ঘরে আগুন, বাইরে এসিড : ব্রিটেনে ভালো নেই প্রবাসী বাংলাদেশীরা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুলাই ২০১৭, ১০:৪৮ অপরাহ্ণ
জুবায়ের আহমেদ:
লন্ডন স্বপ্নের শহর, জীবনযাত্রার মান, নিরাপত্তা ও ব্যক্তিগত শান্তির দিক বিবেচনায় এটা বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর। কিন্তু হঠাৎ করে এই শান্তির শহরে নেমে এসেছে চরম অশান্তি। ঘরে আগুন, বাইরে এসিড বর্ণবাদী হামলায় আজ এক অজানা আতঙ্কে দিন পার করছেন আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীরা। পুর্ব লন্ডনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় নিরীহ নরনারী এই অব্যাহত দুর্ঘটনা ও সন্ত্রাসের বর্বরতা থেকে পরিত্রাণ পেতে চান।
জানা যায়, গত দুই মাসে লন্ডনের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৫টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। হতাহতের মধ্য ছিলেন অনেক বাংলাদেশী। ব্রিটেনে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার পর বর্ণবাদী হামলা এখন চরম আকার ধারণ করেছে। এর মধ্য পুর্ব লন্ডনে বাংলাদেশী মহিলাদের উপর একের পর এক হামলা ও সম্প্রতি শুরু হয়েছে এসিড হামলা।
পুর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রীনের বাসিন্দা সিরাজ আলী সুরমা নিউজকে বলেন, প্রায় ৩০ বছর ধরে লন্ডনে বসবাস করে আসছেন। এমন ভয়াবহ অবস্থার মধ্য কখনো ছিলেননা। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে দিচ্ছেন না। নিজেও রয়েছেন আতঙ্কে। মসজিদে নামাজে যাওয়া আসার সময় ভয় নিয়ে যাওয়া আসা করতে হয়।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী অনলাইন ইন্ডিপেনডেন্টের খবর গত সপ্তাহে লন্ডনে মোটরসাইকেলে (মোপেড) চড়ে দুই লোক মাত্র ৯০ মিনিটের মধ্যে ৫টি এসিড হামলা চালিয়েছে। লন্ডন পুলিশ বলেছে, এসিড লেগে একজন ভিকটিমের মুখের ক্ষতের অবস্থা গুরুতর। গত বৃহস্পতিবার রাতে পূর্ব লন্ডনে এসব ঘটনা ঘটে। দৃশ্যত, ৫টি হামলাই একই সূত্রে গাঁথা। দুই ভিকটিমের মোটরসাইকেল চুরি হয়েছে। ।
খবরে বলা হয়, গুরুতর এই শারিরীক হামলা ও ডাকাতির অভিযোগে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে পূর্ব লন্ডনের একটি পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়েছে।
৩২ বছর বয়সী এক মোটরসাইকেল চালককে দিয়ে হামলার শুরু। হামলাকারী ওই দুই জন কুইন্সব্রিজ রোডের হ্যাকনি রোড সংযোগে তার দিকে এগিয়ে যায়। এরপরই দুই সন্দেহভাজন তার মুখে এসিড ছুড়ে মারে। এরপর এদের একজন তার মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যায়। পুলিশ জানায়, ওই ভিকটিম এরপর একটি স্থানীয় হাসপাতালে যেতে সমর্থ হন।
২০ মিনিটেরও কম সময় পরে সকাল ১০.৫০ মিনিটে আরেক ভিকটিমের গায়ে এসিড ছুড়ে মারে ওই হামলাকারী যুগল। এবার ঘটনাস্থল ইসলিংটনের হাইবুরি কর্নারের আপার স্ট্রিট সংযোগ। পরে উত্তর লন্ডনের একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় ভিকটিমকে।
সকাল ১১.০৫ মিনিটে, দ্রুতগতিতে এগোতে থাকা দুই হামলাকারী শোরেডিচ হাই স্ট্রিটে এক লোককে এসিড মারে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ব্যক্তির ক্ষত গুরুতর নয়। মাত্র ১৫ মিনিট পরই তারা দৃশ্যত আরেকটি হামলা চালায়। কেজনোভ সড়কে এক লোক তাদের হামলার শিকার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, তার মুখের ক্ষতের অবস্থা ‘লাইফ চেঞ্জিং’।
দ্য সান পত্রিকা জানিয়েছে, স্থানীয় বাসিন্দা স্যামুয়েল এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি জানান, এসিড মারার পর নিজের মুখ ধরে যন্ত্রণায় ছটপট ও চিৎকার করছিলেন এই ভিকটিম। তিনি জানান, হামলার পর পর অনেক মানুষ এগিয়ে এসে তার মুখে পানি দিতে শুরু করে।
সর্বশেষ হামলার ঘটনা ঘটে ১১.৩৭ মিনিটে। চ্যাটসওর্থ সড়কে নিজের মোটরসাইকেলে বসে থাকা এক ব্যক্তির ওপর এসিড ছুড়ে ওই দুই জন। এরপর তার মোটরসাইকেল নিয়ে তারা পালিয়ে যায়।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘তদন্ত চলছে। হ্যাকনি সিআইডির কর্মকর্তারা বিষয়টি তদন্ত করছেন।’ পুলিশ প্রত্যক্ষদর্শীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
খবরে বলা হয়, এই হামলা এমন সময়ে হলো যখন মাত্র কয়েকদিন আগেই এক বৃটিশের বিরুদ্ধে উঠতি মডেল ও তার কাজিনকে এসিড নিক্ষেপের অভিযোগ আনা হয়। রেশাম করিম ও জামিল মুখতারের ক্ষতের অবস্থা গুরুতর। তারা উভয়েই মুসলিম। পূর্ব লন্ডনের বেকটনে রেশাম নিজের জন্মদিন পালন করছিলেন তখন। জন টমলিন নামে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে গুরুতর শারিরীক ক্ষতি করার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে।
এ বছর লন্ডনে গণহারে এসিড হামলার ঘটনা আগেও ঘটেছিল। ইস্টার মানডেতে লন্ডনের একটি নাইট ক্লাবে জড়ো হওয়া মানুষজনের ওপর এসিড মারা হয়। দুই জন এতে অন্ধ হয়ে যান। বাকিদের চেহারা বিকৃত হয়ে যায়।