বালাগঞ্জে ত্রাণ নিয়ে ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব : আইন-শৃঙ্খলা সভায় নিন্দা প্রস্তাব
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মে ২০১৭, ৯:০৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
বালাগঞ্জে অকাল বন্যায় বোরো ফসল হারানো কৃষকদের মধ্যে নগদ অর্থ ও চাল বিতরণকে কেন্দ্র করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান-মেম্বার, স্থানীয় এমপির দলীয় (জাতীয় পার্টি) নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। ত্রাণ সহায়তার জন্য চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দেয়া তালিকায় গরীব দুস্থ কৃষকদেরকে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের অভিযোগ ত্রাণের জন্য স্থানীয় এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়ার দেয়া তালিকা উপেক্ষা করে মেম্বাররা স্বজনপ্রীতি করে গরীব ও দুস্থ কৃষকদেরকে বাদ দিয়ে নিজেদের লোকজনকে ত্রাণ দিচ্ছেন। এনিয়ে জনপ্রতিনিধি প্রশাসন এবং জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের মধ্যে ত্রিমুখী দ্বন্ধের সূত্রপাত হয়েছে। এনিয়ে রবিবার জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ইউএনওকে দায়ি করে প্রতিবাদ মিছিল করায় জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনওকে জড়িয়ে জাতীয় পার্টির ব্যানারে বিষোদাগার করায় সোমবার উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন-শৃঙ্খলা সভায় এর প্রতিবাদ জানিয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে নিন্দা প্রস্তাব গৃহিত হয়েছে। নিন্দা প্রস্থাবের বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা সভায় উপস্থিত থাকা জনপ্রতিনিধিরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, রবিবার এমপির পক্ষ থেকে লোকজনকে নগদ অর্থ ও চাল দেয়ার আশ্বাসে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক নারী-পুরুষকে বালাগঞ্জ উপজেলা সদরে জড়ো করেন। ত্রাণের আশ্বাষে জড়ো হওয়া লোকজনকে নিয়ে বেলা ১২টার দিকে উপজেলা পরিষদের সম্মুখে ‘উপজেলা জাতীয় পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে’ ত্রাণ বিতরণে প্রকৃত কৃষকদেরকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করা হয়। ত্রাণ দেয়ার আশ্বাষে ডেকে আনা লোকজনকে দিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করার পর তাদেরকে শুন্য হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। ত্রাণের আশ্বাষে মিছিলে আসা বালাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকার রাবিয়া বেগম ও হাসপাতাল নিকটবর্তী বদরনগর এলাকার সুফিয়া বেগম অভিযোগ করে বলেন, এমপি আমাদের হাতে নগদ ৫ শত টাকা ও ৩০ কেজি করে তুলে দেবেন এ কথা বলে কয়েক শত পুরুষ-মহিলাকে এনে মিছিল করিয়ে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা তাদের কাছে টাকা ও চাল দেয়ার কথা বললে তারা আমাদেরকে বলে-আমরা চাল আর টাকা দেব কেন। এগুলো ইউএনও আর চেয়ারম্যানরা দেবেন তোমরা তাদের কাছে গিয়ে চাও। এঘটনায় আমরা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে নালিশ করায় আমাদেরকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। ত্রাণের আশ্বাষে মিছিলে আসা লোকজন ত্রান বঞ্চিত হয়ে প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ উপজেলা পরিষদে গিয়ে বিচার প্রার্থী হন। সে সময় সেখানে অবস্থানকারী বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (৭,৮,৯ নং ওয়ার্ড) শেফালী বেগম মুঠোফোনে জানান, তালিকা অনুযায়ী আমরা শনিবারে ইউনিয়ন পরিষদে ত্রাণ বিতরণ করেছি। কিন্তু শনিবারে ইউনিয়ন থেকে ত্রাণ নেয়া লোকজনকে ত্রাণ দেয়ার প্রলোভণ দিয়ে মিছিলে আনা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ত্রাণের জন্য আসা মানুষজন হতাশ হয়ে উপজেলা পরিষদে গিয়ে নালিশ দেয়ার খবরে প্রতিবাদকারীরা দ্রæত উপজেলা এলাকা থেকে সটকে পড়ে। এই ঘটনায় ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা তাৎক্ষনিক উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে এ ঘটনায় নিন্দা ও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এর সাথে জড়িতদের শাস্তি ও তাদের মদদ দাতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জোর দাবি জানান। চেয়ারম্যানদের উপিস্থিতিতে তাৎক্ষনিক অনুষ্টিত বৈঠকের সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া বলেন, সুষ্টু ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু কৃষকদেরকে বঞ্চিত করার অজুহাতে যে বা যারা একজন দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নাটকীয় প্রতিবাদ রচনা করছে এবং উপজেলা প্রশাসন এলাকায় প্রবেশ করে দম্ভোক্তি করেছে সেটা অবশ্যই দৃষ্টতার সামিল। এটি পুরো উপজেলাবাসীর জন্য কলঙ্কের। এতে জড়িত বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ বলেন, ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে আমার কোনো হাত নেই। ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে পাওয়া তালিকাগুলো আমি অগ্রগতি করে দেই। এতে কেউ আমাকে দায়ি করার কোনো কারণ নেই। এবিষয়ে কেউ আমার ওপর নাখোশ হলে সেটা তার অজ্ঞতা। এদিকে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ সভার নামে হেতুক ইউএনও’র প্রত্যাহার দাবি করার বিষয়টি অযৌথিক বলে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা মন্তব্য করেছেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অভিযোগ করে বলেন, উপজেলা পরিষদের সম্মুখে এভাবে অশ্লিল ভাষায় বক্তব্য দেয়ার বিষয়টি অতিরঞ্জিত ও বাড়াবাড়ির সামিল। এই ঘটনাটি সরকারী কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের হুমকি এবং নিরাপত্তার অভাব বলে আমরা মনে করছি। এই ঘটনায় পরবর্তী করণীয় সিদ্ধান্ত গ্রহনের জন্যে রবিবার বিকেলে উপজেলা নন-গেজেটেট কর্মচারী ক্লাবের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট একটি লিখিত আবেদন দেয়া হয়েছে বলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম। বালাগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মুনিম সহ একাধিক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা জানান, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে তালিকা অনুযায়ী আমরা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের মধ্যে ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু ত্রাণের জন্য এমপি উনার লোকজনকে দিয়ে মনগড়া তালিকা তৈরী করে আমাদের কাছে দফায়-দফায় একাধিক ডিও’র (ডলিভারী অর্ডার) পাঠিয়ে ত্রাণ দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। এমপির দেয়া তালিকায় একই পাড়ার কিংবা একই পরিবারের একাধিক ব্যক্তির নাম রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রতিনিধি সহ সাধারণ লোকজনের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে উপজেলা জাপা’র সদস্য সচিব হরেশ দাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমপির সুপারিশ সহ আমরা একাধিকবার চেয়ারম্যান-মেম্বারদের নিকট তালিকা দেয়ার পরও তারা এবিষয়ে গুরুত্ব দেননি। আমরা কারো বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ করিনি শুধু ত্রাণ বঞ্চিতদের পক্ষে প্রতিবাদ করেছি। তবে ন্যায্য দাবি আদায় করার স্বার্থে কেউ যদি প্রতিপক্ষ হয়ে যান তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা ত্রানের আশ্বাষ দিয়ে কাউকে এখানে আনিনি। কেউ এমন দাবি করলে কিংবা কেউ যদি লোকজনকে ভুল বুঝায় তাহলে সেটা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের পাঁয়তারা।