সুনামগঞ্জে দুই কোটি টাকার ৩৫টি বিল আটকে দিলেন ইউএনও!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ জুন ২০১৯, ১২:৪৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক :
জুন ক্লোজিং সামনে রেখে তিন লাখ টাকার জন্য প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকার ৩৫টি বিল আটকে দিয়েছেন তাহিরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসিফ ইমতিয়াজ।
২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের শেষ সময়ে নিজ বাসভবন মেরামতের নামে তিন লাখ টাকার বিল প্রস্তুত করার জন্য ঠিকাদারদের কাছে দাবি করেছিলেন ইউএনও। এ শর্ত পূরণ না হওয়ায় তিনি ৩৫টি বিল আটকে দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদাররা বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ইউএনও’র অফিস ও বাসভবনে দফায় দফায় ধরনা দিয়েও এডিপিসহ বিভিন্ন প্রকল্পের ৩৫টি বিলে তার স্বাক্ষর নিতে পারেননি। এ অবস্থায় বিল প্রাপ্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় পড়েছেন একাধিক ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা।
একাধিক ঠিকাদার যুগান্তরকে জানান, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এডিপি প্রকল্পের ৯৪ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, স্কুল উন্নয়ন খাতের ৪২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকাসহ এক কোটি ৬৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৫ টাকার বিল আটকে দেন ইউএনও।
সূত্র জানায়, জুন ক্লোজিং সামনে রেখে বিভিন্ন প্রকল্পের বিলে ইউএনওর স্বাক্ষর নিতে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প কাজের ঠিকাদাররা ও বিভিন্ন প্রকল্প কমিটির সভাপতিরা বেশ কয়েকদিন ধরেই ধরনা দিয়ে যাচ্ছিলেন ইউএনও’র কাছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় এসব বিলে স্বাক্ষর করার প্রতিশ্রুতিও দেন ইউএনও। কিন্তু নিজ কার্যালয়ে সকালে এসেও ইউএনও হঠাৎ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে নিজ বাসভবন মেরামতের তিন লাখ টাকার বিল তৈরির শর্ত জুড়ে দেন। বিকাল ৩টার দিকে দুপুরের আহারের কথা বলে তিনি বাসভবনে চলে যান। এরপর সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তিনি আর কার্যালয়ে আসেননি।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে সানি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান যুগান্তরকে জানান, ইউএনও’র বাসভবনের বিল প্রস্তুত করা না করার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা প্রকল্পের বিলে স্বাক্ষর না করার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। তিনি বলেন, আমাদের মতো ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সভাপতিদের জিম্মি করে রাখার কোনো যৌত্তিক কারণ তারা খুঁজে পাচ্ছেন না।
আরেক ঠিকাদার জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, বিলে স্বাক্ষর করবেন এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইউএনও তার দফতরের এক কর্মচারীর মাধ্যমে প্রত্যেক ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির সভাপতির কাছ থেকে এক শতাংশ হারে উৎকোচ আগাম আদায় করেছেন। এরপর আবার কেন বাসভবনের কথিত মেরামতের তিন লাখ টাকা বিলের জন্য আমাদের বিল আটকে রেখেছেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তাহিরপুর এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইদুল্লাহ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে দু’বার দুই লাখ করে বাসভবন মেরামতের কথা বলে ইউএনও চার লাখ টাকা বিল উত্তোলন করেছেন। এরপর তিন লাখ টাকা ব্যয়ে বাসভবনে ফের কী ধরনের মেরামত তিনি করবেন বা করছেন বা আদৌ মেরামত করেছেন কিনা তা আমার কার্যালয়কে অবহিত করেননি।
কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি বৃহস্পতিবার নতুন করে তিন লাখ টাকার বিল প্রস্তুত করার শর্ত দেন। এটির কোনো যৌত্তিক কারণ নয়। তিনি আরও বলেন, এক অর্থবছরে পুরো উপজেলা পরিষদের সরকারি ভবন মেরামতের মোট বরাদ্দ থাকে সাত লাখ টাকা। এরপরও ইউএনও’র একটি বাসভবন মেরামতের নামে দুই দফায় চার লাখ টাকার বিল ছাড় দেয়া হয়েছে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান করুণা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, ইউএনও তার বাসভবনে কী ধরনের মেরামত কাজ করেছেন তা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমার দফতর অবহিত নয়। তার বাসভবন মেরামতের বিল প্রস্তুত না করার অজুহাতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঠিকাদার ও প্রকল্প কমিটির বিলে ইউএনও স্বাক্ষর না করায় এডিপির টাকা ফেরত যাবে।
সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি। পরবর্তীকালে সন্ধ্যা ৭টা ৩২ মিনিটে একই মোবাইল ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালে তিনি কোনোরকম বক্তব্য দেননি। রাত ৮টা ৪৪ মিনিটে ফের কল করা হলে তিনি ক্ষুদে বার্তায় জানান ‘প্লিজ টেক্স মি’। পরে বক্তব্য জানতে চেয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ রাত ৯টায় যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।
পরে জেলা প্রশাসক যুগান্তরকে জানান, ইউএনও আমাকে জানিয়েছেন, তিনি বিল ছেড়ে দিয়েছেন। এ সময় ইউএনও’র আরেকটি মোবাইল ফোন নম্বরও দেন তিনি। ওই নম্বরে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। সূত্র- যুগান্তর