কি হবে আর মে দিবস পালন করে, আমাদের আন্দোলন কে শুনবে
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ মে ২০১৭, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণ
তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল থেকে:
চায়ের জন্য বিখ্যাত মৌলভীবাজারের চা শহর শ্রীমঙ্গল। পর্যটন দিয়ে শুধু নয় চায়ের জন্য বিখ্যাত সবার শ্রীমঙ্গল সারা বিশ্বে আলোচিত। দেশের সবচেয়ে বেশি চা বাগান রয়েছে এই অঞ্চলে। শ্রীমঙ্গল চায়ের রাজধানী বলে পরিচিত। সারা বছরই চা শ্রমিকরা চা শ্রমিকদের আন্দোলন সংগ্রামের সাথে কাটাচ্ছেন মানবেতর জীবন।
শ্রীমঙ্গলের চা শ্রমিকরা তাদের দুঃখ জানায় প্রতিদিন সকালে চা-পাতা ভাজা, দুপুরে শুকনা রুটি খেয়ে টানা আট ঘণ্টার পরিশ্রম শেষে ২৩ কেজি চা-পাতা সংগ্রহের পরেও মজুরি হিসেবে পাচ্ছেন মাত্র ৮৫ টাকা। দিনের পর দিন এভাবে তারা জীবন কাটাচ্ছেন। ফলে পর্যাপ্ত খাবারের অভাবে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরাও অপুষ্টিতে ভুগছেন। আর তাদের সন্তানরা ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারছে না।
শ্রীমঙ্গলের বেশ কয়েকটি চা বাগান ঘুরে চা শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায় তাদের যত দুঃখ কথা।
চা বাগানে মে দিবসের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে চা শ্রমিকরা জানায় প্রতি বছর চা বাগানের শ্রমিকদের নিয়ে নিয়ে আমরা মে দিবস পালন করি। আমাদের দূঃখ দূর্দশা সবার কাছে তুলে ধরি। কিন্তু আমাদের আমাদের এই আন্দোলন কে শুনবে , কি হবে আর মে দিবস পালন করে”। এ দূঃখ চা শ্রমিক সকলের দূঃখ। মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন মৌলভীবাজার সহ দেশের ১৬৫টি চা বাগানের শ্রমিকরা । প্রায় ২০০ বছর ধরে মৌলভীবাজারের ৯২ টি চা বাগানে বংশ পরমপরায় কাজ করছেন চা শ্রমিকরা। তাদের শ্রমে এই শিল্পের উন্নয়ন হলেও শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছে না। দৈনিক একজন শ্রমিকের মজুরী ৮৫ টাকা। আর সেই সাথে সপ্তাহ শেষে তিন কেজি খাওয়ার অনুপযোগী আটা। তাও আবার ওজনে কম। মৌলিক চাহিদা পূরণে দীর্ঘদিন ধরে মজুরি বৃদ্ধি, ভূমি অধিকার, বাসস্থান ও চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন দাবী তাদের। কিন্ত বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন চা শ্রমিক পরিবারের সদস্যরা। চা বাগানের শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে চা বাগান আগলে রাখলেও তাদের শিক্ষা চিকিৎসা এখন সেই অনুন্নতই রয়ে গেছে।
সরকার তাদের আবাস্থল নিজ নিজ মালিকানায় করে দিবে বলরেও এখনো এর অগ্রগতী হচ্ছে না কিছুই । আর এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে ভুমি নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছেন চা শ্রমিকরা।
শ্রীমঙ্গলের কালিঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযুদ্ধা পরাগ বাড়ই বলেন, চা শ্রমিকরা সেই ব্রিটিশ আমল থেকে এ দেশে বাস করছে। তারা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিল। সেই চা শ্রমিক রা আজও অবহেলিত । বর্তমান শ্রমিক বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে দাবী জানাচ্ছি এই অবহেলিত চা শ্রমিকদের বাসস্থানের জায়গাটুকু যাতে তাদের নিজের নামে করে দেওয়া হয়। যাতে বাগান কর্তৃপক্ষ তাদের যখন তখন তাদের ভুমি থেকে উচ্ছেদ করতে না পারে।
বাগানের হাসপাতালে ভাল চিকিৎসার অভাবে অনেকেই ভাল করে চিকিৎসা নিতে পারছেন না। বাগানে যে কটা ছোট ছোট হাসপাতাল রয়েছে তাতে পর্যাপ্ত পরিমানে ঔষধ ও ডাক্তার না থাকায় চিকিৎসার জন্য রোগমুক্তি হতে পারছেন না। অকালে প্রান দিচ্ছেন অনেকে। তাছাড়া বাগানের কিছু কিছু ছেলে মেয়েরা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলেও চাকুরী ক্ষেত্রে বড় কোন পদ পাচ্ছে না তারা । যারাই বাগানে কাজ করে হয় শ্রমিক না হয় নিম্ন কোন পদে।
চা শ্রমিকরা এ দেশের বৃহত্তর চা শিল্প উন্নয়নে ভুমিকা রেখে দেশের অর্থনৈতিক চাকা মজবুত করছে। যাদের শ্রমে অর্জিত হচ্ছে হাজার কোটি বৈদশিক মুদ্রা তাদের অবহেলিত না রেখে তাদের অধিকার বাস্তবায়ন করা হোক এমনটাই প্রত্যাশা করছেন দেশের চা শ্রমিক নেতারা।