সিলেটের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের একটি প্রাচীন জনপদ জৈন্তাপুর
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০১৭, ৮:২১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সিলেটের লাউয়াছড়া, মাধবপুর কিংবা জাফলং দেখে ফেলেছেন তাদের জন্য একটি আদর্শ পর্যটন স্পট হতে পারে জৈন্তাপুর। জৈন্তাপুর সিলেটের একটি প্রাচীন জনপদ। সিলেট শহর হতে ৪০ কিলোমিটার দূরে জৈন্তা-খাসি পাহাড়ের পাদদেশে জৈন্তাপুর অবস্থিত। উত্তর এবং পূর্বে পাহাড়-পর্বত এবং উপত্যকার সমাবেশস্থল আর দক্ষিণে এবং পশ্চিমে বহু হাওরের সমাহার। এর উত্তরে ভারতীয় রাজ্য মেঘালয়, দক্ষিণে কানাইঘাট এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলা, পূর্বে কানাইঘাট আর পশ্চিমে গোয়াইনঘাট এবং সিলেট সদর। এখানে রয়েছে জৈন্তা রাজবাড়ি, খাসিয়াপাড়া আর সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র। তা ছাড়া লালাখাল আর জাফলং জৈন্তাপুর থেকে একেবারে কাছে। পাশেই রয়েছে জৈন্তা হিল রিসোর্ট। এর আশপাশের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের সঙ্গে এখানকার ঝরনা আপনাকে মুগ্ধ করবে। খুব কাছে দাঁড়িয়ে মেঘালয়ের উঁচু উঁচু সব পাহাড়।
এখানকার আদিবাসীদের গ্রাম, তাদের বাড়ীঘর আর জীবন বৈচিত্র আপনাকে মুগ্ধ করবে, অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি করবে। আশপাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরা। জাম্বুরা আর কমলাগাছ প্রচুর দেখবেন প্রায় প্রতিটি আদিবাসী বাড়ীতেই। এখানকার বাড়িগুলো খুব সুন্দর। প্রতিটি বাড়িতে সুপারি, স্থলপদ্ম আর জবাগাছের দেখা মিলবেই। এখানকার সুপারিগাছে সবাই পানের চাষ করে থাকে। প্রতিটি বাড়ির সামনের অংশ পাথর দিয়ে বাঁধাই করা। অনেকের মতে, এসব পাথরের বয়স প্রায় ২০০ বছর, একেবারে জৈন্তা রাজার আমলের।
এখানে পথের ধারে পড়ে আছে বিশাল সব পাথরখণ্ড, যা বহু আগে মাটি খুঁড়ে পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, এসব একেকটা মেগালিথিক সমাধি। এখানে বলে রাখি, মেগালিথিক হচ্ছে স্থাপনা তৈরির জন্য ব্যবহৃত বিশাল সব পাথরখন্ড। সিমেন্ট ব্যবহার না করে কেবল পাথর দিয়ে তৈরি হয় একেকটা মেগালিথিক, যার নিদর্শন আপনি এই জৈন্তাপুরে এলে দেখতে পাবেন। জৈন্তাপুরের রাজকীয় স্থাপনা বা পুরাকীর্তি আমাদের দেশের পুরাকীর্তিগুলোর একটি। এখানে রয়েছে জৈন্তেশ্বরী বাড়ি বা দরবার হল। বেশির ভাগ মানুষ দরবার হলকেই রাজবাড়ি বলে মনে করে।
এখানে দেখার মত আর একটি জায়গা হল সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্র। প্রতিদিন এখানে প্রচুর দর্শনার্থীর ভিড় জমে। এখাকার তেজপাতা, দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ বাগান এবং তৎসংলগ্ন মসলা গবেষনাকেন্দ্র আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এখানে সোজা পথ ধরে এগিয়ে গেলেই দেখা যাবে মেঘালয়। যত সামনে যাবেন, মেঘালয় তত স্পষ্ট হবে। সাইট্রাস গবেষণাকেন্দ্রের শেষ সীমানা থেকে একেবারে কাছে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। এপাশ থেকে স্পষ্ট দেখা যায় ভারতের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট। দেখা যায় বেশ কিছু পাহাড়ি ঝরনা আর মেঘেদের খেলা।
জৈন্তাপুর বেড়াতে গেলে জৈন্তা রাজবাড়ী, লালাখাল আর জাফলং বেড়িয়ে আসতে ভুলবেন না। এই দুটি দর্শনীয় স্থান জৈন্তাপুরের খুব কাছেই। আর মনে রাখবেন, জৈন্তা হিল রিসোর্টের গোধূলিবেলাটা কিন্তু অসাধারণ! সুতরাং সময় করে ঘুরে আসুন জৈন্তাপুর।
ইতিহাস
অতি প্রাচীণকালে বর্তমান জৈন্তাপুর সমতলভূমির অবস্থান ছিলো পানির নিচে যা বিশাল জলজ অঞ্চলের অংশ ছিলো বলে ঐতিহাসিকগণের ধারণা। পানির এই মহাসমারোহের কারণেই হয়তো এই অঞ্চলটি সিলেটের মূল ভূখণ্ড হতে বিচ্ছিন্ন ছিলো আর অর্জন করেছিলো বিশাল এক সময় ধরে স্বাধীন থাকার গৌরব। এই রাজ্যেরই নাম ছিলো জৈন্তাপুর।
স্থানীয় ইতিহাস আর লোকগাঁথা হতে পাওয়া যায়, সপ্তম বা অষ্টম শতাব্দির দিকে জৈন্তাপুর রাজ্য কামরূপ রাজ্যের শাসনাধীন হয়। ঐ একই বছর জৈন্তাপুর, চন্দ্র এবং বর্মণ বংশের অধীনে আসে। বর্মণদের পতনের পর জৈন্তাপুর পুণরায় কিছু সময়ের জন্য দেব বংশের আওতায় আসে।
যেভাবে যেতে হবে
জৈন্তাপুর যেতে হলে ঢাকা থেকে ট্রেনে বা বাসে যেতে হবে সিলেট। সিলেট থেকে এক ঘণ্টার পথ জৈন্তাপুর। বাস, মিনিবাস, সিএনজি চালিত অটোরিকশা বা মাইক্রোবাসে চড়ে জৈন্তাপুর চলে যেতে পারেন।
কোথায় থাকবেন
জৈন্তপুর গেলে উঠতে পারেন জৈন্তা হিল রিসোর্টে অথবা কাছের নলজুড়িতে জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয়। আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে ডাকবাংলোয়। আর যদি পরিচিত কেউ জৈন্তাপুরে থাকে, তাহলে খাসিয়াদের বাড়িতেও ভাড়ায় থাকতে পারবেন।