ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি : ভাইকে বাঁচাতে হাত ছেড়ে দিলেন মারুফ
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ মে ২০১৯, ৩:৪৯ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
‘ভাই, আমি অনেক পানি খেয়ে ফেলেছি, আমি আর পারবো না। তুমি সাতরে বাঁচার চেষ্টা করো’- ভূমধ্যসাগরে নৌকা ডুবিতে সাতরে বাঁচার চেষ্টাকালিন সময়ে এ কথাগুলো বলতে বলতে বড় ভাই মাছুমের হাত ছেড়ে দেন মারুফ। এ দুই সহোদর হচ্ছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার শরীফগঞ্জ ইউনিয়নের কদুপুর গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে আহমেদ মাছুম ও আহমেদ মারুফ।
ইউরোপে যাওয়ার রঙিন স্বপ্ন বুনে প্রায় ৩ মাস পূর্বে আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে লিবিয়ায় যান তারা। কিন্তু তাদের সেই যাত্রা পরিবারের জন্য চিরকালিন কান্না বয়ে আনলো।
জানা যায়, ইউরোপ যাবার লক্ষ্যে প্রায় তিনমাস আগে মারুফ আহমদ ও তার বড় ভাই মাছুম আহমদ অবৈধভাবে সমুদ্র পথে ইতালি যাওয়ার জন্য আরব আমিরাত (দুবাই) থেকে লিবিয়ায় যান। গত বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যায় লিবিয়ার যুয়ারা এলাকা থেকে নৌকা করে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশের লক্ষ্যে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিয়ে ওই নৌকা যাত্রা করে। শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সকালে অভিবাসন প্রত্যাশীদের দলটি তিউনিসিয়া উপকূলের কাছাকাছি আসলে সমুদ্রের বড় ঢেউয়ের ধাক্কায় তাদেরকে বহনকারি নৌকাটি উল্টে যায়। এ ঘটনায় সিলেটের ১৫জনের প্রাণহানি ঘটে।
ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া সমুদ্র উপকূলে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ মারুফের চাচা আবু তাহের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের একটি পোস্টের মাধ্যমে জানান- মাছুমের সাথে যোগাযোগ হলে সে তাদেরকে জানিয়েছে মারুফ সাগরে নিখোঁজ হয়েছে। সে (মাছুম) তিউনেশিয়ার একটি উদ্ধারকারী নৌকার সহযোগিতায় বেঁচে ফিরে আসে।
মাছুম তার পরিবারকে জানান- ভূমধ্যসাগরের তিউনিসিয়া সমুদ্র উপকূলে নৌকাডুবির পর অনেক মানুষের সাথে মাছুম ও মারুফ দীর্ঘ ৮/১০ ঘন্টা সমুদ্রে সাতার কেটে তীরে ভিড়তে চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে মারুফ ‘ভাই, আমি অনেক পানি খেয়ে ফেলেছি, আমি আর পারবো না। তুমি সাতরে বাঁচার চেষ্টা করো’- এ কথা গুলো বলতে বলতে সহোদর বড় ভাই মাছুমের হাত ছেড়ে দেন। আজীবনের জন্য বিচ্ছেদ ঘটে এই দুই সহোদরের।