সৈয়দ ফুয়াদ হোসেন,রাজনগর:
মৌলভীবাজারের রাজনগরে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে। পানি কমায় বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষত । রাস্তার পাশে বেশ কয়েকটি বড় গাছ উপড়ে গেছে। কুলাউড়া মৌলভীবাজার সড়কের কদমহাটা থেকে মহলাল পর্যন্ত দুটি স্থানের প্রায় ২শ ফুটের বেশি রাস্তা ভেঙ্গে গেছে। ঈদের দিন থেকে মৌলভীবাজারের সাথে এই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর পানি সড়ে যাওয়ায় সোমবার বিকালে সেনাবাহিনীর ইনিঞ্জনিয়ারিং টীমের সহায়তায় মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। ফলে হাল্কা যান চলাচল শুরু করেছে।
ঈদের দুইদিন আগে (বুধবার) থেকে মনু নদীর পানি বাড়তে থাকলেও কোথাও বাঁধ ভাঙার ভয় ছিল না। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মনু নদীর পানি বেড়ে ঈদের আগের দিন বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধের বেশ কয়েকটি স্থান ভেঙ্গে যায়। এতে প্লাবিত হয়ে উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ৪২টি গ্রাম ও মনুসরনগর ইউনিয়নের ৩৩টি পুরোপুরি এবং টেংরা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামসহ ৮৫টি গ্রাম তলিয়ে যায়। এছাড়াও রাজনগর সদর ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম প্লাবিত হলেও বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। গত ৩০ বছরে এমন বন্যা কেউ দেখেননি বলে জানিয়েছেন বয়োজেষ্ঠ্যরা। বন্যার্তদের আশ্রয়ের জন্য ১৫টিরও বেশিও ফ্লাড সেন্টার খুলা হয়েছে। এদিকে রাজনগরে নগদ ২ লাখ বিশ হাজার টাকা ও ১৬৫ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে মনসুরনগর ইউনিয়নে নগদ ৯০ হাজার টাকা ও ৭০টন চাল এবং কামারচাক ইউনিয়নে নগদ ১ লাখ টাকা ও ৮৫ টন চাল ও টেংরা ইউনিয়নে ২০ হাজার টাকা ও ১০ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
কদমহাটা, মালিকোনা, আশ্রাকাপনসহ বেশ কয়েকটি স্থানে মনু নদীর বন্যা প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় শুক্রবার রাত থেকে কদমহাটা, শ্বাসমহল, প্রেমনগর আশ্রাকাপন, মহলাল, দক্ষিন মহলাল, মালিকোনা, চাটুরা, বনমালী পঞ্চেশ্বর, পঞ্চেশ্বর, সরখরনগর, খাসপ্রেমনগর, বড়কাপনসহ ওই ইউনিয়নের সবকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
কামারচাক ইউনিয়নে মশাজান, কামারচাক, ভোলানগর, দস্তিদারের চক, ইসলামপুর, জালালপুর, তেঘরি, করাইয়া, মৌলভীরচক, আদমপুর, মেলাগড়, শান্তকুল, পঞ্চানন্দপুর, একাসন্তোষ, হাটিকরাইয়া, তেঘরি, চাটিকোনাগাঁও, মুর্তিকোনাসহ ওই ইউনিয়নের পুরো ৪২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। টেংরা ইউনিয়নের আদিনাবাদ, আকুয়া, ভাঙ্গারহাট, সৈয়দনগর, কোনাগাঁওসহ প্রায় ১০টি গ্রাম বানের পানিতে তলিয়ে গেছে।
এদিকে ছোট ছোট ক্যানেলগুলো দিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় রাজনগর সদর ইউনিয়নের দক্ষিন খারপাড়া এলাকার মুজিবনগর গুচ্চগ্রাম তলিয়ে গেছে। কদমহাটা উচ্চ বিদ্যালয়, তারাপাশা উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, পোর্টিয়াস মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, মেহেরুন্নেছা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মহলাল উচ্চ বিদ্যালয়, কামারচাক বন্যা আশ্রয় কেন্দ্রসহ ১৫ টিরও বেশি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
আশ্রাকাপন এলাকার কাপ্তান মিয়া (৬০) মৌলভীবাজার কুলাউড়া সড়কে ধান শুকাচ্ছিলেন। এসময় তার ছবি তুলতে গেলে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘৩০-৩২ মণ ধান ছিল। সব পানিতে ভিজে গেছে। নিজেরা কোনোমতে বেঁচে গেলেও নৌকার অভাবে ধান-চাল ঘর থেকে বের করতে পারিনি।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার বলেন, পানি কমার কারনে মানুষজন বিভিন্ন ফ্লাড সেন্টার থেকে বাড়ি ফিরছে। আমরা যে ত্রাণ পেয়েছি তা সুষ্টু ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বণ্টনই এখন মূল কাজ। এজন্য আমার টেগ অফিসারদের বলে দেয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বক্ষনিক সমন্বয় করে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।