ওসমানীনগর-বালাগঞ্জে ছেলেধরা আতঙ্ক: গুজবে কান না দিতে পুলিশের আহবান
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ জুলাই ২০১৯, ৫:১৫ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কথিত ‘ছেলেধরা’ আতঙ্কে রয়েছেন ওসমানীনগর-বালাগঞ্জের মানুষ। দুই উপজেলার সর্বত্র এ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গত দুই সপ্তাহ ধরে গোটা উপজেলার সর্বত্র সাধারণ লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। কোনো কোনো স্থানের বাসিন্দাদের উদ্যোগে এলাকায় পাহারা বসানোর খবরও শোনা যাচ্ছে।
দিনে অথবা রাতে ছদ্মবেশে অপহরণ কিংবা অন্য কোনো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এমন গুজবে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে উপজেলার সর্বত্র। তবে, পুলিশ বলছে এরা ছেলেধরা নয়, যাদের আটক করা হয়েছে তাদের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ধারণা করা যায় এরা বিকৃত মস্তিষ্কের লোক ছিল।
সম্প্রতি ‘পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজে মানুষের কাটা মাথা ও রক্ত লাগবে বলে সারাদেশে গুজব ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সিলেট জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ও গণমাধ্যমে প্রেরিত এক গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে বলে হয়েছে,‘গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনিতে হত্যার মাধ্যমে কুচক্রী মহল দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ।
দুই উপজেলার একাধিক লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, এলাকায় সন্ধ্যা নামতেই খবর আসছে যে, ওই পাড়ায় ছেলে ধরা বা কল্লা কেটে নেয়ার জন্য লোকজন ঢুকেছে। তারা শিশু অপহরণ কিংবা অন্য কোনো অপরাধের চেষ্টা করছে। এক কান দু’কান করে এ খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রামের নীরিহ লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে রাত জেগে অপরিচিত লোকজন দেখলেই ধরার চেষ্টা করছে। এমন ঘটনা দুই উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে ঘটেছে।
গত ২৪ জুলাই ওসমানীনগরের খালপাড় গ্রামের কতিত লংপীরের বাড়ি থেকে ছেলে ধরা সন্দেহে একজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে স্থানীয় জনতা। পরবতীয়তে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বনাথ উপজেলার শ্বাসরাম গ্রামের বসবাসরত বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (কৃষি শ্রমিক) ওই ব্যাক্তি ওই দিন রাত ৯টার দিকে কুরুয়া থেকে শ্বাসরাম যাওয়ার পথে বৃষ্টির কারণে পার্শ্ববর্তী খালপাড় গ্রােেমর লংপীরের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। বাড়ির লোকজন তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করলে প্রতিবন্ধি হওয়ায় টিকটাক উত্তর দিতে না পারায় তাকে ছেলে ধরা বলে সন্দেহ করে।
একই ভাবে বিগত কয়েক দিন পূর্বে বালাগঞ্জের আজিজপুর গ্রাম এলাকায় অচেনা এক লোক স্থানীয়রা আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তী সময়ে পুলিশ খোঁজ নিয়ে ও আটককৃত লোকের অসংলগ্ন কথাবার্তায় ছেলে ধরা নয় সে মানুষিক রোগি বলে জানা যায়। রবিবার সকালে ওসমানীনগরের কলারাই বাজার এলাকা থেকে এক ব্যাক্তিকে স্থানীয়রা আটক করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরবর্তীতে পুলিশ খোঁজ নিয়ে জানতে পারে সে জগন্নাথপুর উপজেলার বাসিন্দা মানুষিক ভারসাম্যহীন অবস্থায় এখানে এলে লোকজন তাকে সন্দেহ করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
এদিকে দুই উপজেলার থানা পুলিশের পক্ষ থেকে পরিস্থিতির উপর বিশেষ নজরদারী শুরু করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। থানা পুলিশ ‘গুজবে’ কান না দিতে, আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে আহ্বান জানিয়ে বালাগঞ্জ থানা এলাকায় মাইকিংসহ বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার প্রচারনা করে যাচ্ছে। ‘সন্দেহ জনক পরিস্থিতিতে থানা পুলিশ কিংবা ৯৯৯ নাম্বারে খবর দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে জনগণকে সতর্ক করা ছাড়াও মসজিদের ইমাম, স্কুলের শিক্ষক, জনপ্রতিনিধিদের এই সচেতনাতামূলক উদ্যোগে সম্পৃক্ত করা হয়েছে।
তবে, বালাগঞ্জ-ওসমানীনগর থানা এলাকা থেকে পৃথক স্থান থেকে গ্রামবাসীর সহায়তায় একাধিক ব্যাক্তিদের আটক করেছে পুলিশ। তাদের নাম পরিচয় জানা না গেলেও পুলিশ বলছে,তারা অপ্রকৃতিস্থ। স্থানীদের ধারণা, তারাও ছেলে ধরার মতো অপরাধের চেষ্টা করছে।
ওসমানীনগর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই সুজিত চক্রবর্তী সুরমা নিউজ টুয়োন্টিফোরকে বলেন, ইতিমধ্যে ওসমানীনগর এলাকায় দু’এক জনকে স্থানীয়রা আটক করে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা ছেলেধরা নয়, মানুষিক ভারসাম্যহীন ও বাক প্রতিবন্ধি। তিনি এসব গুজবে কান না দেয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, সাধারণ লোকজনের আতঙ্ক দূর করতে ইতিমধ্যে থানা পুলিশের পক্ষ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধিসহ সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
বালাগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ গাজী আতাউর রহমান সুরমা নিউজ টুয়োন্টিফোরকে জানান, ছেলেধরা বা কল্লা (মাথা) কাটার বিষয়ে যা প্রচার হচ্ছে তার সবই গুজব। বালাগঞ্জে যে দুই একজন ধরা পড়েছেন তারা মূলতঃ অপ্রকৃতিস্থ বা মানুষিক ভারসাম্যহীন ব্যাক্তি ছিল। স্থানীয়রা তাদের ছেলে ধরা মনে করে আটক করে। তারা কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত এমন প্রমাণও মেলেনি। এসব গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।