মোকাব্বির আসলেন, অতঃপর …
প্রকাশিত হয়েছে : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ৮:২৬ অপরাহ্ণ
নিজস্ব প্রতিবেদক :
যার নাম আগে তেমন কেউ শুনেননি। কিন্তু বর্তমানে তাঁর নামই বেশ আলোচিত। তিনি হলেন মোকাব্বির খান। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ঐক্যফ্রন্ট সমর্থিত প্রার্থী হয়ে সিলেট-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নির্বাচনে ঐক্যফ্রন্ট থেকে নির্বাচিতরা শপথ নিবেন না বলা হলেও নির্দেশ অমান্য করে শপথ নিলেন মোকাব্বির। মোকাব্বিরের শপথে ক্ষুব্ধ ছিলেন সিলেট বিএনপি নেতারা। তাঁর এই শপথ নেওয়াকে বিএনপির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে মন্তব্য করেছেন অনেকেই। ক্ষুব্ধ সিলেট বিএনপি তাঁরই বহিঃপ্রকাশ ঘটালো আজ। সিলেটে একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত একটি সভায় মোকাব্বির উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথেই বিএনপির সভা বয়কট ও মহিলা দলের নেত্রীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হন নবনির্বাচিত এ সাংসদ।
সভাস্থলে আসা মাত্রই তাঁকে সহ্য করতে পারেননি বিএনপির নেতাকর্মীরা। মোকাব্বির খান আসতেই শুরু হয় হট্টগোল। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে সভা বয়কট করেন বিএনপি নেতারা। এসময় মোকাব্বির খানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন মহিলা দলের নেত্রীরা। কেউ কেউ মোকাব্বিরকে উদ্দেশ্য করে কটু মন্তব্যও করেন। এতে অনুষ্ঠানস্থলে উত্তেজনা দেখা দেয়।
সিলেটে একটি বেসরকারি সংস্থা আয়োজিত একটি সভায় আমন্ত্রিত ছিলেন আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ‘শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সরকারি সেবাসমূহের মানোন্নয়ন শীর্ষক অভিজ্ঞতা বিনিময়’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইডিয়া।
সম্প্রতি বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের আপত্তি উপেক্ষা করেই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন সিলেট-২ আসনে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সাংসদ মোকাব্বির খান। মোকাব্বির শপথে ক্ষুব্দ ছিলেন সিলেট বিএনপি নেতারা। শপথের পর বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো সিলেটে পেয়েই সেই ক্ষোভ ঝাড়লেন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের আপত্তি ও ক্ষোভ আঁচ করতে পেরে আয়োজকরা মোকাব্বির খানকে বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগের অনুরোধ জানান। মোকাব্বির খানও বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করে পাঁচ মিনিট পর অনুষ্ঠান স্থল ত্যাগ করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। ফের অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হন বিএনপি নেতারা।
বিএনপি নেতাদের মধ্যে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেন মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ।
এ ব্যাপারে আয়োজক সংগঠন আইডিয়া’র নির্বাহী পরিচালক নাজমুল হক বলেন, আমরা এই আয়োজনে সিলেটর সব সাংসদকেই আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে কেবল মোকাব্বির খান উপস্থিত হন। তিনি আসায় বিএনপি নেতারা ক্ষুব্দ হয়ে অনুষ্ঠানস্থল থেকে চলে যান। পরে আমাদের অনুরোধে পাঁচ মিনিট পর মোকাব্বির খান চলে গেলে আবার বিএনপি নেতারা ফিরে আসেন।
তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা উত্তেজনাকর কিছু ঘটেনি বলে জানান নাজমুল হক।
অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ জানান, মোকাব্বির খান অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া বিএনপি নেতারা আপত্তি জানিয়ে বাইরে চলে যান। পরে বক্তব্য দিয়েই মোকাব্বির খান চলে যান।
নাসিম হোসাইন বলেন, আমরা জানতাম না ওই অনুষ্ঠানে মোকাব্বির খান আসবেন। তাই মোকাব্বির আসতেই আমরা অনুষ্ঠানস্থল থেকে বেরিয়ে আসি। এসময় উপস্থিত মহিলা দলের নেত্রীরা কিছু প্রতিক্রিয়া দেখান। পরে মোকাব্বির খান চলে গেলে আমরা আবার অনুষ্ঠানে যোগ দেই।
প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-২ আসনে ২৩ দলীয় ঐক্যজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন নিখোঁজ এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা ও তার পুত্র ইলিয়াস আবরার অর্নব।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ইলিয়াসপুত্র অর্নব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে ধানের শীষের চুড়ান্ত প্রার্থী হয়ে নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা শুরু করেন তাহসিনা রুশদীর লুনা এবং প্রতীক বরাদ্ধের দিন লুনাকে সমর্থন জানিয়ে যুক্তরাজ্য চলে যান গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান। পরে লুনার মনোনয়নপত্র স্থগিত করে উচ্চ আদালতে দেওয়া আদেশে নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি ইলিয়াসপত্নী।
নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক আগে মোকাব্বির খানকে ২৩ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে আনুষ্ঠানিক সমর্থন জানায় বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপি ও তার অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো।
অসুস্থ তাহসিনা রুশদীর লুনার নির্দেশে নিখোঁজ এম ইলিয়াছ আলীর ছোট ভাই এম আছকির আলী ও ইলিয়াস পুত্র অর্নব অংশ নেন মোকাব্বির খানের প্রচারণায়। তারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে আবেগময়ী বক্তব্য দেওয়ায় ভোটার সাধারণের মাঝে বিপুল সাড়া জাগে। পাশাপাশি ইলিয়াস আলীর প্রতি এই আসনের ভোটারা বেশ আবেগ প্রবণ হওয়ায় ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের স্থলে ‘উদীয়মান সুর্য্য’ প্রতীক চলে আসে মূল আলোচনায়।
ইলিয়াসপত্নী লুনার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারায় নীরব ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ‘উদীয়মান সূর্য্য’ প্রতীকে মোকাব্বির খান বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন এমনটাই মন্তব্য করেছেন নির্বাচনী পর্যবেক্ষকেরা।
বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলায় বিএনপি-জামায়াত জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সমর্থন ও স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে নির্বাচনী মাঠে কাজ করেছেন। ফলে গণফোরামের মোকাব্বির খান বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন।