জীবন্ত সাক্ষী সিলেটের ওসমানী জাদুঘর !
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ আগস্ট ২০১৭, ৪:১৫ অপরাহ্ণ
শাহরিয়ার রশিদ কয়ছর:
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক সিলেটের কৃতী সন্তান বঙ্গবীর এমএজি ওসমানীর সহজ সরল জীবনযাত্রার এক জীবন্ত সাক্ষী ওসমানী জাদুঘর। নগরীর ধোপাদিঘীর পার এবং নাইওরপুলের মাঝামাঝি জায়গায় বঙ্গবীর-১ নম্বর বাসাটির আলিশান গেটের সামনে দাঁড়ালেই হাতছানি দেবে ওসমানী জাদুঘর।
মাতৃভূমির জন্য নিখাদ ভালোবাসা, সততা ও কর্মনিষ্ঠার অনুপ্রেরণার উৎস এ জাদুঘর। ইতিহাসের কিংবদন্তি একজন কৃতি ব্যক্তিত্বের জীবনের নানা স্মৃতিকে ধারণ করে গত দু’দশক ধরে নতুন প্রজন্মকে অফুরন্ত প্রেরণার জোগান দিয়ে যাচ্ছে এটি। জাদুঘর প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ভবনটি সংস্কার ও আধুনিক সুযোগ সৃষ্টিতে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
জাদুঘরে ঘুরতে আসা কলেজ পড়ুয়া কামরুল ইসলাম বলেন”আমি ৭১এর যুদ্ধ দেখিনি কিন্তু এই যাদুঘরের মাধ্যমে ইতিহাস সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি, যথাযথ ভাবে উদ্যোগ নিয়ে ভবনটি সংস্কার করা হলে নতুন প্রজন্ম এর থেকে অনেক উপকৃত হবে”।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ধোপাদিঘীরপাড়স্থ বঙ্গবীর ওসমানীর এ পৈতৃক বাড়িটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। পরবর্তীতে যুদ্ধ শেষে তিনি নিজে উদ্যোগ নিয়ে একটি চমৎকার বাংলো ঘর নির্মাণ করেন সেখানে। ১৯৭৬ সালের ১৮ মে এ বাড়ির ২ বিঘা জায়গা দিয়ে তিনি তার বাবা-মায়ের নামে গঠন করেন জুবেদা খাতুন খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ট্রাস্ট। এ ট্রাস্টের মাধ্যমে মেডিক্যাল ছাত্র ছাত্রীদের প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে বৃত্তি দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হয়।
বঙ্গবীর ওসমানীর মৃত্যুর পর ১৯৮৭ সালে তৎকালীন এরশাদ সরকার সিলেটে ওসমানীর নামে একটি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সে অনুযায়ী জুবেদা খাতুন খান বাহাদুর মফিজুর রহমান ট্রাস্টের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ৯৯ বছরের জন্য ধোপাদীঘির পারের বাড়িটি লিজ নেয় সরকার। ১৯৮৭ সালের ৪ মার্চ এ বাড়িতে ওসমানী জাদুঘরের উদ্বোধন করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সেই থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় জাদুঘরের একটি অধস্তন প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালিত হয়ে আসছে এটি।
জাদুঘরে সংরক্ষিত বঙ্গবীরের ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় দেখলে কল্পনাই করা যায় না রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বনামখ্যাত একজন ব্যক্তি এত সাদাসিধে জীবনযাপন করতেন। যুদ্ধের ময়দান থেকে তোলা বেশ কিছু বিরল ছবি টানানো রয়েছে জাদুঘরের দেয়ালে। নতুন প্রজন্মের ধমনিতে দেশ গড়ার এক দুর্দমনীয় চেতনার জন্ম দেয় এ ছবিগুলো।