দেশে ‘বড়লোক’ খ্যাত বাঙালিদের ব্রিটেনে নেই ‘তাদের’ ঘর-বাড়ি
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০১৯, ৫:৫৭ অপরাহ্ণ
লন্ডন অফিস:
ব্রিটেনে বসবাসরত ‘বড়লোক’খ্যাত বাঙালিদের আর্থিক অবস্থা ভালো নেই। প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকেই পিছিয়ে আছেন তারা। জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী। বিলেতের অধিকাংশ বাঙালিরই রয়েছে দেশে আলিশান ঘর-বাড়ি। ঐসব ঘরবাড়িতে থাকার মানুষ নেই। অনেক ঘর তালা দেয়া থাকে, অনেক ঘরে থাকেন শুধুমাত্র পাহারাদার। অন্যদিকে ব্রিটেনে তাদের থাকার মতো জায়গা নেই। এক বেডরুম, দুই বেডরুমের ঘরে ঠাসাঠাসি করে থাকেন পাঁচজন-সাতজন মানুষ। ঘরে একজন বাড়তি অতিথি এলে থাকার জায়গা দেওয়া যায় না। সরকারি পরিসংখ্যানও জানান দিচ্ছে, ব্রিটেনে সবচেয়ে ওভারক্রাউডেড বা জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস করেন বাঙালিরাই। সরকারি পরিসংখ্যানে বলছে, প্রতি ১০টি বাঙালি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবারই বাস করছে জনাকীর্ণ বাসভবনে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৭/১৮ সালে সোস্যাল হাউজিং প্রাপ্তিতে যে সব দুর্দশাগ্রস্থ পরিবারকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিলো তাদের মধ্যে বাংলাদেশি ব্যতীত অন্যান্য সব জাতিগোষ্ঠীর ঘর পাওয়ার পেছনে তাদের একমাত্র কারণ ছিলো গৃহহীনতা। আর বাঙালিদের সরকার বা কাউন্সিলের তরফ থেকে ঘর পাওয়ার বিষয়টির পেছনে লুকিয়ে আছে অন্য করুণ গল্প। দেখা গেছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তারা থাকেন জরাজীর্ণ অস্বাস্থ্যকর রুগ্ন পরিবেশে। গত বছরে যে সব বাঙালি পরিবার সোস্যাল হাউজিং বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের শতকরা ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ ক্ষেত্রেই জনাজীর্ণ পরিবেশে বাস করাই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সরকারি পরিসংখ্যানে। এছাড়া সর্বশেষ আদম শুমারির তথ্য বিশ্লেষণ করে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক জানাচ্ছে, ব্রিটেনে প্রতি ২০টির মধ্যে ১টি পরিবার হচ্ছে ওভারক্রাউডেড। এরমধ্যে ব্রিটেনে বাংলাদেশি পরিবারগুলোতে জনাকীর্ণ বসবাস সবচেয়ে বেশি। দেখা যাচ্ছে, ৩০ শতাংশ বাঙালি পরিবার বাস করছে ওভারক্রাউডেড হয়ে। নিয়ম অনুযায়ী, ওভারক্রাউডেড পরিবারের সদস্যরা সোস্যাল হাউজিংয়ে জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু দীর্ঘ ওয়েটিং লিস্টের কারণে নতুন বাসা পাওয়া তাদের জন্য দুঃসাধ্যই হয়ে ওঠে। কেবল জনাকীর্ণ পরিবেশে বসবাস নয়, আর্থিক সামর্থের ঘাটতির কারণে বাঙালিরা কাটাচ্ছেন কষ্ট-কঠিন জীবন। পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে, বেকারত্বে এবং দরিদ্রতায় সবচেয়ে বেশি এগিয়ে বাঙালিরাই। দরিদ্রদের জন্য থাকছে ওয়েলফেয়ার বেনিফিটের ব্যবস্থা। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ইউনির্ভাসাল ক্রেডিট বেনিফিট সিসটেমের কারণেও বাঙালি পরিবারগুলো নিদারুণ আর্থিক সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছেন। কনজারভেটিভ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইনকাম সাপোর্ট, ইনকাম বেইসড জব সিকার্স এলাউন্স, ইনকাম রিলেটেডে ইমপ¬য়েন্ট এন্ড সাপোর্ট এলাউন্স, হাউসিং বেনিফিট, চাইল্ড টেক্স ক্রেডিট এবং ওয়ার্কিং ট্যাক্স ক্রেডিট এই ছয়টি বেনিফিটকে এক সঙ্গে পরিশোধ করার জন্যে চালু করা হয় ‘ইউনিভার্সাল ক্রেডিট বেনিফিট সিস্টেম’। আগে এগুলো আলাদা আলাদাভাবে দেওয়া হতো। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আগামী ১০ বছরের ভেতরে ইউনিভার্সেল ক্রেডিটের ফলে সরকার অন্তত ৩৪ বিলিয়ন পাউন্ড সঞ্চয় করতে পারবে। অন্যদিকে কঠিন প্রক্রিয়ার ফলে সীমিত আয়ের পরিবারগুলো চরম টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছেন। আর সংকটসংকুল এসব পরিবারের তালিকায় এগিয়ে আছেন বিলেতের বাংলাদেশিরাই।