সিলেটের একটিসহ দেশের ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ আগস্ট ২০১৯, ৩:১৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বর্তমানে দেশে ১০৪টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে; আর শিক্ষাকার্যক্রম চলছে ৯৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর মধ্যে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিসহ ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। মামলা-মোকদ্দমাসহ বিভিন্ন সমস্যা থাকায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগে শিক্ষার্থী-অভিভাবককে তথ্য যাচাইয়ের পরামর্শ দিয়েছে ইউজিসি।
সম্প্রতি ইউজিসির ওয়েবসাইটে এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি মৌসুম সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের সচেতন করতেই ইউজিসি এ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কয়েকটির বিরুদ্ধে অবৈধ ক্যাম্পাস চালানোর অভিযোগ রয়েছে। কোনোটির বিরুদ্ধে আছে অননুমোদিত প্রোগ্রাম চালানোর অভিযোগ। কয়েকটি আবার শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধের নির্দেশপ্রাপ্ত। সনদ বাণিজ্যসহ নানা অপরাধে কয়েকটি অভিযুক্ত এবং বন্ধ ঘোষিত। কিন্তু উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে সেগুলো পরিচালিত হচ্ছে। আবার মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বের অভিযোগ আছে কয়েকটির বিরুদ্ধে। নানা অভিযোগে বন্ধের সুপারিশও আছে কয়েকটির বিরুদ্ধে।
অবৈধ ক্যাম্পাস ও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় :
অবৈধ ক্যাম্পাস ও আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে চারটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হচ্ছে। ইবাইস ইউনিভার্সিটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ (বিওটি) নিয়ে দ্বন্দ্ব ও দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে আদালতে মামলা করেছে। ফলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। আর সরকার কর্তৃক বন্ধ করে দেওয়ার পরও আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা ও সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
অননুমোদিত ক্যাম্পাস নিয়ে পরিচালিত ১০ বিশ্ববিদ্যালয় :
অননুমোদিত ক্যাম্পাস থাকায় ১০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারি করেছে ইউজিসি। তার মধ্যে ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া বনানীতে অননুমোদিতভাবে ক্যাম্পাস চালাচ্ছে। এছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উত্তরায়, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভ ধানমন্ডিতে, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি ধানমন্ডিতে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সোবহানবাগে, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ উত্তরায়, উত্তরা ইউনিভার্সিটি উত্তরায়, এনপিআই ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ফার্মগেটে, শান্তা-মরিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি উত্তরায় এবং ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ পান্থপথে অননুমোদিতভাবে ক্যাম্পাস চালাচ্ছে।
বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং আদালতে মামলা বিচারাধীন পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয় :
বিওটি নিয়ে দ্বন্দ্ব ও আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ের। এগুলো হলো ইবাইস ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ।
অননুমোদিত প্রোগ্রাম-কোর্স নিয়ে পরিচালিত তিন বিশ্ববিদ্যালয় :
অনুমোদন ছাড়াই বিভিন্ন প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়েছে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেগুলো হলো সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও জেডএইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া গণবিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন অনুমোদিত কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।
শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি পায়নি দুই বিশ্ববিদ্যালয় :
বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দেওয়া হয়নি দুটি বিশ্ববিদ্যালয়কে। সেগুলো হলো কুইন্স ইউনিভার্সিটি ও দি ইউনিভার্সিটি অব কুমিল্লা।
বন্ধ ঘোষিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় :
২০১৭ সালের এপ্রিলে সরকার হাইকোর্টের নির্দেশে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে এর সব আউটার ক্যাম্পাস বন্ধ রয়েছে।
শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়নি ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে :
সরকার কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয় এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি। এগুলো হলো রবীন্দ্র সৃজনকলা বিশ্ববিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জের রূপায়ণ একেএম শামসুজ্জোহা বিশ্ববিদ্যালয়, জেডএনআরএফ ইউনিভার্সিটি অব ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেস, রাজশাহীর আহ্ছানিয়া মিশন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহীর শাহ মখদুম ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি, খুলনা খান বাহাদুর আহ্ছানউল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশালের ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি, ইন্টারন্যাশনাল স্টান্ডার্ড ইউনিভার্সিটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইউনিভার্সিটি।
গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩০ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে সতর্কতা জারির পাশাপাশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ না থাকা এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ব্যাপারেও সতর্ক করা হয়েছে। কেননা বাংলাদেশে এখনও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা বৈধ নয়। সনদে স্বাক্ষরের দায়িত্ব ভিসির। তাই যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নেই সেগুলোতে সনদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে থাকে। শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনকারী ৯৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৭৫টিতে ভিসি, ২৩টিতে প্রোভিসি এবং ৪৮টিতে কোষাধ্যক্ষ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, প্রত্যেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রোভিসি ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি।
জানা গেছে, উচ্চশিক্ষা নিতে এসে শিক্ষার্থীরা যাতে প্রতারণা বা ক্ষতির শিকার না হন, সেজন্য বিভিন্ন সময়ে গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান তুলে ধরে ইউজিসি। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি গণবিজ্ঞপ্তিটি জারি করে ইউজিসি। এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, আইন লঙ্ঘন করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয় প্রোগ্রাম ও ক্যাম্পাস চালাচ্ছে সেগুলোতে শিক্ষার্থীরা যাতে ভর্তি না হন সেজন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য কেউ যেন কোথাও আন্দাজে ভর্তি হয়ে প্রতারিত না হয়, সে ব্যাপারে সচেতন করা।