বিশ্বনাথে ব্যাপক হারে বাড়ছে ছিনতাই, জনমনে আতঙ্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ জুলাই ২০১৭, ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটের বিশ্বনাথে দোকানসহ বাড়ি-ঘরে চুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। গত ১২ দিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনদুপুর ও রাতে ৫টি ছিনতাইর ঘটনা ঘটেছে।
এছাড়া এক রাতে উপজেলার বিভিন্ন সড়কে থাকা ৫টি দোকান ও এনজিও সংস্থা টিএমএমএসে চুরির ঘটনা ঘটে। ছিনতাই ও চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে বিশ্বনাথের জনমনে বিরাজ করছে অজানা আতঙ্ক।
এদিকে, চুরি ও ছিনতাইয়ের এত ঘটনা সংঘঠিত হলেও থানায় মামলা হয়েছে মাত্র একটি ঘটনায়। অজানা ভয়ের কারণে অনেকেই আসতে চাচ্ছেন না আইনের আওতায়।
স্থানীয় জানা গেছে, গত ৯ জুলাই উপজেলার সীমান্তবর্তী গড়গড়ি গ্রামের এক মহিলা উপজেলা সদরস্থ একটি ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করে বাড়ি যাওয়ার পথে বিশ্বনাথ-রামপাশা রোড়ের নরশিমপুর নামক স্থানে দুপুরে ছিনতাইর শিকার হন।
এসময় ছিনতাইকারীরা তার কাছ থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। একই স্থানে পরদিন ১০ জুলাই বিকেলে ছিনতাইয়ের শিকার হন উপজেলা সদরের কলেজ রোড়ের ব্যবসায়ী আমিনুর রহমান। তিনি উপজেলা সদর থেকে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে মোটর সাইকেল যোগে বাড়িতে ফির ছিলেন। প্রতিমধ্যে ছিনতাইয়ের শিকার মোটর সাইকেলে থাকা দুই ছিনতাইকারী তাদের গতিরোধ করে ব্যবসায়ীর স্ত্রীর ব্যানেটি বেগটি ছিনিয়ে নেয়।
এসময় ছিনতাইকারীরা ডেগার দিয়ে ব্যবসায়ীকে আঘাত করার চেষ্টাও করে। ১৭ জুলাই দুপুরে দেওকলস ইউনিয়নের বাসিন্দা দুই মহিলা ইসলামী ব্যাংক বিশ্বনাথ শাখা থেকে টাকা তুলে যাওয়ার পথে উপজেলা সদরের জগন্নাথপুর রোডে ছিনতাইর শিকার হন। ১৮ জুলাই সকালে উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর গ্রামের গনি মিয়ার স্ত্রী মিনা বেগম উপজেলা সদরের পুরান বাজারস্থ উত্তরা ব্যাংক থেকে বের হওয়ার পর ছিনতাইর শিকার হন। এসময় দুই ছিনতাইকারী অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মিনা বেগমের স্বর্ণের চেইন ও আংটি এবং নগদ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
সর্বশেষ গত ২০ জুলাই রাত ১২টায় উপজেলার দেওকলস ইউনিয়নের মইজপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য মাসুক মিয়ার পুত্র আকবর হোসেন আক্কল ও আলী হোসেন স্থানীয় কালীগঞ্জ বাজারস্থ নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান (নাইসস টেলিকম) থেকে পায়ে হেটে বাড়ি ফেরার পথে আলাপুর নামক স্থানে ছিনতাইর শিকার হন। ২টি মোটর সাইকেলে ৬ জন ছিনতাইকারী তাদের গতিপদ রোধ করে তাদের উপর হামলা করে সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন’সহ সাথে থাকা জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ছিনতাইকারীদের হামলায় গুরুত্বর আহত হন দুই ভাই (আকবর-আলী)। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আলী হোসেনের হাত ও পায়ের রগ কেটে গেছে বলে জানা গেছে। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন গুরুতর আহত অবস্থায় আলী হোসেনকে উদ্ধার করে প্রথমে সিলেট নর্থইস্ট হাসপাতাল ও পরে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরবর্তিতে ২১ জুলাই ভোরে মুমুর্ষু অবস্থায় তাকে (আলী) ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে। বর্তমানে আলী হোসেন ঢাকার শেরেবাংলা নগরের জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত ৭ জুলাই শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলা পরিষদ রোড়ে অবস্থিত জোবেদা বীজ ঘর, আশরাফ মেটাল কিং, মাদ্রাসা মার্কেটের মাঈশা ভেরাইটিজ ষ্টোর, বিশ্বনাথ-মুফতিরগাঁও স্কুল রোড়ে অবস্থিত মাহি এন্ড ফাইজা ভেরাইটিজ স্টোর, বিশ্বনাথ-মিরেরচর রোড়ে (চৌধুরীগাঁও) অবস্থিত সেলিম ভেরাইটিজ স্টোর এবং এনজিও সংস্থা টিএমএমএস’র অফিস চুরি হয়। ওই রাতেই স্থানীয়দের প্রচেষ্ঠায় ব্যর্থ হয় নতুন বাজার মাছহাটা মসজিদ মার্কেটে দুটি দোকানে চুরির পায়তারা।
এরপূর্বে গত ৬ জুলাই দিবাগত রাতে উপজেলার খাজাঞ্চী রোড়ে অবস্থিত উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান গৌছ খানের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটে। এছাড়া উপজেলার নতুন বাজারস্থ ব্যাংক পাড়াখ্যাত ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড এলাকা থেকে দিনের আলোতেই প্রতিনিয়ত মোটর সাইকেল চুরির ঘটনা সংগঠিত হয়ে আসছে।
থানায় নতুন যোগদানের কথা জানিয়ে বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাসসুদ্দোহা পিপিএম বলেন, দুই ভাইয়ের উপর হামলার ঘটনায় থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। অন্য কোন ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এসময় তিনি বিশ্বনাথে সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির জন্য সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।