বাংলাদেশের মানুষকে ধর্ষণের ভূত ইদানিং এতো মারাত্মকভাবে চাপলো কেন ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০১৭, ১২:৪৯ অপরাহ্ণ
ইকবাল হাসান জাহিদ:
ইউপি সদস্য “সোবহানী” কৃর্তক প্রবাসীর স্ত্রী ধর্ষণের খবর পড়ে মেজাজটা যা খারাপ হইছিলো তারচে অনেকগুণ বেশি মনটা খারাপ হয়েছে হেডমাস্টার “অঞ্জন দেব” কর্তৃক প্রথমশ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের খবর পড়ে। একদিন পরপর দুইটা ঘটনা ঘটলো।
এই গত কয়দিন আগে ক্লাস ফাইভের মেয়েকে ধর্ষণ করলো বখাটে যুবক। বিচার চাইলো তার বাবা। কয়েক হাজার টাকা দিয়ে গ্রামের মোড়লরা বিচার ধামাচাপা দিলে মেয়ের বাবা নিষ্পাপ ছোট্ট মেয়েটাকে নিয়ে রেল লাইনে ঝাপ দিয়ে আত্মহত্যা করলো। গোটা দুনিয়াবাসি প্রত্যক্ষ করলো তার সংবাদ। তখন বাংলাদেশের নারীবাদী সুশিলরা টকশো গরম করলেন না। তাদেরকে রাস্তায় মানববন্ধনেও দেখা গেলো না।
কিছুদিন পরই সাফাত তার বন্ধুদের নিয়ে লিভ টুগেদার করলো টাকায় কেনা বান্ধবীকে। কোন এক অজানা কারণে বিষয়টা ফাঁস হলে সাফাতদের গ্রেফতার করা হলো। টকশো গরম হলো। মিডিয়া সরব হলো। নারীবাদীরা রাস্তায় বের হলো। সবই ভালো খবর।
কিন্তু সাফাতের মতো বদমাইশদের ডাকে এই সকল লুচ্চা মাইয়ারা হোস্টেলের পার্টিতে যায় কেনো? এই নিয়া কেউ মাথা ঘামাইলো না।
কিন্তু ঘটনা এই জায়গায় না, অন্য জায়াগায়। বাংলাদেশের মানুষকে ধর্ষণের ভূত ইদানিং এতো মারাত্মকভাবে চাপলো কেনো? বিষয়টা অনেকটাই গভীর দৃষ্টিতে চিন্তা ও গবেষণার।
মানুষের মধ্যে দুই প্রকারে গুণ থাকে। এক: মানবিক গুণ বা চরিত্র। দুই: পাশবিক গুণ বা চরিত্র। ধর্ষণ হচ্ছে মানুষের পাশবিক চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। মানুষের মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই যৌনতা বা যৌনক্ষুধা রয়েছে। এই যৌনক্ষুধা নিবারণের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়ম। আছে সামাজিক রীতিনীতি। ধর্মেও রয়েছে এর সুশৃংখল ব্যবস্থা।
সংক্ষেপে যদি আমি বিষয়টাকে ক্লিয়ার করি তবে বলব, যৌনতা মানুষের সহজাত বিষয়। যেই নারী বা পুরুষের যৌন কামনা বাসনা নেই, সে নপুংশক বা হিজড়া। যার মধ্যে এর পুরোটাই আছে সে সুপুরুষ কিংবা শক্তিমান মহিলা। খুবই ভালো কথা। কিন্তু এই সুপুরুষ কিংবা শক্তিমান মহিলার জন্য সমাজশাসিত নিয়ম, ধর্মশাসিত বিধান, মানবশাসিত আইনগুলো মান্য করাই তাদের ইতিবাচক গুণাগুণ।
কিন্তু সুপুরুষ সুমহিলা নিজেদের যৌনকামনা স্থানকাল পাত্র বহির্ভূতভাবে চর্চা করতে শুরু করবেন, যখন ধর্মীয় অনুশাসন ও মানবিক মূল্যবোধের বাহিরে গিয়ে পাশবিক গুণাবলির প্রতি ঝুকে যাবেন। তখনই শুরু হবে পশুবৃত্তির অবাধ চর্চা। এইগুলা যখন ধর্মীয় অনুশাসন থেকে মানুষ বের হয়ে লাগামহীন হয়ে যায় তখন অধিকহারে তার থেকে প্রকাশ হতে থাকে। সে যে ধর্মই হোক। কোনো ধর্মই পাশবিক গুণের চর্চা শেখায় না।সকল ধর্মই মানবতার কল্যাণের তরে জন্ম হয়েছে।
আমরা যারা সব সময় ধর্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলি, আমরা যারা রাস্তাঘাটে মানববন্ধন, সভা সেমিনার করে ধর্ষকদের শাস্তির বিষয়ে সরকারের কাছে দাবি উত্থাপন করি, আমরা নিজেরাই মূলত ভূল দাবী ভুল সিস্টেম অবলম্বন করে থাকি। বিড়াল কেনো সুটকি খেলো? পিঁপড়া কেনো চিনিতে ভিড় জমালো? কুকুর কেনো হাড্ডি নিতে ঘেউ ঘেউ করলো? কাক কেনো ডাস্টবিনে ঝাপ দিলো? এই সকল প্রশ্নের উত্তর এবং এই নিয়া বিচারের দাবী উত্তাপন করার কোনোই যৌক্তিকতা নেই। না কোনো দর্শন সাপোর্ট করে এই বিষয়গুলোর। না কোনো যুক্তিবিদ্যা সাপোর্ট করে এই দাবীগুলোর।
আপনি যতক্ষণ নিরাপদ জায়গায় সুটকি না রাখছেন। যতক্ষণ কাঁচের বুয়োমে চিনিকে রক্ষিত না রাখছেন ততক্ষণ সেটা বিড়ালের আর পিঁপড়ার খাবার। ঘরে পোষবেন বিড়াল। মেঝেতে ফেলে রাখবেন সুটকি। চা খাওয়ার জন্য ঘরে আনবেন চিনি। টেবিলের উপর খুলে ফেলে রাখবেন চিনির পুটলি। তারপর সুটকি সাবাড় করার জন্য দোষবেন বিড়ালকে। আর চিনির জন্য পিপড়াকে এই অযৌক্তিক পাগলামি কিংবা মাতলামি কোনো কমন সেন্সের মানুষই করতে পারে না।
আমাদেরকে সর্ব প্রথম যেটা করতে হবে, সমাজের প্রতিটি মানুষকে মানবিক গুণাবলিতে শতভাগ গুণান্বিত করার চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যেক মানুষেকে তার নিজ নিজ ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও ধর্মপালনে উৎসাহিত করতে হবে। ধর্ষন একটি সামাজিক ব্যাধি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই ব্যাধির সুদুরপ্রসারী কুপ্রভাবের দিক মানুষের কাছে আলোকপাত করতে হবে। সর্বোপরি ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেই কেবল ধর্ষণের মতো অভিশপ্ত কাজ থেকে মানুষকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)