কমলগঞ্জে অপহরণ মামলার ৫ দিন পর প্রেমিক যুগল আটক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০১৯, ৯:১৮ অপরাহ্ণ
স্বপন দেব, মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের সদর ইউনিয়নের বালিগাঁও গ্রামের নাবালিকা অপহরণ মামলায় ৫ দিনের মাথায় প্রেমিক যুগলকে আটক করেছে কমলগঞ্জ থানা পুলিশ। বালিগাঁও গ্রামের নতু দে এর ১৭ বছরের নাবালিকা মেয়ে (ফাল্গনী দে) এর বিয়ে সম্প্রতি বড়লেখা উপজেলার ইনাইনগর গ্রামের ব্যবসায়ী রিংকু দে’র সাথে ঠিক হয়েছিল। গত ৬ মে সোমবার রাতে যখন বিয়ের সব আয়োজন চলছিল। ওইদিন সন্ধ্যায় কমলগঞ্জের ভানুগাছ বাজারের অনন্যা বিউটি পার্লারে আসার পর কথিত প্রেমিক আলাউদ্দীন (২০) নাবালিকা ওই হিন্দু মেয়েকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। এ দিকে সন্ধ্যায় বড়লেখা থেকে বরযাত্রী নিয়ে বর যখন কমলগঞ্জের বালিগাঁও গ্রামে কনের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে ঘটনা শুনে জুড়ি উপজেলা থেকে ফিরে গিয়ে ওইদিন রাতেই অন্যত্র বিয়ে করে ফিরে যায় বর পক্ষ।
এদিকে গত ৯ মে বৃহস্পতিবার কনের বাবা নতু দে (৪৬) মেয়ে (ফাল্গুনী)-কে অপহরণ করা হয়েছে বলে ২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা আরও ৩/৪ জনকে বিবাদী করে কমলগঞ্জ থানায় একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন। শুক্রবার (১০ মে) রাতেই কমলগঞ্জের সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ইউনিয়ন থেকে আত্মগোপনে থাকা প্রেমিক যুগলকে কমলগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক চম্পক দামের নেতৃত্বে একদল পুলিশ আটক করে কমলগঞ্জ থানায় নিয়ে আসে।
আলাপকালে মামলার বাদী নতু দে বলেন-আমার মেয়ে অপ্রাপ্ত হওয়া সত্বেও আলাউদ্দীনের হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি ভাল পাত্র পেয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে উদ্যোগ নেই। আমি ভাবতে পারেননি এভাবে বিউটি পার্লার থেকে আলাউদ্দীন আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। আমি এ ঘটনায় আলাউদ্দিন, তার ভাই নিজাম উদ্দিনসহ জড়িতদের বিরুদ্ধে কমলগঞ্জ থানায় একটি অপহরন মামলা করেছি।
কমলগঞ্জ উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিরঞ্জন দেব, পুজা উদ্যাপন পরিষদ কমলগঞ্জ ইউনিয়ন শাখার সহ-সভাপতি তপন দে, সাধারণ সম্পাদক প্রত্যুষ সিংহ, উত্তর বালিগাঁও যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ সিংহ, সম্পাদক নিধু সিংহ, তরুন সনাতনী সংঘ (টিএসএস) এর সভাপতি রাজু দত্ত, হিন্দু মহাজোট সভাপতি অঞ্জন প্রসাদ রায় চৌধুরী, সম্পাদক অর্জুন শর্মা এ ঘটনার তীব্র নিন্দাসহ ঘটনার সাথে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান। নতুবা জোরালো আন্দোলনে যাবেন বলে জানান।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কমলগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক চম্পক দাম বলেন, মেয়েটি অপ্রাপ্ত বয়স্ক। মেয়েটির বাবা বাদী হয়ে গত ৯ মে তারিখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০০০ (সংশোধনী ২০০৩) এর ৭/৩০ ধারায় মামলা নং-০৩ দায়ের করেন। মেয়েটিকে বোঝানো হচ্ছে, সে রাজি হলে তার পরিবারের জিম্মায় তাকে দেওয়া হবে। তবে মেয়েটি নিজ ইচ্ছেতে পালিয়েছে বলে সে মা বাবার কাছে যেতে চাচ্ছে না। এখন মেয়েকে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আদালতের মাধ্যমে তাকে নিরাপত্তা হেফাজতে দেওয়া হবে। আর ছেলেকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সুধীন চন্দ্র দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মেয়ে হিন্দু আর ছেলে মুসলিম বলে বিষয়টি খুবই সংবেদনশীল। এ নিয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে। তাই পুলিশ সতর্কতা ও গুরুত্বের সাথে বিষয়টি দেখছে।