মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট গাড়ি স্ট্যান্ড এখন ‘ইভটিজিং স্ট্যান্ড’
প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুলাই ২০১৯, ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
স্কুল কলেজের মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার স্থানে পরিণত হয়েছে মৌলভিবাজারের চাঁদনীঘাট গাড়ি স্ট্যান্ড। যেখানে যাত্রীর জন্য অপেক্ষমান গাড়ি চালকদের যেন এটিই অন্যতম আনন্দের কাজ। শিক্ষার্থীরা যার নাম দিয়েছে ‘ইভটিজিং স্ট্যান্ড’। মেয়েরা এই স্থান পাড়ি দেন চরম আতঙ্কে। ওই স্থানটি নিয়ে মেয়েদের অভিযোগের অন্ত নেই। স্কুল কলেজের ছাত্রীরা প্রতিদিনই ওখানে যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসা যাওয়া সময় ওদের পাতানো ফাঁদে পড়ছেন তারা। প্রকাশ্যে দিন দুপুরে চলে ওদের এমন বখাটেপনা।
কিন্তু এমন দৃশ্য দেখেও কেউ প্রতিবাদী হয়না। বরং উল্টো অনেকেই তা দেখেও কৌশলে না দেখার ভান করেন। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর লোকলজ্জার ভয়ে সহ্য করেন ওই সকল শিক্ষার্থীরা। এই নিয়ে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন তারা। নিজেদের কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের ফেসবুক আইডিতে এই নীরবে সরব বখাটেপনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।
মৌলভীবাজার সরকারী কলেজ, সরকারী মহিলা কলেজ, শাহমোস্তফা কলেজ, কাশিনাথ আলাউদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজ, ইম্পিরিয়াল কলেজ, হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আলী আমজদ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ হেলাল উচ্চ বিদ্যালয় ও মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদ্রাসা। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে প্রতিনিয়ত কয়েক হাজার ছাত্রী পাঠগ্রহণ করতে আসেন। তাদের আসা যাওয়ার সময় চাঁদনীঘাট গাড়ি স্ট্যান্ড এলাকায় শিকার হতে হয় চরম বখাটেপনার।
সম্প্রতি সরকারী কলেজ ও মহিলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী এবিষয়ে তাদের ফেসবুক আইডিতে ওই স্থানগুলোতে তাদের চরম অসহায়ত্বের বিষয়ে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এদের মধ্যে জামি রহমান ও স্টুডেন্ট পাটফর্ম অব মৌলভীবাজার নামক ফেসবুক আইডির লিখাটি হুবুহু তুলে ধরা হল- ‘মৌলভীবাজার চাঁদনীঘাট বহু পরিচিত একটা জায়গার নাম। কুলাউড়া, রাজনগর, মুন্সিবাজার এলাকার লোকজন এই রোডে মৌলভীবাজার শহরে আসতে হলে তারা অবশ্যই চাঁদনীঘাট হয়ে আসতে হয়। চাঁদনীঘাট বাসস্ট্যান্ড, সিএনজি স্ট্যান্ড মৌলভীবাজারের অনেক প্রাচীন ও পুরাতন। জেলা শহরে সরকারী-বেসরকারী নামি দামি স্কুল কলেজ থাকায় রাজনগরের আশপাশের অনেকেই সেখানে লেখাপড়া করে থাকেন। শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা প্রতিদিন চাঁদনীঘাট হয়ে জেলা শহরে আসা যাওয়া করেন। তখন তাদের প্রতিনিয়ত সিএনজি ড্রাইভার দ্বারা ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয়।’
এক মেয়ে ফেসবুকে লেখেন, সামনে আমাদের পরীক্ষার সময় (২টা-৫টা) সে ক্ষেত্রে আমাদের বাড়ি পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে। আমাদের নিরাপত্তা আছে কি? মেয়ে বলে কি আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই? আমরাতো বোরখা পরে বের হই। তা হলে কেন আমাদের প্রতিদিন ভয়ের উপর যাত্রা করতে হয়। আমরা সামাজিক, শারিরীক, মানুষিক অত্যাচারে আছি। আমাদের সাহায্য করুন। মুরব্বিরা দেখেন কিন্তু তারা এড়িয়ে যান। আমরা কি পড়াশোনা বন্ধ করে দিব? উত্তরটা আপনাদের কাছে।
জেলা যৌন হয়রানী নির্মূল নেটওর্য়াকের আহবায়ক ও হাফিজা খাতুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশেদা বেগম জানান, যারা এই নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তারা আমাদের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দিলে আমাদেরও ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হয়। অবশ্য যারা অভিযোগ দিবে তাদের পরিচয় গোপন রাখা হবে।
এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেনি। তারপরও যেহেতু স্থানগুলোতে ইভটিজিংয়ের অভিযোগ উঠছে তাই এখন থেকে এই স্থানগুলোর প্রতি আমাদের আরো বাড়তি নজরদারি থাকবে।