রাসেল আহমেদ: জামেয়া ইসলামিয়া কওমিয়া দারুসসুন্নাহ গলমুকাপন মাদ্রাসা বৃহত্তর সিলেটের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান । ১৯৫০ সালে দ্বীনি শিক্ষার আলো বিস্তারের উদ্দেশ্যে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দের অনুসরণে মাদ্রাসাটি প্রতিষ্টা করা হয়। পশ্চিম পৈলনপুর ইউনিয়নের গলমুকাপন নিবাসী আল্লামা ফখরুদ্দীন (রাহ:) এবং একই উপজেলার গাভুরটিকি নিবাসী কর্মবীর ডা: মর্তুজা (রাহ:) মিলে প্রায় এক একর ভূমির উপর প্রতিষ্টা করেন উক্ত দ্বীনি এ প্রতিষ্টানটি। ।
গলমুকাপন দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসা এলাকায় দ্বীনি শিক্ষা বিস্তারে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। বিগত অর্ধ শতাব্দীর অধিক সময়কাল ধরে দ্বীনি ইলম প্রচার-প্রসার, মুহাদ্দিছ, আলেম-ওলামা তৈরি ও সৎ, দক্ষ নাগরিক তৈরিতে এ প্রতিষ্ঠানের জুড়ি মেলা ভার। বর্তমানে সারা বিশ্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থেকে এ প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন ছাত্ররা দেশ ও জাতির খেদমত করে যাচ্ছেন। ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক শিক্ষা সম্প্রসারণে প্রতিষ্ঠানটির ভূমিকা প্রশংসনীয়।
আল্লামা ফখরুদ্দীন (রাহ:) ছিলেন মাদ্রাসার প্রতিষ্টা পরিচালক (মুহতামিম)। বিগত ২০০৮ সালের ২০ অক্টোবর তাঁর ইন্তেকালের পর একই গ্রামের বিশিষ্ট আলেম মাওলানা আব্দুস শহীদ সাহেব কে উক্ত মাদ্রাসার পরিচালক (মুহতামিম) পদে মনোনিত করা হয়। বর্তমানে ঐ পদে (মুহতামিম) বহাল থেকে মাদ্রাসাটিকে সুষ্টুভাবে পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
জানা যায়, মাদ্রাসাটিতে চারটি বিভাগ রয়েছে। যথা: নূরানী বিভাগ, সাধারণ বিভাগ, হিফয বিভাগ ও কম্পিউটার বিভাগ। নূরানী বিভাগে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েকে ইসলামের প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি বাংলা ও আরবীর প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হয়। সাধারণ বিভাগে কয়েকটি স্তরে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বাংলা, ইংরেজী, আরবী ও উর্দু ভাষায় সাহিত্য, ভূগোল, গণিত, ফিকাহ, উসুলে ফিকাহ, মানতিক, বালাগতসহ হাদিস ও তাফসীরের শিক্ষা প্রদান করা হয়। হিফয বিভাগে ছাত্রদেরকে কালামুল্লাহ মুখস্থ করানো হয় এবং কম্পিউটার বিভাগে ছাত্রদেরকে কম্পিউটার বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
মাদ্রাসাটিতে বর্তমানে পৌনে পাঁচশত শিক্ষার্থী ও ৩২ জন শিক্ষক কর্মরত রয়েছেন এবং আবাসিক ছাত্র প্রায় দুইশত। তাদেরকে মাদ্রাসার বোর্ডিং থেকে ফ্রি খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও এতিম মেধাবী ছাত্রদেরকে পোশাক এবং চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করা হয়। মাদ্রাসাটির মাসিক খরচ প্রায় পৌনে চার লক্ষ্য টাকা।
মাদ্রাসাটির আয়ের উৎস জানতে চাওয়া হলে, মাওলানা আব্দুর রশিদ সুরমা নিউজকে জানান মাদ্রাসার স্থায়ী কোনো আয়ের উৎস নেই। দেশী-বিদেশী ভাই-বোনদের এককালীন দান ও ফসলী চাঁদা জামেয়ার চলার পথের পাথেয়। এছাড়াও তিনি বলেন, আগামী বছর ঈদ-উল-ফিতরের পর মাদ্রাসার পুরাতন একটি ভবন ভেঙে নতুন পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবন তৈরী করার কাজ শুরু হবে। তাই তিনি দেশী-বিদেশী সকল ভাই-বোনদের নিকট সাহায্য কামনা করেন।
বালাগঞ্জ ওসমানীনগর এডুকেশন ট্রাস্টের সাবেক চেয়ারম্যান প্রবাসী আনহার মিয়া সুরমা নিউজকে বলেন, ঐতিহ্যবাহী গলমুকাপন দারুসসুন্নাহ মাদ্রাসা প্রতিষ্টালগ্ন থেকে গোটা অঞ্চলে দ্বীনি শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। যুগযুগ ধরে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত বহু পরিবারের সন্তান-সন্ততি উক্ত মাদ্রাসায় লেখা-পড়া করে মানুষের মাঝে কুরআন-সুন্নাহ তথা ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। মাদ্রাসাটির মানসম্মতশিক্ষা ও উন্নত নৈতিক পরিবেশ থাকার বিষয়টি লক্ষ্য করে কয়েক দশক ধরে সমাজের বিত্তবান শ্রেণীও নিজেদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে শুরু করেছেন।