রেস্টুরেন্ট এ চাকরি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালায় সিলেটী কিশোর দিপক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৭ জুলাই ২০১৭, ১২:৫৮ অপরাহ্ণ
শাহরিয়ার রশিদ কয়ছর:
বাসার পাশেই রেস্টুরেন্ট বিভিন্ন সময় খাবারে সমস্যা হলে এই রেস্টুরেন্ট শেষ আশ্রয়। প্রায় ৩বছর থেকে আমি নিয়মিত কাস্টমার বলা যায় এই রেস্টুরেন্টের। নিয়মিত যাতায়াতের ফলে ১ থেকে দেড় বছর এর মতো হবে রেস্টুরেন্ট এর একজন এর সাথে পরিচয় গড়ে উঠে। বয়স কতো আর হবে দেখলেই মনে হয় ১০-১২ বছরের এক কিশোর। রেস্টুরেন্ট এ প্রবেশ করলেই সবার আগে থাকে চোখে পড়ে হয় তো কোন অদৃশ্য টান থেকে এমনটা হবে।
নাম দিপক ব্রত দাশ তার নাম ব্যতীত আমার আর তেমন কিছু জানা ছিলো না তার সম্পর্কে। সব সময় মামা বলে আমাকে সম্বোধন করে। কথার চলে একদিন জিজ্ঞেস করলাম কিসে পড়ো? হেসে হেসে উত্তর দিলো মামা ক্লাস ৬ এ পড়ি। আবার জিজ্ঞেস করলাম পিএসসির রিজাল্ট কি উত্তর দিলো জিপিএ-৫। উত্তর শুনে অবাক হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় ছিলো না। সেদিনের মতো আমি চলে আসলাম, কিন্তু দিপক কে নিয়ে আমার আগ্রহ থেকেই গেল। গত কয়েকদিন আগে আমার পাশে বসিয়ে তার সবকিছু জানলাম। বাবা কটিচন্দ্র দাশ আর মা কাঞ্চনরানি দাশ, তিন ভাই আর দুই বোনের মধ্যে ও চতুর্থ। বাবা মেডিকেলের সামসুদ্দিন হল ছাত্রাবাসের দারোয়ান। গ্রামের বাড়ি জকিগঞ্জের রগুরচক গ্রামে। পারিবারিক সমস্যার কারণে প্রায় ২ বছর আগে পরিবারের সবাই সিলেটে চলে আসে।
২০১৫ সালে জকিগঞ্জের ইছামতী হাবিবিয়া প্রি ক্যাডেট স্কুল থেকে পিএসসি পরিক্ষায় অংশ নিয়ে সে জিপিএ-৫ পায়।
২০১৬ সালে নিজের পড়ালিখার খরচ বাবার পক্ষে চালানো সম্ভব হচ্ছিলো না যার জন্য বাধ্য হয়ে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিতে হয় দিপকের। ২০১৭ তে ২৪০০ টাকা বেতনে একটি রেস্টুরেন্ট এ চাকরি নেয় সে। রাত দিন মিলিয়ে ১০ ঘন্টা সময় কাজ করতে হয়, সব কষ্ট কে সে হাসি মুখে ভরণ করে নেয় শুধু মাত্র একটি কারণে তাকে পড়তে হবে। ২০১৭ সালে ৬ষ্ট শ্রেণীতে সিলেটের ইনক্লসিব স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি হয় দিপক। স্কুলের পড়ালিখার পাশাপাশি নিয়মিত রেস্টুরেন্ট এ কাজ করতে হয় তাকে। রেস্টুরেন্টের কাজের চাপের জন্য প্রতিদিন মাত্র ২-৩ ঘন্টা পড়ালিখার সময় পায় দিপক। সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠে পড়তে বসে ৮:৩০ মিনিটে পড়ার টেবিল থেকে উঠে রাতে রেস্টুরেন্ট থেকে আনা সমসা আর পুরি খেয়ে স্কুলে যেতে হয়।
আমি প্রশ্ন করলাম এতো কম পড়ালিখা করে ভালো রিজাল্ট কি ভাবে করবে, “উত্তর দিলো আমাকে ভালো করতেই হবে মামা আমাকে পড়ালিখা চালিয়ে যেতেই হবে,আমার বাবার ইচ্ছা পুরণ করতে হবে”। তার এই সাহসিকতা এবং ইচ্ছা কে আমি সম্মান করি।
এই দিপকের মতো আজ অনেক কিশোর কাজ করছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে শিশু শ্রম বন্ধে আইন করা হলেও হচ্ছে না এর যথাযথ বাস্তবায়ন।
১৩ বছরের কিশোর দিপকের ভাগ্যের চাকা কি পরিবর্তন হবে নাকি রেস্টুরেন্টের থালা বাসনের সাথে জীবনভর যুদ্ধ করে বাচতে হবে?? এমন হাজারো দিপক আজ বাংলার আনাছে কানাচে জীবনের সাথে যুদ্ধ করে বেছে আছে। একটু সুযোগ করে দিলে হয়তো এরাই হবে আগামীদিনের একেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্র।