সিলেটে বাণিজ্য মেলায় সার্কাসের নামে চলছে অশ্লীল নৃত্য
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুলাই ২০১৯, ৭:৪৭ অপরাহ্ণ
খালেদ আহমদ:
সিলেট শহরতলীর বটেশ্বরে মেলার আয়োজন করে আবারো আলোচনায় এসেছেন মেলা বাণিজ্যে আলোচিত মেলা ব্যবসায়ী মঈন খান বাবলু। কৌশল হিসেবে এবার তিনি ব্যবহার করেছেন বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির নাম। আর এই ব্যানারেই আয়োজন করেছেন শিল্প পণ্য মেলার। গত বৃহস্পতিবার রাতে অনেকটা নীরবেই সিলেট জালালাবাদ সেনানিবাস বটেশ্বর বাজার সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন মাঠে এই মেলার উদ্বোধন করেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ। মেলায় শিল্প ও পণ্যমেলার নামে এবার সার্কাস পার্টির আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
দেশী পণ্য প্রসারের নামে মেলা আয়োজন করা হলেও বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি কল্যাণ সোসাইটি নামের সংস্থাটি পরিকল্পনা করেছে সার্কাস ও পুতুল নাচের আড়ালে অশ্লীল নৃত্য, গাড়ি রেস, ওয়াটার পার্ক । পরিকল্পনা করছেন লটারী আয়োজনেরও। সার্কাস আয়োজনের জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। পণ্য প্রসারের জন্য আয়োজন করা মেলায় সার্কাস পার্টির আয়োজনের নিয়ম নেই। সেক্ষেত্রে নিয়ম ভঙ্গ করেই প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সার্কাস, বিপজ্জনক গাড়ি রেস, পুতুল নাচের আয়োজন করা হয়েছে। বটেশ্বর এলাকার বাসিন্দা সমুজ মিয়া চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, সম্মুখভাগে নামমাত্র কয়েকটি স্টল রয়েছে, যেগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ক্রোকারিজ, খাবারসহ কিছু জিনিসপত্র। পুরো চত্বরজুড়ে স্থাপন করা হয়েছে বাচ্চাদের খেলাধুলার রেলগাড়িসহ নানা সরঞ্জাম। মেলার অর্ধেক স্টল খালি পড়ে থাকলেও সেখানে ভালো পণ্যের দোকান বসানোর কোন উদ্যোগ নেই ব্যবস্থাপকদের। মেলার স্টলের চেয়ে সার্কাস, পুতুল নাচ, ওয়াটার পার্ক, গাড়ি রেসে সাধারণ মানুষের ভিড় বেশি। দোকানে কেনাকাটা না করে মেলায় আসা দর্শনার্থীরা ভিড় করছেন ‘নাচ গানের আসর’ সার্কাস ও পুতুল নাচে। সার্কাসে শিশুদের নিয়ে প্রবেশ করে অভিভাবকদের পড়তে হচ্ছে বিব্রতকর অবস্থায়। পারফর্মারদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির কারণে পরিবারসহ সার্কাস দেখতে গিয়ে পুরোটা বিপাকে পড়তে হয়।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির নামেই পণ্য মেলা। তবে এই সংগঠনের নেই কোনো কার্যালয়। বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কল্যাণ সোসাইটির সভাপতি এম.এম. মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা প্রতিবন্ধী মানুষ। সামান্য একটা মেলার আয়োজন করেছি। অথচ অনেকেই বিরোধিতা করছেন। অশ্লীল নৃত্য সার্কাস এ ধরণের কোন কিছু মেলায় হচ্ছেনা বলে দাবী করেন তিনি। এ ধরণের প্রমাণ দিতে পারলে তিনি মেলা বন্ধ করে দেবেন বলেও মন্তব্য করেন। তবে মঈন খান বাবলু মেলায় সার্কাসের আয়োজন রয়েছে স্বীকার করে দৈনিক জালালাবাদকে বলেন, এ মেলা আয়োজনে আমার কোন হাত নেই। আমি শুধু ইভেন্টের দায়িত্বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি কল্যাণ সোসাইটি বটেশ্বরে মেলা আয়োজনের জন্য এক বছর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন এনেছিল। তৎকালীন জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান মেলা আয়োজনের প্রাথমিক অনুমোদন দিয়ে এসএমপির অনুমতির জন্য পত্র পাঠিয়েছিলেন। পরে জাতীয় নির্বাচনের অজুহাত দেখিয়ে তিনি আদেশ বাতিল করে দেন। পরে বাংলাদেশ দৃষ্টি প্রতিবন্ধি কল্যাণ সোসাইটি বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে গেলে আদালত মেলা আয়োজনের সকল ব্যবস্থা করতে জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। সে নির্দেশের আলোকে মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) জেদান আল মূসা বলেন, মেলা অনুমোদনের বিষয়টি আমাদের এখতিয়ার নয়। এখানে কোন অসামাজিক কাজ চললে আমরা খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব। সূত্র- জালালাবাদ।