সিলেট-১ আসন : একাই মাঠে মুক্তাদির
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ আগস্ট ২০১৭, ৪:৪৩ অপরাহ্ণ
ওয়েছ খছরু:
সিলেট-১ আসনে নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি ছাড়া এখন পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আর কোনো প্রার্থীর দেখা মিলেনি। দৃশ্যমান কেবল মুক্তাদিরই। এ কারণে তাকে নিয়ে নির্বাচনী প্রাক-প্রস্তুতি শুরু করেছেন সিলেটের বেশিরভাগ নেতা। আর মুক্তাদিরও সবাইকে সঙ্গে নিয়ে মাঠে-ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন। প্রতি সপ্তাহে তিনি ঢাকা থেকে সিলেটে আসছেন। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নিজের পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত খন্দকার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ঘরে ঘরে যাচ্ছেন। সুখে-দুঃখে পাশে থাকছেন। চলতি বন্যায়ও তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিলেট বিএনপির নেতারা বলছেন- তাদের চোখের সামনে দৃশ্যমান শুধু আবদুল মুক্তাদিরই। আর কোনো প্রার্থী না থাকায় তারা তাকে নিয়েই প্রস্তুতিপর্ব শুরু করেছেন। মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসন। এই আসনে এমপি হয়েছিলেন আলোকিত রাজনীতিবিদরা। যারা শুধু সিলেটই নয় গোটা দেশেই তারা নিজেদের দ্যুতি ছড়িয়েছেন। কর্মগুণে ওই সব নেতাদের নাম এখনো ভাসছে সিলেটের মানুষের মুখে মুখে। স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ আসনে প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ফলে সিলেট-১ আসন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর নজরও সবচেয়ে বেশি। ২০০১ সালে এমপি নির্বাচিত হলেও ২০০৮ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পরাজয় বরণ করেছিলেন। পরে সড়ক দুঘর্টনায় মারা যান সাইফুর রহমান। ফলে বিএনপির জন্য এ আসনটি প্রার্থী শূন্য হয়ে যায়। পরবর্তীতে বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শমসের মুবীন চৌধুরী বিএনপির হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ইলিয়াস জমানায় শমসের মুবীন চৌধুরী মাঠে নামলেও পরবর্তীতে তিনি তার অবস্থান ধরে রাখতে পারেননি। পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে আড়ালে চলে যান। শমসের মুবীন চৌধুরী চলে যাওয়ার পর হতাশ হয়ে পড়েছিলেন সিলেট বিএনপির নেতা-কর্মীরা। স্থানীয়ভাবে কেউ এখনো নেতা-কর্মীদের ‘ছায়া’ দেয়ার মতো অবস্থান তৈরি করতে পারেননি। সিনিয়রদের অনেকেই দলের কোন্দলের ভেতরে ঘুরপাক খেয়ে অতীতে বিতর্কিত হয়েছেন। এদিকে শমসের মুবীন চৌধুরীর সময়কাল থেকে মাঠে নেমেছিলেন খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। কিন্তু তেমনটি সুবিধা করতে পারেননি। খন্দকার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সিলেট সিটি ও সদর এলাকায় মানবসেবার পাশাপাশি সিলেটের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা শুরু করেন। প্রথমে তিনি বিএনপিতে আধিপত্য বিস্তার করতে না পারলেও ছাত্রদলের পুরোপুরি প্রভাব বিস্তার করেন। সিলেট ছাত্রদলের বেশিরভাগ নেতা এখন খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে রয়েছেন। আর আবদুল মুক্তাদির ছাত্রদলে প্রভাব বিস্তার করার কারণে ওই ছাত্র সংগঠনের কোন্দল এখন অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিয়ে চমক দেখান। তিনি প্রচারণায় নামায় বিএনপির স্বচ্ছ ধারার রাজনীতিকরা আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে একাট্টা হন। সিটি নির্বাচনে মুক্তাদিরের স্পষ্ট অবস্থান সিলেটে আরিফের বিজয়কে অনেকটা ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন দলের সিনিয়র নেতারা। শমসের মুবীন চৌধুরীর চলে যাওয়ার পর সিলেট বিএনপিতে এখন মুক্তাদির ছাড়া আর কেউ নেই। এ কারণে তাকে নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। বিষয়টি এখনো দলীয়ভাবে পরিষ্কার না হলেও দৃশ্যমান পরিবেশ তৈরি হতে চলেছে। মহানগর বিএনপি খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের পক্ষে প্রকাশ্যে মাঠে নেমেছে। তাকে নিয়ে মহানগর বিএনপি ইতিমধ্যে দলীয়ভাবে বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছে। সে অনুষ্ঠানগুলো সফলও হয়েছে। জেলা বিএনপির নেতারাও তার পক্ষে একাট্টা হচ্ছেন। সিনিয়র কয়েকজন নেতাদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও মাঝারি পর্যায়ের নেতারা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে নিয়ে প্রস্তুত নিতে শুরু করেছেন। সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন- ‘বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। তিনি বর্তমানে আমাদের নেতা। সিলেটেই বাড়ি তার। আমাদের চোখের সামনে বর্তমানে আর কোনো প্রার্থী নেই। এ কারণে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরকে নিয়েই আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। আমরা তাকে নিয়ে মাঠে ময়দানে কাজ করছি। এবং আগামী নির্বাচনে যাতে বিজয় সুনিশ্চিত হয় সেভাবেই আমরা এগুচ্ছি।’ তিনি বলেন- ‘সিলেট মহানগরে বিএনপি পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় বেশি সুসংগঠিত। সুতরাং আগামীতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জয় ঘরে তোলা অসম্ভব নয়।’ সিলেটের সন্তান খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। বাড়ি নগরীর তোপখানা এলাকায়। তার পিতা খন্দকার আবদুল মালিক সিলেটের মানুষের পরিচিত মুখ। তিনি সিলেট বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে অন্যতম। ছিলেন সংসদ সদস্যও। জিয়া পরিবারের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল খন্দকার মালিকের পরিবারের। সেই পিতার সন্তান খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। খন্দকার আবদুল মুক্তাদির সিলেটে পিতার নামে ফাউন্ডেশন গড়েছেন। দীর্ঘদিন থেকে তিনি পিতার নামে গড়া ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জনকল্যাণে কাজ করছেন। আর এ দিয়ে সিলেটের মানুষের কাছে আলাদা পরিচিতি রয়েছে আবদুল মুক্তাদিরের। সিলেট বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন- আগে থেকেই মুক্তাদির সিলেটে ভোটব্যাংক তৈরি করে রেখেছেন। এখন বিএনপি তার পক্ষে থাকলেই জয় ঘরে তোলা সহজ হবে। সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানিয়েছেন- খন্দকার আবদুল মুক্তাদির সিলেটে একাই কাজ করছেন। সিলেটে পিতারও অবস্থান আছে। পাশাপাশি সিলেটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন তিনি। এই মুহূর্তে তিনি ছাড়া আর কোনো প্রার্থী মাঠে না থাকায় তাকে নিয়েই নির্বাচনী মাঠে রয়েছে বিএনপি।-মানবজমিন