সিলেটে সক্রিয় সিন্ডিকেট, ‘হাটে গরু ঢুকাও নতুবা চাঁদা দাও’
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ আগস্ট ২০১৯, ১:২১ পূর্বাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেটে আসা মাত্রই চাঁদাবাজদের কবলে পড়ছে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক। চাঁদা দিলে ট্রাক ছাড়ে। নতুবা জোর করে অবৈধ হাটে গরু নিতে বাধ্য করে। বলছে- ‘হাটে গরু ঢুকাও, নতুবা চাঁদা দাও।’- এমন ঘটনায় সিলেটের পথে থাকা ব্যাপারীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। এতে করে সিলেটে গরু নিয়ে আসতে অনীহা দেখাতে শুরু করেছেন ব্যাপারী। এই অবস্থা চললে সিলেটের বাজারে কোরবানির পশুর সংকট দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে সিলেটে প্রধান পশুরহাট কাজিরবাজার কর্তৃপক্ষ। গতকাল বিকালে এই হাটের ম্যানেজার শাহাদত হোসেন লোলন জানিয়েছেন- ব্যাপারীরা ইতিমধ্যে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ট্রাকে করে পশু নিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছেন। আগে চলে আসা কয়েক ট্রাক গত দুই দিন থেকে সিলেটে ঢুকার পর সমস্যায় পড়ছে।
এর মধ্যে শনি ও রোববার দুটি ট্রাক নিয়ে ব্যাপারীরা এসে সিলেট জেলার প্রবেশপথ শেরপুরে আটকা পড়েন।
এ সময় ব্যাপারীরা ফোনে তাদের সহযোগিতা চাইলেও করতে পারেননি। কেউ কেউ এসে লালাবাজার এলাকায়ও চাঁদাবাজির মুখে পড়ছে। তিনি দাবি করেন- প্রতি ট্রাকে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। এই চাঁদাবাজির কারণে বাজারে পশুর দাম বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করেন তিনি। এদিকে- সিলেট শহর ও শহরতলিতে এবার ৭টি বৈধ পশুর হাট বসছে। এর মধ্যে স্থায়ী হাট একমাত্র কাজিরবাজার। আর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আরো দুটি হাট ইজারা দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে নগরীর লালদিঘীরপাড় ও অপরটি হচ্ছে টিলাগড় পয়েন্টে। এর বাইরে নগরীতে আর কোনো হাট নেই বলে সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে। গতকাল বিকালে নগরীর খাসদবির এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন- ওই এলাকার প্রভাবশালী মতিন মিয়া নামের এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত ভূমিতে অবৈধ পশুর হাট বসানো হয়েছে। গতকাল এলাকায় এ নিয়ে মাইকিং শুরু হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ হাট বন্ধ করতে ইতিমধ্যে এলাকার মানুষ সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযোগ দিয়েছেন।
এলাকার লোকজন অভিযোগ করেন- স্থানীয় পুলিশকে ম্যানেজ করেই এ হাট বসানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ইজারা দেয়া দুটি হাটের কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে বলে স্থানীয়রা জানান। এর বাইরে সিলেটের শাহী ঈদগাহ, লাক্কাতোড়া, শাহপরান ও টুকেরবাজার এলাকায় আরো চারটি হাট বসছে। এই হাটগুলো ইজারা দিচ্ছে সিলেট সদর উপজেলা। এসব হাটে এখনো কোরবানির পশু তেমনটি উঠেনি। কাজিরবাজারগামী পশুবাহী ট্রাকগুলোকে টার্গেট করে ওই হাট কর্র্তৃপক্ষ বিভিন্ন স্থানে লোকজন রেখেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে- গতকাল সোমবার থেকে সিলেটের প্রধান পশুর হাট কাজিরবাজারে পশু বিকিকিনি শুরু হয়েছে। এখনো বাজারে ২৫ ভাগ পশু আসেনি বলে হাট কর্তৃপক্ষ জানান। এখন যা আছে সব হচ্ছে দেশি গরু। কয়েকজন ব্যাপারী উত্তরবঙ্গ থেকে পশু নিয়ে পথে পথে ভোগান্তির শিকার হয়ে কাজিরবাজারে এসেছেন। এখানে এসেও তাদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তির মধ্যে। এই হাট কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন সিরাজগঞ্জ থেকে আসা ব্যাপারী ও আল মামুন ডেইরি খামারের স্বত্বাধিকারী সাইদুল ইসলাম।
তিনি জানিয়েছেন- কাজিরবাজার হাটে গরু নিয়ে আসার পর জায়গার ভাড়া হিসেবে হাট মালিককে দিতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকা। বাঁশ ও বিদ্যুৎ সংযোগ বাবদ দিতে হচ্ছে ১৩ হাজার টাকা। এই টাকাগুলো আগে দিয়েই গরু নামাতে হচ্ছে। এটা কোনো ভাবেই ঠিক হচ্ছে না। তিনি বলেন- অনেক ভোগান্তি মাথায় নিয়ে গরু নিয়ে সিলেটে এসে হাট মালিকের অনুগ্রহ না পেলে ব্যবসা করা কঠিন হয়ে পড়বে। এতে করে কাজির বাজারের প্রতি ব্যাপারীদের আগ্রহ কমে যাবে বলে জানান তিনি। ঝিনাইদহ থেকে ৪৫টি গরু নিয়ে সিলেটে এসেছেন ব্যাপারী আফজল হোসেন। তিনি গতকাল বিকালে গরু নিয়ে ক্রেতার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন। বিকাল পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেননি। তিনি বলেন- এখনো বাজারে ক্রেতা আসেনি। যারা আসছে তারা দরদাম করছেন বেশি। ঈদ ঘনিয়ে এলে বিকিকিনি ভালো হবে বলে জানান তিনি। সিলেটের কোরবানির পশুর হাটের সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আজ সকালেই সিলেট মহানগর পুলিশ বৈঠক করবে। এ বৈঠকে নেয়া হবে সব সিদ্ধান্ত। তবে শান্তি শৃঙ্খলার স্বার্থে হাটবাজার কর্তৃপক্ষকে যেকোনো সময় মহানগর পুলিশ সহযোগিতা করত প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান সিলেট মেট্রোপলিট পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মুছা। তিনি বলেন- চাঁদাবাজি কিংবা হাটবাজারকেন্দ্রিক সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। অভিযোগ কিংবা খবর পেলেই ব্যবস্থা নেবে।
মানবজমিন