ইউরোপে ডাবলিন চুক্তি : স্বপরিবারে বসবাসের সুযোগ
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জুন ২০১৯, ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ
মুহাম্মাদ আল আমিন:
দেশে কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকা হোক না কেন, সকলেই চাই পরিবারের সাথে একত্রে বসবাস করতে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন মানবিক দিক বিবেচনা করে পরিবারের সদস্যদের একত্রে বসবাসের সুযোগ করে দিতে ডাবলিন চুক্তি ৩ অনুমোদন করেছে। এর ফলে আপনি যদি ডাবলিন চুক্তি ৩ আওতাভুক্ত যে কোন দেশে অবৈধ ভাবে বসবাস করেন আর আপনার পরিবারের কোন সদস্য যদি বৈধভাবে ডাবলিন চুক্তি ৩ আওতাভুক্ত দেশে বসবাস করে তাহলে আপনি আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে বৈধ ভাবে সেই দেশে বসবাসের সুযোগ পাবেন।
অর্থাৎ আপনি যদি গ্রীস, সাইপ্রাস এবং পোল্যান্ডে থাকেন আর আপনার পরিবারের সদস্য যদি ডাবলিন চুক্তি ৩ এ অন্তর্ভুক্ত ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, এবং জার্মানিতে বৈধ ভাবে বসবাস করেন তাহলে আপনিও আপনার পরিবারের সাথে সেই দেশে বৈধ ভাবে বসবাসের সুযোগ পাবেন।
ইউরোপের প্রাই প্রতিটি দেশ ডাবলিন চুক্তি ৩ এর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশ ডাবলিন চুক্তি ৩ এ স্বাক্ষর করেছে। চুক্তির আওতাভুক্ত দেশ সমূহ আপনার আশ্রয় আবেদন পর্যবেক্ষণ করবে এবং আপনার পারিবারিক পুনর্মিলনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
ডাবলিন চুক্তি ৩ এ আওতাভুক্ত দেশ সমূহঃ
অষ্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, চেক রিপাবলিক, ডেনমার্ক, এস্তনিয়া, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, হাঙ্গেরি, আইল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ইটালি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লুক্সেমবুর্গ, মালটা, নরওয়ে, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, স্লোভেনিয়া, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড এবং ইংল্যান্ড।
যারা যারা আবেদন করতে পারবেঃ
যদি আপনার পরিবারের কোন সদস্য (রক্ত সম্পর্কীয়) বৈধ ভাবে ডাবলিন চুক্তির আওতাভুক্ত দেশে বসবাস করে আর আপনি যদি আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে একত্রে বসবাসের ইচ্ছা প্রকাশ করে সরকারের কাছে আবেদন করেন তাহলে সরকার আপনার আবেদন পর্যবেক্ষণ করে সরকারি খরচে আপনাকে আপানার পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করবে। আবেদনের নিয়মাবলী বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। আপনি গ্রীসে অবস্থান করলে কিভাবে আবেদন করবেন সেই বিষয়ে আলোচনা করছি ৷
আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের নিচে হয় এবং আপনি যদি গ্রীসে একা বসবাস করেন তাহলে আপনি আপনার বাবা ও মা, ভাই ও বোন, চাচা, ফুপু, মামা এবং খালা, দাদা ও দাদির কাছে যাওয়ার আবেদন করতে পারবেন।
আপনার বয়স যদি ১৮ বছরের উপরে হয় তাহলে আপনি, আপনার স্বামী অথবা স্ত্রী ৷ সন্তান যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে এবং অবিবাহিত ৷ জীবনসঙ্গী (শুধুমাত্র কিছু দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য) এর সাথে একত্রে বসবাসের আবেদন করতে পারবেন।
যেভাবে আবেদন করা যাবেঃ
১. আপনি যখন গ্রীসে আশ্রয়ের জন্য (এসাইলাম) এর জন্য আবেদন করবেন তখন প্রাক-নিবন্ধন দিয়ে আপানার আবেদন শুরু হয়। প্রাক-নিবন্ধনের সময় আপনি আপানার পরিবারের সদস্য ইউরোপের কোন দেশে থাকে সে সম্পর্কে এসাইলাম অফিসে জানান এবং আপনার পরিবারের সদস্যদের সাথে থাকর ইছা প্রকাশ করেন।
২. যখন পূর্ণ রেজিস্ট্রেশন এর জন্য যাবেন তখন প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র সাথে নিয়ে যাবেন।
কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজনঃ
আপনি যার কাছে যাওয়ার জন্য আবেদন করেবন সেই ব্যক্তির কাছ থেকে নিম্নোক্ত কাগজপত্র সংগ্রহ করে আবেদনের সাথে জমা দিতে হবেঃ
১. পাসপোর্ট এর প্রথম পাতার ফটোকপি ৷
২. বৈধতার কাগজপত্র অর্থাৎ রেসিডেন্স পারমিট ৷
৩. কাজের চুক্তিপত্র (যেখানে কাজ করে সেখান থেকে চুক্তিপত্র নিতে হবে। আর যারা ব্যবসা করে তাদের ব্যবসায়িক কাগজপত্র)
৪. ট্যাক্স এর কাগজপত্র ( প্রতি বছর সরকারকে যে ট্যাক্স দেন (সর্বশেষ)ট্যাক্স এর কাগজ)
৫. ঘরের চুক্তিপত্র (ঘর উক্ত ব্যাক্তির নামে থাকতে হবে) ৷
৬. মেডিকেল ইন্সুরেন্স কার্ডের ফটোকপি
৭. পারিবারিক সনদপত্র ( যেটা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশণ থেকে সংগ্রহ করতে হবে)।
৮. যার কাছে যেতে চান উক্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ( letter of consent) যেখানে উক্ত ব্যক্তির নাম, ঠিকানা এবং আপনার সাথে উনার পারিবারিক সম্পর্ক উল্লেখ থাকবে এবং তিনি আপনাকে তিনার সাথে রাখার আগ্রহ প্রকাশ করবেন।
আপনার কি কি কাগজপত্র লাগবেঃ
আপনার নিজস্ব তেমন কোন কাগজপত্র লাগবে না আবেদনের সময় শুধু পারিবারিক সনদপত্র ( যেটা ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা অথবা সিটি কর্পোরেশণ থেকে সংগ্রহ করতে হবে) জমা দিতে হবে।
আবেদন পরবর্তী পদক্ষেপঃ
১. আপনার আবেদন গ্রীসের এসাইলাম অফিস পর্যবেক্ষণ করে তিন মাসের মধ্যে আপনার পরিবারের সদস্য যে দেশে থাকে অর্থাৎ যে দেশে আপনি যেতে চান সেই দেশের এসাইলাম অফিসে পাঠাবে।
২. ঐ দেশেরে এসাইলাম অফিস আপনার পরিবারের সদস্য এর সাথে যোগাযোগ করে একটি চিটিতে স্বাক্ষর করতে বলবে। ২ মাসের মধ্যে উনাকে ঐ চিঠিতে স্বাক্ষর করতে হবে এবং স্বাক্ষর করার পর উক্ত দেশের এসাইলাম অফিস গ্রীসের এসাইলাম অফিসে পাঠাবে।
৩. স্বাক্ষরিত চিঠি গ্রীসে আসার পর গ্রীস সরকার নিজস্ব খরচে ৬ মাসের মধ্যে আপনাকে আপনার পরিবারের কাছে পাঠাবে।
৪. আপনি আপনার পরিবারের সাথে যোগদানের পর উক্ত দেশের এসাইলাম অফিস আপনাকে সেই দেশে বৈধ ভাবে থাকার অনুমতি প্রদান করবে।
প্রতিবেদনটি পরে আপনার কোন জিজ্ঞাসা থাকলে আপনি আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন অথবা আপনি যেই দেশে থাকেন সেই দেশের কোন নজিওতে গিয়ে (যারা রিফিউজি নিয়ে কাজ করে) অথবা উকিল এর সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ নিতে পারেন।