সরকারী চাকরি এবং মুক্তিযোদ্ধা কোটা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ আগস্ট ২০১৭, ২:১০ অপরাহ্ণ
শাহরিয়ার রশিদ কয়ছর: বর্তমানে দেশে মুক্তিযোদ্ধার ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনী, নারী, জেলা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী (উপজাতি), প্র্রতিবন্ধী, আনসার ও ভিডিপি, পোষ্য, খেলোয়াড় ও এলাকাসহ প্রায় ২৫৭ ধরনের কোটা প্রচলিত রয়েছে।এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, মহিলা ১০, জেলা ১০ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ রয়েছে। কোনো ক্ষেত্রে কোটা পুরোপুরি পূূরণ না হলে ১ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। এ ছাড়া নন-ক্যাডার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরির ক্ষেত্রেও কোটা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
বর্তমানে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা সবচেয়ে বেশি বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। আমাদের দেশের সূর্যসন্তানেরা দেশ স্বাধীন করার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন। অবশ্যই তারা পরিবারের সদস্যদের চাকরির আশায় মুক্তিযুদ্ধ করেননি। যেসব পরিবারের লোকজন সে সময় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পারেননি, তারা কি শাস্তিস্বরূপ কোটা নামের মারণফাঁদে পড়লেন? বাংলাদেশের স্বাধীনতা-পরবর্তী দীর্ঘ সময় শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানেরা কোটা পদ্ধতির সুযোগ পেলেও নবম জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন, শুধু মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা নয়, বরং তাদের নাতি-নাতনীরাও কোটা পদ্ধতির আওতায় পড়বে।
প্রশ্ন হলো, দেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত? সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে যেভাবে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে তাতে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চল্লিশোর্ধ্বদের সবাই মুক্তিযোদ্ধা হয়ে গেলেও কোনো কিছু বলার সুযোগ থাকবে না। মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ার পেছনে মূলত সরকারি চাকরি পাওয়ার লোভ কাজ করেছে। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা তো উপহার মাত্র। স্বাধীনতার পর ৪৬ বছরে এভাবে প্রতি বছর নতুন নতুন মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেও এই সংখ্যা বাড়ানো কোনো ক্রমেই রোধ করা যাচ্ছে না।আর এই সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধির ফলে প্রকৃত মেধাবীরা আজ চাকরি শূন্য। ক্ষমতাসীন দলের প্রবীণেরাই বেশি মুক্তিযুদ্ধের খাতায় নাম লেখাচ্ছেন। বর্তমান সময় থেকে পরবর্তী কয়েক দশক পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা যে আরো বাড়বে না, তা কী করে বলতে পারি।
৪৬ বছর আগে দেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলেও মুক্তিযোদ্ধার জন্ম নেয়া আজো শেষ হয়নি। আবার অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা নানা প্রতিবন্ধকতায় এখনো স্বীকৃতি পাননি; বরং তাদের নামের কোটাগুলো নকল মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে বণ্টন হয়ে গেছে। বর্তমান সময়ে যেসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার জন্ম হয়েছে, তারা রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতির চেয়ে দেশের শিক্ষিত সমাজের বেশি ক্ষতি করছেন। তাদের অনৈতিকতার চরম খেসারত যোগ্য চাকরিপ্রার্থী ও শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে। এসব ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার কারণে তাদের উত্তরসূরিরা চাকরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সুযোগ নিচ্ছেন এবং অন্যদের প্রতারিত করছেন। কাজেই সঠিক মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাবদ্ধ করে যোগ্য প্রজন্মের ওপর অবিচার বন্ধ করা আবশ্যক বলে আমি মনে করি এবং এটা সবার সমসাময়িক দাবিও বটে।