এই টাকার মালিক আজীবন থাকা যায় ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০১৭, ২:৫৭ অপরাহ্ণ
ইকবাল হাসান জাহিদ:
সুনামগঞ্জের দুর্ভিক্ষগ্রস্থ মানুষের পাশে নেই কেনো মাহতাবুর রহমান নাসিরের আল হারামাইন গ্রুপ কিংবা হাফিজ মজুমদারের ট্রাস্ট? সকলেই কেনো শুধু সরকারের তহবিলের আশায়?
৩’শ কোটি টাকা দিয়ে সিলেটে বাড়ি তৈরি করলেন মিস্টার মাহতাবুর রহমান নাসির। চারটি দেশ থেকে এই বাড়ির মেটেরিয়ালস আমদানি করে আনলেন। তৈরি করলেন দুনিয়ার এক বেহেশত। বললেন, মাঝে মধ্যে থাকার জন্যই এই প্রয়াস। তার ভাষ্যমতে আরো ৩’শ কোটি টাকা খরচ করে সিলেটের সুবহানিঘাটে প্রতিষ্ঠা করছেন আল হারামাইন হসপিটাল। খুবই ভালো সংবাদ।
শুনেছি তার দেড় হাজার কোটি টাকা মূল্যের কোম্পানি আল হারামাইন ফারফিউম গ্রুপ বিশ্বসেরা আতর প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। তিনি এনআরবি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও।
হাফিজ মজুমদার ট্রাস্ট। শুনেছি শতকোটি টাকার মালিক। একটা ব্যাংকের চেয়ারম্যানও।
কিন্তু অকাল বন্যায় চরম দুর্ভিক্ষগ্রস্থ সুনামগঞ্জের অসহায় নিরাশ্রয় মানুষের পাশে আজকাল এই দুই মাল্টিমিলিয়নার শিল্পপতিকে দেখা যায় না। বাট হোয়াই?
মাহতাবুর রহমান নাসিরের একটি রুমের কয়েকটি মেটেরিয়ালস এর দাম হবে ৫০ কোটি টাকা। এই একটি রুম তৈরির ৫০ কোটি টাকা নিয়ে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে দাঁড়ালে কতটুকু উপকার হতো পাঠক বলবেন।
শুধু অর্থবিত্ত, আর প্রভাব প্রতিপত্তি দিয়েই কি মানুষের মন জয় করা যায়? সৃষ্টিকর্তা মহান রবকে সন্তুষ্ট রাখা যায়? এই টাকার মালিক আজীবন থাকা যায়? এই টাকার উৎস কেউ নাই বা খুঁজলো। মাহতাবুর রহমানের মতো মানুষ তাঁর আল হারামাইন কোম্পানীর পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত মানুষের পাশে আন্তরিকভাবে দাঁড়ালে আমার মনে হয় না সুনামগঞ্জবাসী এতো দুর্ভিক্ষ উপলব্দি করতো।
হাফিজ মজুমদার তাঁর ট্রাস্ট নিয়ে সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ালে হয়তো ভোটের রাজনীতিতে তেমন সুফল পাবেন না। কিন্তু এই একটা মানবিক দায়বোধ কি তাঁর পালন হতো না। এতো টাকা আর এতো প্রভাব প্রতিপত্তি কিছুই তো কাজের না, যদি না এই টাকাগুলোর সঠিক খরচ করা হয়।
আমি আরো বেশি বিস্মিত।এই সম্পদশালী মহান ব্যক্তিদের আশপাশে কি এমন কোনো ভালো জনদরদী লোক নেই? যারা এঁদেরকে নিয়ে সুনামগঞ্জের হাওরপাড়বাসী মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখিয়ে আনবেন। তাদের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ দিয়ে আগামী রমজান মাসের রোজাগুলো তৃপ্তিতে রাখতে দিতে সহযোগিতা করবেন?
সিলেটের অনেক বড় বড় কোম্পনীর মালিকের কোটি কোটি টাকা বাৎসরিক যাকাত আসে। এই তাদের যাকাতের টাকাগুলোরও তো একটা হিশাব আছে। এই টাকাগুলাই নিয়ে যদি অসহায় নিরাশ্রয় মানুষের পাশে দাঁড়াতেন তাঁরা তাইলে এতো বেশি দুঃখ দুর্দশায় ভোগতে হতো না হাওরপাড়বাসীকে।
কালো টাকার শাদা করার জন্য শুনেছি অনেকেই প্রতি মাসে ৫ কোটি টাকা থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত সরকারের বিশেষ মানুষকে হাতখরচা দেন। শুনেছি এরশাদ সাহেবকেও কোটি টাকা দিয়ে খুশি রাখেন অনেক পারফিউম ব্যবসায়ী। কিন্তু আল্লার জমিনে তাঁরই বান্দার দুঃখ দুর্দশা দেখে এই অধিকার বঞ্চিত অসহায় মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর কি কোনো দায়িত্ববোধ তাদের নেই?
(সুরমানিউজ এর পাঠককলামে প্রকাশিত সব লেখা পাঠক কিংবা লেখকের নিজস্ব মতামত। এই সংক্রান্ত কোনো ধরনের দায় সুরমানিউজ বহন করবে না। সুরমানিউজ এর কোনো লেখা কেউ বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করতে পারবেন না।)