রাজনগরে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙ্গন, বন্যার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০১৯, ৮:৩৭ অপরাহ্ণ
সৈয়দ ফুয়াদ হোসেন, রাজনগর:
মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বন্যার আশঙ্কায় রয়েছে প্রায় ২০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ। শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের কালাইকোনা এলাকার একটি স্থানে ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয়রা মাটি ভরাট শুরু করেন। অব্যাহত ভারিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে মনু নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে আরো ভাঙ্গনের আশঙ্কায় রয়েছেন দুর্গত এলাকার লোকজন।
মনু ও ধলাই তীরবর্তী এলাকা সরেজমিনে ঘুরে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, মনু নদীর উজানে ভারতের ধর্মনগর, কৈলাশহর সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় প্রবল বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মৌলভীবাজারের রাজনগরে মনু ও কমলগঞ্জের ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁেধর তারাপাশার কালাইকোনা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিমের নেতৃত্বে মাটির বস্তা দিয়ে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করা হয়।
সে সময় ভাঙ্গন স্থান পরির্দশন করেন রাজনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান খান, রাজনগর থানার অফিসার ইনর্চাজ আবুল হাসিম সহ এলাকার অন্যানরা। এছাড়াও পানি বৃদ্ধির কারণে নতুন করে ভাঙ্গনের আশঙ্কায় রয়েছে কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর, কোনাগাঁও, দস্তিদারেরচক, ইসলামপুর, জালালপুর, তেঘরি, করাইয়া, মৌলভীরচক, আদমপুর, কামারচাক, খাসপ্রেমনগর, বিশালী, মিঠিপুর সহ প্রায় ২০টি গ্রাম। এছাড়াও উপজেলার টেংরা ও মনসুরনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্থানে ভাঙ্গন আশঙ্কা রয়েছে।
সরজমিনে কালাইকোনা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় আব্দুল্লাহ মিয়া ও হাসিনা বেগম আতঙ্কিত অবস্থায় তাদের ঘর ভেঙ্গে অনত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। তারা জানান, ঘর তৈরীর সময় অনেক দূরে নদী ছিল। বর্তমানে ঘরের আঙ্গিনা নদীগর্ভে চলে গেছে। আজ বা কাল ঘরটি নদীতে চলে যাবে তাই ঘর ভেঙ্গে সরিয়ে নিচ্ছি। কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তারা কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, গরীবের তো গাছতলা ছাড়া যাবার আর জায়গা নাই। কয়েক দফা আমাদের নদী ভাঙ্গনের কবলে পরতে হয়।
এদিকে উপজেলার শ্যামেরকোনা ও নওয়াগাাঁও এলাকায় ধলাই নদীর এক কিলোমিঠার প্রতিরক্ষা বাঁধ মেরামত না করায় কামারচাক ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি প্রবেশ করছে। প্লাবিত হচ্ছে মানুষের বাড়ি ঘর ফসলি জমি। দুর্গত এলাকার লোকজন জানান, অতিদ্রুত শ্যামেরকোনা ও নওয়াগাঁও এলাকায় ধলাই ও মনুনদীর ভাঙ্গন এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় টেকসই মেরামত করা প্রয়োজন। অন্যতায় গতবারের বন্যার রেশ এবার আরো ভয়ঙ্কর রুপ নেবে।
কামারচাক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজমুল হক সেলিম জানান, শুক্রবার দিবাগত রাতে ইউনিয়নের কালাইকোনা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিলে পূর্বের পাউবোর জরুরী বরাদ্ধ থেকে এলাকার লোকজনকে নিয়ে বাঁশ ও মাঠির বস্তা দিয়ে আপাতত ভাঙ্গন প্রতিরোধ করেছি। কিন্তু যেকোন সময় মনু প্রতিরক্ষাবাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলোতে ভাঙ্গন দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে পাউবো সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফেরদৌসী আক্তার জানান, মনুনদীর পানি বৃদ্ধির খবর জেনেছি। কামারচাকের কালাইকোনার ভাঙ্গন স্থানে আমি যাচ্ছি। এখনও তা আশঙ্কার পর্যায়ে যায়নি। তবে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে।