দুর্ভোগের আরেক নাম শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর সড়ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ এপ্রিল ২০১৯, ৯:৪৫ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
দুর্ভোগের আরেক নাম যেন শ্রীমঙ্গল-শমসেরনগর সড়কটি। মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল, কমলগঞ্জ ও শমসেরনগর মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে বেহাল অবস্থায় রয়েছে।
এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহন ও হাজার হাজার সাধারণ মানুষ চলাচল করে। দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র হওয়ায় পর্যটকরা শ্রীমঙ্গল এসে বিড়ম্বনায় পড়ছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে রাস্তাটি সংস্কার না করায় যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। শ্রীমঙ্গল কমলগঞ্জ-শমসেরনগরের ২০ কিলোমিটার সড়কের অধিকাংশই খানাখন্দে ভরা।
গত ৫ মার্চ ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কারকাজের উদ্বোধন করা হলেও কাজ হচ্ছে ধীরগতিতে।
গতকাল বুধবার সরেজমিন এ সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় দেখো যায়,সড়কের অনেক স্থানে পিচ উঠে ছোট-বড় অনেক গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গর্তে ভরা এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল এখন অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সিএনজি অটোরিকশার মতো যানবাহনগুলো ঝুঁকির মধ্যে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহন করছে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে। সড়কটি এ বেহাল দশায় পরিণত হওয়ায় দুই উপজেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
এদিকে সংস্কারকাজের ধীরগতিতে চলার কারণে সড়কে জনদুর্ভোগ চরমে। শমসেরনগর থেকে কমলগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত ৭ কিলোমিটার রাস্তার কার্পেটিং উঠিয়ে ফেলার পর কাজ প্রায় থেমে গেছে। ফলে তুলে ফেলা কার্পেটিংয়ের ওপর দিয়ে যান চলাচলে মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। কমলগঞ্জ উপজেলার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে একটি এক্সেভেটর দিয়ে সড়কের দু’পাশ বাঁধানো কাজ করছে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। মেসার্স জামিল ইকবাল নামে এই নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের আর কোনো কাজ চোখে পড়েনি। কোথাও নির্মাণ যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী না থাকায় যথাসময়ে কাজ শেষ করা নিয়ে আশঙ্কা করেছেন স্থানীয়রা। এক্সেভেটর অপারেটর সফিউল ইসলাম জানান, ‘কাজের সাইটে আরও ৪টি এক্সেভেটর নিয়ে আসা হয়েছিল। বর্তমানে অন্য সাইটের কাজের জন্য সেগুলো সিলেটের জাফলং’ এ পাঠানো হয়েছে’।
সাইট ইঞ্জিনিয়ার রাসেল মিয়া ফোনে জানান, ‘বর্ষার কারণে কাজের গতি কমেছে তবে খুব দ্রুত ফুলটাইম কাজ শুরু হবে’।
সরেজমিন পরিদর্শনে সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, আহমদ ফারুক, কামাল মিয়া, ব্যবসায়ী শাহীন আলম জানান, এই সড়কটির পিচ উঠে বড় বড় খানাখন্দে রূপ নিয়েছে। সিএনজি অটোরিকশায় চলাচল করলে শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা লাগে। সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা না হলে জনসাধারণের চলাচল করাই দুরূহ হয়ে পড়বে।
সিএনজিচালক রূপ মিয়া বলেন, ‘দেশি বিদেশি লোকজন যারা শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসছেন তারা শ্রীমঙ্গল সম্পর্কে খারাপ ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন এই রাস্তার কারণে’।
মিনি ট্রাকচালক ফজর মিয়া জানান, ‘রাস্তার এই বেহাল অবস্থার কারণে যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে পড়ে। তাছাড়া সড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে যে কোনো সময়’।
জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথের মৌলভীবাজারের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদুল হক বলেন, ‘৩৮ কোটি টাকায় ২০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারে প্রাথমিকভাবে শমসেরনগর বাজার থেকে ৭ কিলোমিটার কার্পেটিং তুলে নতুন করে কার্পেটিং করা হবে। এভাবে পারবর্তীতে ৭ ও ৬ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারকাজ নির্ধারিত ১৮ মাসের আগেই শেষ করা হবে। কাজের যথাযথ মান বজায় রাখতে কোনো ছাড় দেয়া হবে না’। তিনি আরও জানান, ‘শ্রীমঙ্গল শহরের একাংশ, ভানুগাছ, কমলগঞ্জ উপজেলা ও শমসেরনগর বাজার এলাকার টেকসই কাজের জন্য আরসিসি প্রক্রিয়ায় নির্মাণ করার কথা রয়েছে’।
স্থানীয় যুবলীগ নেতা ও উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি অনলাইন অ্যাক্টিভিটেড ফোরামের সংগঠক মোহাম্মদ ইমাম হোসেন সোহেল জানান, ‘গত ৫ মার্চ শমসেরনগর অংশে এ কাজের উদ্বোধন করেন উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি। মাননীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি মোতাবেক জনদুর্ভোগ লাঘবে সচেষ্ট রয়েছেন। আগামী দেড় বছরের মধ্যে এই এলাকার সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধান হবে’।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সড়কের খানা খন্দক মেরামতের কাজ করানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নামে মাত্র সংস্কারকাজ কারায় সে সময় সড়ক জনপদের বিরুদ্ধে ২২ লাখ টাকা পানিতে ফেলার অভিযোগ করেছিলেন ভুক্তভোগীরা।