ব্রিটেনে পশু কোরবানী ও বাঙালি কমিউনিটি
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১১:৫১ অপরাহ্ণ
জুবায়ের আহমেদ:
প্রবাসের ঈদ উদযাপন এমনিতে মলিন আর ফ্যাকাশে।কেউ বলেন পানসা। আর তারপর যদি থাকে কোনো বাড়তি টেনসন, তাহলে তো কথাই নেই।পুরো ঈদটা-ই যেন মাটি। এই ভাবনাটির কারণ অহেতুক নয়। অথবা শুধু ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখের বৃত্তের মধ্যেই সীমিত নয়।দেশকে নিয়ে প্রবাসীদের অন্তহীন অন্তর্জালা কতটা যে গভীর ও বেদনাময় তা ভুক্তভোগী প্রবাসীরাই জানে। তবে অদৃশ্য এই অনুভূতির জায়গাটুকু প্রেরিত রেমিটান্সের হিসাব দিয়ে অঙ্ক কষলে বের হবেনা যে!
দূর থেকে দেশকে ভালোলাগা ও ভালবাসার এই হৃদয় স্পর্শী আবেগটুকু যে কতটা ননস্টপ তা আজ নয়, আরেক দিন প্রকাশ করবো। বলছিলাম ফ্যাকাশে ঈদ আর বাড়তি টেনসনের কথা।শঙ্কাহীন ভাবে ঈদ পালনের মতো অবস্থা যেমন দেশে নেই, তেমনি প্রবাসেও এর খুব একটা ব্যতিক্রম নয়। কারণ,প্রবাসীদের ভালো থাকা, মন্দ থাকা অনেকটাই নির্ভর করে দেশের মানুষগুলো সুস্থ ও শান্তিতে থাকার উপর।
প্রবাসীরা তো পরবাসী। তবু মন আর হৃদয়টা যে কখনই পরবাসী হতে পারে না।ভালো লাগা, না লাগার পুরো আবেগটাই যেন বরাদ্ব থাকে দেশের জন্যে, দেশের স্বজনদের জন্যে।’প্রবাসী’ মানে বৃক্ষের শিকড় রেখে উপড়ে ফেলা এক গুচ্ছ ডালপালা, যে সর্বক্ষণ শিকড়ের সন্দ্বানে হাতছানি দিয়ে ডাকে।অন্তত: ব্যক্তি প্রবাসী হিসাবে দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আমার কাছে তা-ই মনে হয়।
যাক,এবার ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে। আগামী রবিবার ব্রিটেনে ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে। উন্মুক্ত মাঠে সচরাচর ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় না। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াই এর অন্যতম কারণ। কমিউনিটির মসজিদ গুলোতে ঈদের জামাত হয়ে থাকে। তবে এবার আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় খোলা মাঠে ঈদের নামাজ আদায়ের আশা প্রকাশ করেছেন।
ঈদুল আযহার প্রধান দিক পশু কোরবানি হলেও এই ধর্মীয় বিধানটি পালন করা এখানে এতটা সহজ নয়, যেমনটা আমাদের দেশে করা হয়ে থাকে। কসাইখানার বাইরে পশু কোরবানির অনুমতি না থাকায় মূলত এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। লন্ডনের মুসলিম প্রবাসী জনগোষ্ঠীর মধ্যে কোরবানি দেবার ব্যবস্থা ঠিক কবে প্রথম চালু হয়েছিল তার সঠিক ইতহাস কোথাও স্পষ্ট করে লেখা না থাকলেও ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী লন্ডনে একসময় হালাল মাংস পাবার সুযোগ ছিল খুবই সীমিত।নিজ দায়িত্বে পশু কিনে কোরবানী দেয়ার মতো পরিবেশ ও পরিস্থিতি এইখানে কোনটাই নেই।এখানে হালাল মাংস বিক্রি করার অনেক বাঙালি ও পাকিস্তানি দোকান রয়েছে। কেউ কোরবানী দিতে চাইলে এই সব দোকানের মাধ্যমে সরকার অনুমোদিত কসাইখানায় কোরবানির ব্যবস্থা করা যায়।তবে কোনো উন্মুক্ত জায়গায় নয়।ব্রিটেনের কোথাও উন্মুক্ত জায়গায় পশু কোরবানির অনুমতি নেই। কসাইখানার বাইরে পশু কোরবানির অনুমতি না থাকায় এই ধর্মীয় বিধানটি পালন করা কিছুদিন পূর্বেও অত সহজ ছিলনা।সেই সময়গুলোতে বাঙালিরা প্রবাস থেকেই দেশে পারিবারিক কোরবানিতে অংশ নিতেন। কিন্তু সে পরিস্থিতি এখন অনেকটা বদলে গেছে।বেশ কয়েক বছর যাবৎ বাঙালি কমিউনিটিতে ব্রিটেনে কোরবানির জন্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একটি নতুন পদ্বতি।হালাল মাংশ বিক্রির দোকান গুলোতে এখন বুকিং পদ্ধতির মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।শুধু লন্ডনেই নয়, লন্ডনের বাইরের শহরগুলোতেও মূলত মাছ-মাংশের দোকান গুলোতে বুকিং-এর মাধ্যমে কোরবানির ব্যবস্থা হচ্ছে। কোরবানির ঈদ আসার কিছুদিন আগে থেকেই লন্ডনের মুসলিম অধ্যুষিত অনেক এলাকায় মাংসের দোকানে বিজ্ঞাপন ঝুলিয়ে রাখা হয়।অনেক বাঙালি দোকানগুলোতে ‘এখানে কোরবানির বুকিং নেয়া হয়’ এই শিরোনামে দোকানের দরজা -জানালায় লিফলেট টাঙিয়ে রাখা হয়।এই বুকিং প্রথা চালু হওয়ায় কোরবানি দেয়ার জনপ্রিয়তা এখন অনেকটা বেড়ে গেছে। আর এই দোকানগুলো অধিকাংশই বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের মানুষজনদের। হালাল মাছ মাংশের দোকান গুলোতে নিজের নাম লিখিয়ে বা ফোনের মাধ্যমেও কোরবানির বুকিং নেয়া যায়।বুকিং এর জন্যে কিছুটা অর্থ অগ্রিম পরিশোধ করা লাগে। ঈদের দিনে কসাইখানার ভেতরে ধর্মীয় রীতিনীতি অনুযায়ী প্রদত্ত নামে কোরবানি হয়ে থাকে। কিন্তু কোরবানির এই মাংশ ঈদের দিন পাওয়া যায়না।একদিন পর বা কখনো কখনো তার পরের কয়েকদিনের মধ্যে মাংস ডেলিভারি দিয়ে থাকে।
লন্ডনে ছাগল খুব একটা নেই তবে ভেড়ি ও গরু জবাই হয়ে থাকে। ঈদের আনন্দ হোক সবার নিত্য দিনের সঙ্গী।ঈদ মোবারক!!
বিনা অনুমতিতে সুরমা নিউজের কোন সংবাদ, ছবি ব্যবহার করা যাবেনা। করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে