ধানে মড়ক : জগন্নাথপুরে কৃষকের মাথায় হাত
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০১৯, ৩:৩৩ অপরাহ্ণ
জগন্নাথপুর সংবাদদাতা:
সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষকরা ব্রি-২৮ ধান চাষ করে এবার লোকসানে পড়েছেন। উচ্চ ফলনশীল ও আগাম জাতের এ ধানে মড়ক দেখা দেয়ায় ফলন মারাত্মকভাবে ব্যহত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ অবশ্য ব্রি-২৮ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সঠিক কোন পরিসংখ্যান দিতে না পারলেও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে।
উপজেলার নলুয়া, মইয়া ও পিংলার হাওরে ঘুরে কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অকাল বন্যার কারনে জগন্নাথপুর উপজেলার কৃষকরা আগাম ও উচ্চফলনশীল হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে ব্রি-২৮ ধান চাষ করে আগাম ভাল ফসল উত্তোলন করেছেন। গত বছর হাওরের কিছু এলাকায় ব্রি-২৮ ধান ব্লাস্টরোগে আক্রান্ত হয়। এবার ব্রি-২৮ ধানে মড়ক দেখা দেয়ায় কাঙ্খিত ফল প্রায় না পাওয়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার হাওর ঘুরে দেখা গেছে, সোনালী ফসলে ভরপুর হাওর। কিছু কিছু জমির ধান কৃষি শ্রমিকরা কাটছেন, আবার কেউ নিজের জমির ফসল কবে কাটতে পারবেন তা দেখছেন। মইয়ার হাওরে কথা হয় উপজেলার যাত্রাপাশা গ্রামের কৃষক বকুল গোপ এর সঙ্গে। তিনি নিজের জমিতে ব্রি-২৮ ধানের ফলন দেখে হতাশা ব্যক্ত করে জানান, এবার পাঁচ কেদার জমি আবাদ করেছি তারমধ্যে দুই কেদার ছিল ব্রি-২৮ ধান। এই দুই কেদার জমিতে ফলন নেই বললেই চলে সব ধানে চালের বদলে ছোঁচা দেখা যাচ্ছে। ফলে শ্রমিকরা ধান কাটতে রাজি হচ্ছেন না। তিনি জানান, দুই কেদার জমিতে খরচ হয়েছে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যাবে না পাঁচ মণ। একই গ্রামের কৃষক রজত গোপ জানান, ব্রি-২৮ জাতের চার কেদার জমিতে তিনি কাঙ্খিত ফলন থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ধানে চাল না হওয়ায় বোরো আবাদের ক্ষতি পোষানো সম্ভব হবে না বলে জানান তিনি। নলুয়ার হাওরের কৃষক সফিক মিয়া জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি সাড়ে চার কেদার জমির ব্রি-২৮ মাড়াই দিয়ে ধান পেয়েছেন ১১ মণ। গত বছর একই জমি থেকে ধান পেয়েছিলেন ৬০ মণ। তার ধারনা ব্রি-২৮ ধানের বীজে কোন ধরনের ত্রুটি থাকায় এবার উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ভূরাখালি গ্রামের কৃষক কয়েছ মিয়া বলেন, ব্রি-২৮ ধান উচ্চফলনশীল ও আগাম জাতের হওয়ায় জগন্নাথপুরের হাওর অঞ্চলে দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এ ধান। এবারে এ ধানে ফলন বিপর্যয় হওয়ায় কৃষকদের মাথায় হাত। কয়েছসহ নলুয়ার হাওরের আরো কয়েকজন কৃষক জানান, ব্রি-২৮ ধান চৈত্রমাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকে এবং কেদার প্রতি ১৫ থেকে ২০ মণ ধান পাওয়া যায়। তাই অগ্রহায়ণ মাসের শেষদিকে কিংবা পৌষমাসে এ ধান রোপন করা হয়। ‘হাওর বাঁচাও সুনামগঞ্জ বাঁচাও’ আন্দোলন সংগঠনের নেতা লুৎফুর রহমান বলেন, কৃষকরা অনেক কষ্ট ও অর্থ ব্যয় করে ধান রোপণ করে। প্রাকৃতিক নানা বিপর্যয়ের সাথে সংগ্রাম করে ফসল ঘরে তুলেন কৃষকরা। কিন্তু কাঙ্খিত ফলন ও ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে তারা হতাশ হয়ে পড়ছেন।
এদিকে, জগন্নাথপুর উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র জানায়, এবার জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। তার মধ্যে ৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ আবাদ করা হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শওকত ওসমান মজুমদার বলেন, ঠান্ডাজনিত কারণ ও সময়মতো বৃষ্টি না হওয়ায় ব্রি-২৮ ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। গত বছর ব্রি-২৮ ধানে ব্লাস্টরোগ দেখা দেয়ায় এবার ব্রি-২৮ তুলনামূলক অনেক কম আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগের তৎপরতায় ব্রি-২৮ এ অনেক কৃষক ভাল ফলন পেয়েছেন। আবার অনেকে যারা অগ্রহায়ণ মাসে ব্রি-২৮ রোপণ করেছেন তারা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। জগন্নাথপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহ্ফুজুল আলম মাসুম বলেন, ব্রি-২৮ ধান কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এব্যাপারে কৃষি বিভাগকে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে বলা হয়েছে।