ঝড় তুলেছেন মুক্তাদির
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০১৭, ৩:১৬ পূর্বাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
কোন পদ ছিলনা তার, তবুও সিলেট বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের জন্য বিশাল ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। নিজেকে ঢেলে সাজিয়ে তুলেছেন সিলেটে জাতীয়তাবাদি দলকে। তিনি হলেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। সিলেটে বিএনপির বীজ বপন হয়েছিল তার পিতা খন্দকার আবদুল মালিকের হাত ধরে।
এবার তারই পুত্র খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সিলেট বিএনপির হাল ধরেছেন। অনেকটা অগোছালো সিলেট বিএনপিকে গুছিয়েও এনেছেন তিনি। দলের দুর্দিনের হালধরা এই নেতা এখনও চষে বেড়াচ্ছেন সিলেটের বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ পাড়া মহল্লায়। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে সিলেটের সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের পছন্দের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন এ নেতা। নেতাকর্মীরাও তাকে আপন করে নিয়েছেন দলের দুর্দিনে বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য। দলের সবার কাছে এখন তিনি প্রিয় পাত্র।
শমসের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের পর সিলেট বিএনপির কাণ্ডারি কে হচ্ছেন আর জাতীয় নেতা হিসেবে কে বা ভূমিকা রাখবেন এমন আলোচনা সমালোচনা যখন সিলেটে চলছিল তখন সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দলের দুর্দিনে হাল ধরনের খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। এদিকে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে সিলেটের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়েও দলের নেতাকর্মীদেরকে একত্রিত করে ইফতার মাহফিলের আয়োজনও করে যাচ্ছেন তিনি।
দলের একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলেট বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা যখন একের পর এক মামলায় জেল খেটেছেন তখন তাদের পাশে এসে কেউ দাঁড়াননি। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেও অনেকেই আত্মগোপনে চলে যান। দলের কোন পদ-পদবি না থাকার পরেও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির সেই সব নেতাকর্মীদের পাশে এসে দাঁড়ান। নিজের যেটুকু ছিল তা নিয়ে এগিয়ে যান নেতাকর্মীদের পাশে। দুর্দিনে পাশে থাকা সেই নেতাকে সিলেট-১ থেকে দল মনোয়ন দিবে বলে আশাবাদি নেতাকর্মীরা।
সাধারণ মানুষসহ দলীয় নেতাকর্মীদের ভালোবাসা আর প্রেরণা পেয়ে আজ এ পর্যন্ত এসেছি জানিয়েছে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলেন, যদি বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া সিলেট থেকে নির্বাচন করেন তাহলে আমি মনেকরি সিলেটের জন্য একটি বিশাল পাওয়া। এখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির নেতৃবৃন্দসহ দলের চেয়ারপার্সন যে সিদ্ধান্তই নেবেন তা আমরা মেনে নেব। সিলেট বিএনপিসহ দলের অঙ্গসংগঠন এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। জনশ্রুতি রয়েছে সিলেট-১ আসন থেকে আপনি নির্বাচন করবেন এ বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে আমি একক কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। দলের সিদ্ধান্তই মূল সিদ্ধান্ত। যদি দল আমাকে মূল্যায়ন করে তাহলে নির্বাচনে অংশ নেব।
জানা যায়, এক সময়ে সিলেট বিএনপির কাণ্ডারি ছিলেন খন্দকার আবদুল মালিক। তার হাত ধরেই সিলেট বিএনপির বীজ বপন হয়। পরবর্তীতে তিনি দুদফায় এমপিও নির্বাচিত হন। তবে পরে বিএনপিতে কোণঠাসা করে ফেলা হয় তাকে। এরপর আর রাজনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি খন্দকার আবদুল মালিক। তাকে সরিয়ে সিলেটের রাজনীতি দখলে নেন সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান। দীর্ঘদিন দলের স্থায়ী কমিটির আসনে থাকা সাইপুর ছিলেন দলের অত্যন্ত প্রভাবশালী। তবে সিলেটের নেতৃত্ব নিয়ে সংকটে পড়তে হয় তাকেও।
সাইফুরকে চ্যালেঞ্জ করে সিলেট বিএনপির ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে নেন তারেক রহমানের আশীর্বাদপুষ্ট এম ইলিয়াস আলী। ক্ষমতার রাজনীতিতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠা ইলিয়াস আলী ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা থেকে আকস্মিক নিখোঁজ হন। এরপর বিএনপির হাল ধরেন শমসের মবিন চৌধুরী। সিলেট বিএনপির দায়িত্ব নিলেও মরহুম খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরও দলের দুর্দিনে এগিয়ে আসেন। সময় দিতে শুরু করেন সিলেটের রাজনীতিতে। খুব অল্প দিনেই নেতাকর্মীদের মন জয় করে ফেলেন তিনি।
গত তিন দশকে সিলেট বিএনপির ভাঙাগড়ায় আলোচনায় ছিলেন সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান, খন্দকার মুক্তাদিরের বাবা মরহুম খন্দকার আবদুল মালিক, বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নিখোঁজ ইলিয়াস আলী, লন্ডন বিএনপির সাবেক সভাপতি মরহুম কমর উদ্দিন ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী। তাদের পর এবার আলোচনার ঝড় তুলেছেন খন্দকার আবদুল মুক্তাদির। সিলেটে দীর্ঘ একযুগ ধরে জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি হয়নি। নতুন কমিটির জন্য অনেকেই দৌড়ঝাঁপ করেছেন কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন সবাই। অথচ খন্দকার মুক্তাদির দলে কোনো পদ-পদবি না থাকলেও এ কঠিন কাজটি করেন।