ডেঙ্গুর ভয়াবহতা এবং সাধারন নাগরিক হিসেবে আমাদের করনীয়
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ আগস্ট ২০১৯, ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ
খায়রুল হাসান রুবেল:
ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলেছে।এবং তা ক্রমশ ভয়াবহ আকার ধারন করছে।পত্র পত্রিকা সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যেসব মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে, বাস্তবে এ সংখ্যা তার চেয়েও অনেক বেশি।সব খবর তো আর মিডিয়া কভার পাওয়া সম্ভব নয়।ব্যক্তিগত ভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করছে এমন অনেকের খবরই জানি।
এভাবে যে যার এলাকার হয়ত অনেকেরই খবর জানেন।যা হয়ত মিডিয়ায় আসেনা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সবার মানবিক দৃষ্টিভঙি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।কেউ আক্রান্ত হন কিংবা না হন এটাকে নিজের সমস্যা হিসেবে বিবেচনা করে তা নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
রাষ্ট্র কি করল সেদিকে চেয়ে থেকে লাভ নেই।কেননা সঠিক সময়ে রাষ্ট্রের তরফে সঠিক পদক্ষেপ নিলে ডেঙ্গু এত ভয়াবহ আকার ধারন করতো না।ডেঙ্গুর বিস্তার এই পর্যায়ে পৌঁছানোর পরও সংশ্লিষ্টরা যেন কাজের চেয়ে কথায় আর প্রচার প্রচারনায় পারঙ্গমতা দেখাচ্ছে।
কেউ কেউ আবার এটাকে গুজব বলেও চালিয়ে দিতে চাইছে।আজগুবি সব তত্ত্ব প্রচার করছে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা।যা একদিকে যেমন হাসির খোরাক যোগাচ্ছে অন্যদিকে তেমনি জনগনকে নিয়ে এদের উপহাস দেখে মনও ভারাক্রান্ত হচ্ছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সাধারন নাগরিকরা যা যা করতে পারি:
* রক্ত দিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীকে সাহায্য করতে পারি: আমরা আমাদের নিজেদের জানাশোনার মধ্যে অথবা বিভিন্ন ভাবে রক্তের জন্য আবেদন করে থাকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত এমন রোগীদের রক্তের গ্রুপ মেলা সাপেক্ষে রক্ত দিয়ে সাহায্য করতে পারি।যদি চিকিৎসকে পরামর্শ অনুযায়ী তা প্রয়োজন হয়।
রক্ত দান সম্পর্কে অনেকেরই ভ্রান্ত ধারনা প্রচলিত আছে।তা পরিহার করতে হবে।একজন সুস্থ সবল মানুষ প্রতি তিন মাসে একবার করে রক্ত দিতে পারে।এতে কোন ধরনের অসুবিধা হয়।বরং এই ঘাটতি দ্রুতই পূরণ হয়ে যায়।রক্তদানের মাধ্যমে একজন মানুষের জীবন বেঁচে যেতে পারে।এটাই সবচেয়ে বড় আত্মতৃপ্তির।তাছাড়া মানুষ বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই হওয়া উচিত।
মশার প্রজনন স্হল ধ্বংস করুন:- বদ্ধ পানি ডেঙ্গু মশার প্রজনন স্থল। তাই ঘর-বাড়ি ও এর চারপাশে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ক্যান, টিনের কৌটা, মাটির পাত্র, বোতল, নারকেলের মালা ও এ জাতীয় পানি ধারণ করতে পারে এমন পাত্র ধ্বংস করুন যাতে পানি জমতে না পারে। এছাড়া বড় বড় ভবনের আশপাশে, কোণায়, ডাস্টবিন ও এর আশপাশের স্থান,এমনকি ঘরের বাথরুমের বালতি বদনা এসব স্থানেও যেন চার-পাঁচ দিনের বেশি পানি জমে না থাকে সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখুন। আবার ফ্রিজের নিচে, এসির নিচে, ফুলের টবে ও মাটির পাত্রে সামান্য পানি জমে থাকলে তাও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন। তাহলে সহজেই ডেঙ্গুর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
মশারি ব্যবহার করুন:- বর্ষাকালে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করুন। এটা ডেঙ্গু প্রতিরোধের সর্বোত্তম পন্থা। এডিস মশা দিনের বেলাতেও কামড়ায়। তাই দিনের বেলা ঘুমালেও মশারি ব্যবহার করুন।
মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার:- দিনে এমনকি রাতেও শরীরে মশা নিরোধক ক্রিম ব্যবহার করুন। মশা তাড়াতে চাইলে তেলও ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া বাসাবাড়ি, হাসপাতাল, অফিস-আদালতের আনাচ-কানাচে মশার স্প্রে বা ওষুধ ছিটানোর ব্যবস্থা করুন, যাতে এসব স্থানে কোনোভাবেই মশা আশ্রয় নিতে না পারে।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করুন:- যে কোন রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা। এজন্য বাসার ডাস্টবিন সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। সেইসঙ্গে এর উপর ঢাকনা ব্যবহার করুন। টয়লেট পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি ফ্রেশনার ব্যবহার করুন। চাইলে ঘরের দরজা, জানালায় ও ভেন্টিলেটরে মশানিরোধক জালও ব্যবহার করতে পারেন।
তুলসি গাছ রোপণ :- জানালার পাশে তুলসি গাছ লাগান। এই গাছে এমন কতকগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা মশা তাড়াতে সাহায্য করে। এটাও ডেঙ্গু প্রতিরোধের ভালো উপায় হতে পারে।
কর্পূর ব্যবহার:- প্রাকৃতিক উপায়ে মশা তাড়াতে এটি ব্যবহারের বিকল্প নেই। দরজা-জানালা বন্ধ করে কর্পূর জ্বালিয়ে রুমের ভেতর রাখুন। ২০ মিনিট পর দেখবেন মশা একেবারেই চলে গেছে। মশার হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন সকালে এবং সন্ধ্যায় কর্পূর জ্বালিয়ে রাখুন।
নিজেকে আবৃত রাখুন:- ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঘরে এবং বাইরে চলার সময় এমন পোষাক পরিধানে সচেষ্ট হন যা আপনাকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করতে সহায়ক হয়।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলুন:- পরিবারের কোন সদস্য যদি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয় তাহলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহন করুন।স্বপ্রনোদিত হয়ে ঔষধ পথ্য গ্রহন থেকে বিরত থাকুন। হাতুড়ে ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ঔষধ সেবন কিংবা নিজস্ব চিন্তাধারা থেকে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত গ্রহন মারাত্মক ঝুঁকির কারন হতে পারে।
সচেতনা বৃদ্ধি :-স্কুল,কলেজ,মসজিদ থেকে এ বিষয়ে সচেতনতা মূলক প্রচার বেশি কার্যকরী।এছাড়া যুব সম্প্রদায় নিজ নিজ এলাকার জনগনের মধ্যে এ ধরনের সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করতে পারে। উপরোক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করলে ডেঙ্গু পরিস্থিতি সহজে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।