সিলেটে চিকিৎসক লাঞ্ছিত : বাইরে বের হ একবার, রেইপ করে ফেলবো
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ মে ২০১৯, ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ :
সিলেট উইমেন্স মেডিকেল হাসপাতালে ছাত্রলীগ কর্মীদের হাতে চিকিৎসক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছাত্রলীগ কর্মী সারোয়ারসহ ১৫-১৬ জন চিকিৎসা প্রদানকালীন সময়ে ডাক্তারদের সঙ্গে রূঢ় আচরণ করেন। এ সময় এক ইন্টার্নি মহিলা ডাক্তারকে জোরপূর্ব রেপ করারও হুমকি দেন। তবে সারোয়ার জানিয়েছেন, জরুরি রোগী ফেলে রেখে ডাক্তাররা
খোশগল্পে ব্যস্ত হয়ে চিকিৎসার অবহেলার ঘটানোর কারণে আমরা কিছুটা ক্ষোভ দেখিয়েছি। যতটুকু বলা হচ্ছে ততটুকু নয় বলে জানান তিনি। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ছাত্রলীগের টিলাগড় গ্রুপের সারোয়ার চৌধুরী ও তার কর্মীরা পেটের ব্যথায় কাতর এক রোগীকে নিয়ে সিলেট উইমেন্স হাসপাতালে যান। সেখানে রোগী নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার কল করেন। কিন্তু ডাক্তাররা রোগীকে গুরুত্ব না দিয়ে খোশগল্পে মেতে থাকেন।
এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সারোয়ার।
হাসপাতালের ইন্টার্ন ডাক্তাররা জানিয়েছেন, চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে এপেন্ডিসাইটিসের বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় দায়িত্বরত মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক সবাইকে একটু ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়ে রোগীকে সিনিয়র চিকিৎসক দেখবেন বলে জানান। এ সময় সারোয়ার চৌধুরী নিজেকে জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি পরিচয় দিয়ে তিনিসহ সবাই ইন্টার্নি চিকিৎসকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও গালিগালাজ করেন। এতে ভয়ে লজ্জায় কেঁদে ফেলেন ওই ইন্টার্নি চিকিৎসক। ঘটনার এক পর্যায়ে সারোয়ার চৌধুরী চাকু নিয়েও ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধাওয়া করেন। পরে হাসপাতালে দায়িত্বরতদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সেলিম উদ্দিন। এ ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা সারোয়ার চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আমার এক বন্ধুর পেটে ব্যথা উঠেছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। তখন ২০-২৫ জন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক পত্রিকা পড়ছিলেন। কিন্তু রোগী দেখতে আসেননি। তিনি বলেন, ‘?তাদের বলেছিলাম, বন্ধুর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। আমাদের মন চাইছিল না, তাকে চিকিৎসা না দিয়ে চলে আসি। তখন চিকিৎসকরা বললেন, আমরা বের না হলে তারা চিকিৎসা করবেন না। শেখ হাসিনা এলেও আমরা বের না হলে তারা চিকিৎসা করবেন না। তখন আমার রাগ উঠে গেছে।
আমি তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছি।’ উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. ফেরদৌস হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তারা সন্ত্রাসীর মতো আচরণ করেছে। আমরা তো তা করতে পারি না।’ এদিকে এ ঘটনায় রাত ১০টা পর্যন্ত হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে ক্ষোভ জানান ইন্টার্নি ডাক্তাররা। পরে কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে তারা কাজে ফেরেন। ডা. নিশাতের স্ট্যাটাস : ঘটনা সম্পর্কে নিজের ফেসবুক আইডিতে স্ট্যাটাস দিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ডা. নাফিজা আনজুম নিশাত। তিনি লিখেছেন, সেই ছেলে আমার পিছন পিছন এসে কোমর থেকে ছুরি দেখিয়ে বলে, ‘তোর সাহস কত। লাশ ফেলে দিবো। বাইরে বের হ একবার। রেইপ করে ফেলবো। আমার পা ধরে তোকে মাফ চাওয়া লাগবো’।
আরো অকথ্য ভাষায় গালাগালি। তারপর সিএ ভাইয়ার গায়ে হাত তোলার উপক্রম করে। তার গালাগালির ভিডিও আছে। এই হলো একজন ডিউটি ডক্টরের নিরাপত্তার অবস্থা। আমরাও রোজা রাখি। আমাদেরও ক্লান্তি হয়, ক্ষুধা লাগে। কিন্তু প্যাসেন্টের প্রতি এসবের কোনো আঁচ পড়তে দেই না।