হবিগঞ্জে কুশিয়ারার ভাঙনে ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি, ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুলাই ২০১৯, ১২:৩২ অপরাহ্ণ
ছনি চৌধুরী, হবিগঞ্জ:
টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ ও আউশকান্দি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামের ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সোমবার বেলা দুপুর ১২টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সে.মি উপরে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পাউবো।
নবীগঞ্জের রাধাপুর গ্রামে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দ্রুতগতিতে প্রবল স্রোতে পানি প্রবেশ করছে। অন্যদিকে পাহাড়পুর এলাকাসহ বেশ কয়েকটি গ্রামে কুশিয়ারা প্রতিরক্ষা বাঁধ রয়েছে ঝুঁকির মুখে। রাধাপুর অংশের বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়ায় হু হু করে ধেয়ে আসছে কুশিয়ারা নদীর পানি। বড় ধরণের প্রবল ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী । ইতোমধ্যে কয়েকটি আধা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে পানির নিচে। বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা । পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে দীঘলবাক, ইনাতগঞ্জ, আউশকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ । ডাইকে ভাঙন দেখা দেয়ায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। সরকারের পক্ষ থেকে পৌঁছায়নি ত্রাণ সামগ্রী এমন অভিযোগ করেছেন বন্যার্ত লোকজন।
ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার ৫০টি গ্রাম তলিয়ে গেছে এবং তিনটি হাওরের কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। এই ডাইকটি ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে হবিগঞ্জের তিনটি উপজেলা নবীগঞ্জ, বাহুবল, বানিয়াচং ও আজমিরীগঞ্জের ভাটি এলাকা আক্রান্ত হতে পারে ।
ইতোমধ্যে কসবা বাজু সুনাইত্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দীঘলবাক সুলেমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা কার্যক্রম। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বাঁধ মেরামতের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে পানির স্রোত বেশি থাকায় বস্তা ফেলেও পানি আটকানো সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার অবনতি হয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এছাড়া ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক বিভিন্ন উচ্চ বিদ্যালয় ও বিভিন্ন প্রাইমারী স্কুলের বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলার, রাজের বন্ধ, জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলি বিল, বড় হাওর, গুঙ্গিয়াজুরি হাওরের প্রায় ১০ হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পানি তীব্র আকারে বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ইতোমধ্যে উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক, কসবা, কুমারকাঁদা, ফাদুল্লা, রাধাপুর, দুর্গাপুর, জামারগাঁও, মাধবপুর, গালিমপুর, পানিপাতা, দৌলতপুর, মতুরাপুরসহ ২০টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাঁও, পারকুল, ঢালার পাড়, দিঘরব্রামণ গ্রাম, পাহাড়পুর,ইসলামপুরসহ ১৫টি গ্রাম ও ইনাতগঞ্জ সদর ইউনিয়নের বিবিয়ানা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইউনিয়নে ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। ইনাতগঞ্জ বাজারের পার্শ্ববর্তী উমরপুর,ইনাতগঞ্জের বাজারের ছড়া, পুর্ব-বাজার,ইনাতগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি,কালনী, চন্ডিপুর, বটপারা, বাউরকাপন, মোকামপারা, মোস্তফাপুর,রাজনগরসহ আশ পাশের শত শত গরীব পরিবারের বাড়ি ঘরে পানি প্রবেশ করেছে।
আউশকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন, বলেন, কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে এ ইউনিয়নে প্রায় ১৫ টি গ্রাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। জোয়াল ভাঙ্গা হাওর, বেলী বিলের হাওরে কয়েক হাজার একর ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। রাতের বেলা পানি বৃদ্ধি পেয়ে কি হবে আল্লাহ ভাল জানেন। এখনো সরকারী ত্রান সামগ্রী তার ঐ এলাকায় পৌঁছেনি বলে জানান।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদ-বিন হাসান জানান, প্রতি ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে কুশিয়ারা ডাইক ভেঙ্গে গেছে তাই এটা মেরামত করা হচ্ছে। বিশেষ করে আউশকান্দি, ইনাতগঞ্জ ও দীঘলবাক ইউনিয়ন বেশি আক্রান্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলায় একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছি। জরুরী প্রয়োজনে সার্বক্ষণিক হট লাইন নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারবেন পানিবন্দি লোকজন । তিনি আরো বলেন, কুশিয়ারা ডাইক হঠাৎ করে ভেঙ্গে যাওয়ার ফলে কয়েকটি হাওরের কয়েক হাজার একর জমির ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
হবিগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তাওহীদুল ইসলাম ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী এম,এল সৈকত বলেন, সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার ৫১ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে যাওয়া কুশিয়ারা ডাইকে মেরামতের জন্য আমাদের লোকজন কাজ করছে। ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে আমরা বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকাতে জোরালো ভাবে কাজ করে যাচ্ছি । তিনি বলেন, সময় যত যাচ্ছে পানি বাড়ছে,আজ পানি কমার কোনো সম্ভবনা নেই । তবে বিবিয়ানা পাওয়ার ও বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ডের নীচু এলাকায় পানি প্রবেশ করলেও মূল যন্ত্রপাতির ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ বলেন, কুশিয়ারার পানি বেড়ে রাধাপুর গ্রামের কুশিয়ারা ডাইক ভেঙে গেছে এর ফলে দ্রুত পানি প্রবেশ করছে। ভাঙনকৃত ডাইক মেরামতের জন্য চেষ্টা চলছে । বেশ কয়েকটি এলাকায় বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেছি।