কোন্দলে সিলেট বিএনপি : মেয়র পদে ৫ নেতার স্নায়ুযুদ্ধ !
প্রকাশিত হয়েছে : ২৯ এপ্রিল ২০১৭, ৬:৩৫ অপরাহ্ণ
বিশেষ প্রতিনিধি:
সিলেটে বিএনপির নেতাদের মধ্যে চলছে চরম স্নায়ুযুদ্ধ। দলের ভেতর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও সমন্বয়হীনতার জর্জরিত সিলেট বিএনপি। আর নির্বাচনকেন্দ্রিক মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়ার কোন্দল দলটিতে নতুন নয়। আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন ঘিরে দলের শীর্ষ নেতাদের মাঝে এখনই শুরু হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধ। মেয়র পদে পাঁচজন মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় এ স্নায়ুযুদ্ধ বেশি দিন গোপন থাকেনি। বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর চেয়ারে বসতে আগ্রহী আরো চার নেতার নাম জানা গেছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বরাবরই সব দলের প্রার্থীর জন্য ফ্যাক্টর ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশন মেয়র হিসেবে কামরানকেই বেছে নিয়েছিলেন সিলেট মহানগরীর মানুষ। সর্বশেষ ২০১৩ সালের সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে কামরানকে পরাজিত করে নগরপিতার আসনে আসীন হন বিএনপির শীর্ষ নেতা আরিফুল হক চৌধুরী। কামরান অনুসারীরা মনে করেন, ওই সময় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ ভেতরে ভেতরে বিরোধিতা করে দলীয় প্রার্থীকে পরাজিত করে। তাঁরা কামরানকে ঠেকাতে আরিফুল হকের টেলিভিশন প্রতীককেই বেছে নেন।
এদিকে, বর্তমান বিএনপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে সরকারের সাথে আঁতাতের অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন কারণে সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-১ রেজাউল হাসান কয়েস লোদী সবসময় আলোচনায় ছিলেন। দলের একাধিক নেতা অভিযোগ করে বলেন, কয়েস লোদী শহিদমিনারে হামলার ঘটনায় চার্জশিটভুক্ত আসামি হলেও তাঁকে বরখাস্ত করা হয়নি। কিন্তু অন্য একটি মামলায় চার্জশিট হওয়ার সাথে সাথেই বিএনপি নেতা কাউন্সিলর ফরহাদ শামীম ও দিনার খান হাসুকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। মেয়র আরিফুল হকের সভাপতিত্বে প্যানেল চেয়ারম্যান-১ থেকে কয়েস লোদীকে অব্যাহতি দিতে কাউন্সিলররা অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেন। আইনি লড়াইয়ে প্যানেল চেয়ারম্যান-১-এর দায়িত্ব পেলেও ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পাননি তিনি। অভিযোগ রয়েছে, সরকার সমর্থক শীর্ষ নেতাদের সাথে ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসা, ক্লিনিক ব্যবসা, ভূমি ব্যবসাসহ একাধিক ব্যবসায় কয়েস লোদী জড়িত রয়েছেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ‘গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন চেয়ে ছিলাম। কিন্তু পাইনি। এবার দল এবং নেত্রী আমাকে নিরাশ করবেন না বলে আমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘নগরবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীর প্রেরণায় আমি মেয়র পদে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন চাইব।’
মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘১৯৭৮ সাল থেকে এই দলের সাথে সম্পৃক্ত। ১৯৯৫ সালে বিএনপির প্রথম মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করি। তিনি বলেন, আমি এই নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা। দলের স্বার্থ চিন্তা করে আমি অনেক ছাড় দিয়েছি। কখনই নিজের স্বার্থকে বড় করে দেখিনি। যদি দলের স্বার্থ না বুঝতাম, তাহলে ছাড় দিতাম না। তিনি বলেন, মেয়র পদে দলীয় মনোননের ক্ষেত্রে আমিই সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার দাবিদার।’ দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই নির্বাচন করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মনোনয়ন চাইব কিনা তা সময়ই বলে দেবে।’
বিএনপির সহসভাপতি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী জানান, ‘আমি তিনবারের নির্বাচিত কাউন্সিলর এবং সিসিকের প্যানেল মেয়র-১। জনগণের সাথে আমার আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়েছে। তাই তিনি মেয়র পদে মনোনয়ন চাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়।’ কয়েস লোদী জানান, দল মনোনয়ন দিলে অবশ্যই মেয়র পদে নির্বাচন করব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাথে আমার আঁতাত থাকলে আমি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব পেতাম। একাধিক মামলার আসামি হতাম না।’
২০১৩ সালের নির্বাচনে প্রথম বারের মতো বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী সিসিকের মেয়র নির্বাচিত হন। এ সময় দলের একটি অংশ তাঁর সাথে ছিল না। হেফাজতে ইসলামের কাঁধে ভর করে দলের বিশাল একটি অংশকে নিয়ে মাঠ চষে আরিফ বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন। বলা যায়, আওয়ামী লীগ নেতা বদর উদ্দিন আহমদের দীর্ঘদিনের সিংহাসন কেড়ে নেন আরিফ। কিন্তু খুব বেশি দিন মেয়রের চেয়ার স্থায়ী ছিল না আরিফের ভাগ্যে। মামলার জটিলতায় নির্বাচিত হওয়ার ৬ মাস পর কারাগারে যেতে হয় তাঁকে। আইনি লড়াই করে কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে সম্প্রতি নানা সংশয় ও শঙ্কা নিয়ে আবারো নগরপিতার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। তবে মেয়র পদে নির্বাচন নিয়ে গুঞ্জন এখনো শেষ হয়নি। ২০১৩ সালে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরিফ। এ সময় বিএনপির দলীয় মনোনয়ন চান মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী ও বর্তমান সভাপতি নাসিম হোসাইন। কিন্তু তাঁরা মনোনয়ন পাননি। আরিফকেই বিএনপি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে।
দলীয় সূত্র জানায়, এক বছর পর ফের অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিসিক নির্বাচন। এ নির্বাচনে বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরীর পাশাপাশি আরো তিন নেতা দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। তাঁদের বক্তব্য অনেকটাই স্পষ্ট। জানিয়েছেন, রাজনীতির মূল লক্ষ্য জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের পাশে থেকে সেবা করা। তাই মনোনয়ন প্রত্যাশা করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিএনপি মনোনয়ন দিলে তারা প্রত্যাশীত ফলাফল দিতে প্রস্তুত রয়েছেন। তাঁদের মতে, রাজনীতি করে একজন জনপ্রতিনিধির তুলনায় সাধারণ মানুষের সাথে তাঁদের সম্পর্ক কোনো অংশেই কম নয়।
দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, আগামী সিসিক নির্বাচনে মনোনয়ন চাইবেন, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী এবং মহানগর বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম এবং মহানগর বিএনপির সহসভাপতি কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।