।
সভায় ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ স¤প্রসারণ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এতে ব্যয় হবে ১৭৫ কোটি টাকা। চলতি বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করবে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। নাটোর জেলার ৭টি উপজেলা নাটোর সদর, নলডাঙ্গা, বাগাতিপাড়া, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, লালপুর ও গুরুদাসপুরের কৃষকরা উপকৃত হবেন।
সভায় সাইবার আক্রমণ থেকে সরকারি তথ্যভান্ডার রক্ষা করতে ১৪৬ কোটি টাকার প্রকল্পও অনুমোদিত হয়েছে। ‘বিজিডি ই-গভ সিআইআরটি’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে আইসিটি বিভাগ ও বিসিসির অধীনে। প্রকল্পের প্রধান কাজ হবে ৩৮টি বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার সংগ্রহ করা, ব্যক্তি পরামর্শক নিয়োগ, কম্পিউটার এক্সেসরিজ সংগ্রহ করা এবং বিভিন্ন পর্যায়ের জনবল নিয়োগ দেয়া।
অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, জিএনএস করস-এর নেটওয়ার্ক পরিধি সম্প্রসারণ এবং টাইডাল স্টেশন আধুনিকীকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। থানচি-রিমকীর-মদক-লিকরি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের ব্য্যয় ধরা হয়েছে ৮৫৩ কোটি টাকা। সুনামগঞ্জ-মদনপুর-দিরাই-শাল্লা-জলসুখা-আজমিরিগঞ্জ-হবিগঞ্জ মহাসড়কের শাল্লা-জলসুখা সড়কাংশ নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬৯ কোটি টাকা।
খুলনা কর ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মধুমতি-নবগঙ্গা উপ-প্রকল্প পুনর্বাসন ও নবগঙ্গা নদী পুনঃখনন/ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবন পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা।
এ ছাড়া মেঘনা নদীর ভাঙন হতে ভোলা জেলার চরফ্যাশন পৌর শহর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার বড়িকান্দি হতে ধরাভাঙ্গা এমপি বাঁধ পর্যন্ত মেঘনা নদীর বাম তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি টাকা। ভূ-উপরিস্থ পানির সর্বোত্তম ব্যবহার ও বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে নাটোর জেলায় সেচ সম্প্রসারণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কৃষি বিপণন অধিদফতর জোরদারকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর, বিশেষত নারীদের জলবায়ু পরিবর্তনজনিত লবণাক্ততা মোকাবেলায় অভিযোজন সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।