জাহিদুল ইসলাম:
ছুটি কাটানোর জন্য পছন্দের তালিকায় শীর্ষে থাকা সিলেটের প্রতিটি পর্যটন স্পটই লোকে লোকারণ্য থাকে এ মৌসুমে। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি হওয়ায় পর্যটক সমাগম আগের তুলনায় বেশি হবে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা। নগরীর বেশিরভাগ হোটেলের সব কক্ষ এরই মধ্যে বুকিং হয়ে গেছে। আসন সংকটে রয়েছে সিলেটমুখী বাস-ট্রেন ও ফ্লাইটগুলোও।
চা-বাগান, হাওর-নদী, পাথর আর পাহাড়ের গভীর মিতালি এ অঞ্চলে। দেশের উত্তর-পূর্ব সীমান্ত লাগোয়া পর্যটন কন্যা জাফলং আর স্বচ্ছ জলের নদী লালাখাল ঘিরে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে সবচেয়ে বেশি। এ ছাড়া বিছনাকান্দি, রাতারগুল, ভোলাগঞ্জে জল পাহাড়ের অপরূপ সৌন্দর্যের সঙ্গে দেখা মেলে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের সারি সারি ঝরনার। তবে এবারের ঈদে জাফলং-লালাখাল আর বিছনাকান্দির চেয়েও পর্যটকদের বেশি আগ্রহ থাকবে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর এলাকাটি ঘিরে। সদ্য জনপ্রিয় হওয়া এই স্পটটি এরই মধ্যে পেয়েছে ব্যাপক পরিচিতি। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় খুব সহজেই পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে এই স্পটটি। নগরীর আম্বরখানা থেকে সরাসরি সিএনজি অটোরিকশাযোগে যাওয়া যায় ভোলাগঞ্জে। সারি সারি পাথর বিছানো স্বচ্ছ জল আর মেঘালয়ের সবুজ ঘেরা পাহাড়ের কারণে জায়গাটির আবদেন অন্যরকম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বন্যার কারণে সিলেটের প্রতিটি পর্যটন স্পটেই পানি কিছুটা বাড়তি। তাই ভ্রমণে পর্যটকদের কিছুটা সতর্কতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছে প্রশাসন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক এম কাজী এমদাদুল ইসলাম জানান, পর্যটকদের চলাফেরা নির্বিঘ্ন করতে ও হয়রানি এড়াতে জেলা প্রশাসন থেকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশকে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের কথা জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখনো সিলেটের নদ-নদীগুলোর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। জাফলং, বিছনাকান্দিসহ কয়েকটি স্পটে পানির স্রোতও বেশি। এসব স্পটে বিপজ্জনক সংকেত হিসেবে লাল পতাকা স্থাপন, জনসচেতনতায় মাইকিংসহ সার্বক্ষণিক পুলিশের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানিগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের ইউএনওকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে স্থানীয় সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে পর্যটক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। এবারের ঈদে দুর্ঘটনা এড়িয়ে পর্যটকদের ভ্রমণ নিরাপদ করতে পুলিশের পক্ষ থেকেও ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সিলেট জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান খান জানান, এবার পর্যটক সমাগম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই প্রতিটি পর্যটন এলাকায় পুলিশ সদস্যের সংখ্যা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঈদের দিন থেকেই নিয়মিত দায়িত্বরতদের সঙ্গে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্যরা যোগ দেবেন। ট্যুরিস্ট পুলিশের সঙ্গে পর্যটন স্পটগুলোর নিরাপত্তায় র্যাব ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে।
এ ছাড়া স্থানীয়দের সঙ্গে বেশ কয়েকটি বৈঠক করা হয়েছে, যাতে পর্যটকদের হয়রানি করা না হয়। তিনি বলেন, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলোতে ফায়ার সার্ভিসের বিশেষ দলের উপস্থিতি নিশ্চিতে তাদের সঙ্গে আলাপ করা হয়েছে। পাশাপাশি পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে যাতে সাঁতার না জানা পর্যটকরা পানিতে নামা থেকে বিরত থাকেন।
এদিকে ইতোমধ্যেই সিলেটের প্রায় বেশিরভাগ আবাসিক হোটেলের সব কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে। সিলেট নগরীর হোটেল গোল্ডেন সিটি- এর জেনারেল ম্যানেজার মিষ্টু দত্ত জানান, আমাদের হোটেলে সব আসন বুক হয়ে গেছে। ঈদের পরদিন থেকেই পর্যটক আসা শুরু হবে। পরবর্তী ৬/৭ দিনই থাকবে পর্যটকদের ঢল। তাই ব্যস্ত সময় পার করতে হবে এ কয়েক দিন।