পর্যটকদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে ভোলাগঞ্জের সাদা পাথর
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০১৯, ১:৩১ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশের উওর-পূর্বে সমৃদ্ধ আর ঐতিহ্যবাহী এক জনপদ সিলেট। সারি সারি সবুজ চা বাগান, মেঘালয় -জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ পর্যটকদের টেনে আনে বার বার। বিছনাকন্দির নীল আর লালাখালের স্বচ্ছ পানি দর্শনার্থীদের নিয়ে যায় কল্পনার রাজ্যে। সৌন্দর্য়ের অপরুপ এই লীলাভূমি সৌন্দর্য পিপাসুদের যেনো হাতছানি দিয়ে ডাকে।
যতদূর দৃষ্টি যায় দু’দিকে সাদাপাথর, মাঝখানে স্বচ্ছ নীল জল, পাহাড়ে মেঘের আলিঙ্গন এ যেনো প্রকৃতির এক স্বর্গরাজ্য। এমনি নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে আপনি আসতে পারেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টে, স্থানীয়ভাবে যা ‘সাদা পাথর’ নামে পরিচিত। এই সময়ে পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টের সাদাপাথর।
যারা সিলেট বিভাগের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান দেখতে দেখতে ক্লান্ত— হয়ে পরেছেন অথবা অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোকে একঘেয়ে লাগছে তারা আসতে পারেন অপার সম্ভবনাময় ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টের সাদাপাথর। সিলেট শহর থেকে ভোলাগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার ।
বর্তমানে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা আগ থেকে অনেক ভালো।
সিএনজি,বাস অথবা প্রাইভেট কারযোগে যাতায়াত করা যায় সহজে। এমনকি বর্ষাকালে নদীপথে ছাতক হয়ে নৌকাযোগেও যাতায়াত করা যায় ভোলাগঞ্জে। স্থানীয়ভাবে থাকা কিংবা খাওয়া দাওয়ার জন্য ভালো হোটেল-মোটেল নেই। তাই সারাদিন ঘুরাঘুরি শেষে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই আপনাকে সিলেট শহরে ফিরতে হয়।
ভোলাগঞ্জের নীল আকাশ, সাদা মেঘ আর মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়া পর্বত এভাবেই একসাথে মিশে যেতে দেখা যায়। দেখলেই মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়, অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। এখানকার গরমের সাথে বাতাসের গতি এবং আদ্রতাও বেশ উপভোগ করার মতো। মেঘালয়ের পর্বত ঘেঁষা ভৌ—গোলিক পরিবেশ অনেকটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মুক্ত। ঐতিহ্যবাহী ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারীর জন্য এই এলাকা সারা দেশেই কম-বেশী পরিচিত।
পাহাড়ী ঝরনাধারা থেকে সৃষ্ট ধলাই নদী ওপার ভারত থেকে ভোলাগঞ্জের মধ্য দিয়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশে। প্রতি বর্ষায় ধলাই নদীর গ্রোতে ভারত থেকে নেমে আসে পাথরের ভান্ডার। ভোলাগঞ্জ সীমান্তে— হাঁটুপানির ধলাই নদীতে হাঁটতে হাঁটতে আপনার চোখে পড়বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য পাথর। মনে হবে যেন ছবির মত সুন্দর। মুখ থেকে বেরিয়ে আসবে একটিই শব্দ ‘অসাধারণ’। দুরের পাহাড়গুলোর উপরে মেঘের ছড়াছড়ি, সাথে এক’দুটো ঝর্না। জাফলং এর মতোই ভোলাগঞ্জেও চলে পাথর উত্তোলনের কাজ। নদীর টলমলে হাটু পানির তলায় দেখা যায় বালুর গালিচা।
চিকমিক বালু আর ছোট বড় পাথর মিলে এখানে যেন তৈরি হয়েছে পাথরের রাজ্য। ভারতের শিলংয়ে এক সময় লোকজন এ রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করতো। কালের পরিক্রমায় এখানে স্থাপিত হয়েছিল ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে নামক রজ্জুপথ। তবে রজ্জুপথ দিয়ে বর্তমানে পাথর পরিবহন বন্ধ রয়েছে ।
রজ্জুপথ, পাথর কোয়ারি আর পাহাড়ী মনোলোভা দৃশ্য অবলোকনের জন্য এখানে প্রতিদিনই আগমন ঘটে পর্যটকদের। পৃথিবীর সর্বাধিক বৃষ্টিবহুল এলাকা চেরাপুঞ্জির অবস্থান ধলাই নদীর উজানে ভারতের মেঘালয়ে। খাসিয়া জৈন্তি—য়া পাহাড়ঘেরা এ রাজ্যের দৃশ্য বড়ই মনোরম। ভোলাগঞ্জ রোপওয়ে এলাকায় অবস্থান করে পাহাড় টিলার মনোরম দৃশ্যাবলি অবলোকন করা যায়।
ভোলাগঞ্জ কোয়ারিতে শুষ্ক মওসুমে প্রধানত সনাতন/ ম্যানুয়্যাল পদ্ধিতে গর্ত খুঁড়ে পাথর উত্তোলন করা হয়। এ পদ্ধতিতে শ্রমিকরা প্রথমে কোয়ারীর ওপরের বালি অপসারণ করে। পর্যায়ক্রমে গর্ত খুঁড়ে নিচের দিকে যেতে থাকে। ১০-১১ ফুট নিচু গর্ত খোঁড়ার পর কোয়ারিতে পানি উঠে যায়। এই পানি শ্যালো মেশিন দিয়ে অপসারণ করে পাথর উত্তোলন করা হয়। এর বাইরে বারকি নৌ—কা দিয়ে নদীর তলদেশ থেকেও পাথর উত্তোলন করা হয়। এই কোয়ারিতে প্রতিদিন সকাল- সন্ধ্যা অর্ধ লক্ষাধিক শ্রমিক পাথর উত্তোলনের কাজ করে থাকেন। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত এই সাদা পাথর।
মৌলভীবাজার থেকে বেড়াতে এসে শহিদুল ইসলাম নামের এক পর্যটক বলেন, সত্যি কথা বলতে ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর ও পরিবেশ খুবি ভাল, বেশ উপভোগ করছি।
কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি আবিদুর রহমান জানান, কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবসহ সর্বস্তরের মানুষ জিরো লাইনের সাদা পাথর পর্যটন হওয়ার জন্য দীর্ঘিদিন ধরে দাবী জানিয়ে আসছে।
দ্রুত পর্যটন এলাকা হওয়ার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল ও সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিজেন ব্যানার্জী জানান, এই সাদা পাথর পর্যটকদের কাছে পছন্দের একটি জায়গা, সেজন্যে প্রশাসন থেকে পাবলিক টয়লেট,রান্না করার শেটের নির্মাণ কাজ চলছে,পর্যায়ক্রমে আরো কাজ বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান তিনি।