সুনামগঞ্জে এ কোন অভিশাপ : তলিয়ে গেলো জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত বড় হাওরটিও
প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ এপ্রিল ২০১৭, ১:৫৬ অপরাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
সুনামগঞ্জের দিরাই-জামালগঞ্জ উপজেলার পাকনার হাওরের বাঁধ ভেঙে ১০ হাজার হেক্টর জমির বোরো ফসল তলিয়ে গেছে। এটি ছিল জেলার সর্বশেষ সুরক্ষিত বড় হাওর।
সোমবার (২৪ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৫টায় দিরাই উপজেলার উড়ারকান্দি নামক স্থানের বাঁধ ভেঙে তলিয়ে যায় সর্বশেষ হাওরটিও।
এর আগে শনিবার রাতে বাঁধ ভেঙে তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওরের প্রায় ১৩ হাজার হেক্টর বোরো জমির ফসল ডুবে যায়। জেলার বড় এই দুটি হাওর ডুবে যাওয়ায় এলাকাবাসী চরম অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হলেন। আর পাকনার হাওর ডুবার সাথে সাথে প্রায় শতভাগ বোরো ফসল তলিয়ে গেছে।
পাকনার হাওরে প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। জামালগঞ্জ উপজেলার সদর, ভীমখালী ও ফেনারবাক ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের মানুষের জমি আছে এই হাওরে। ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে হাওরে বাঁধগুলো ঝুঁকির মুখে পড়লে স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ রক্ষার কাজে যোগ দেন। উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রয়োজনীয় বাঁশ, বস্তা ও চাটাই দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। বাঁধে দিনরাত কাজ করেন তাঁরা। ব্যবস্থা করা হয় বাঁধ পাহারার। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।
জামালগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রসূন কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘হাওরটি রক্ষায় এলাকার মানুষ এত শ্রম দিয়েছেন, কষ্ট করেছেন, সেটি ভাষায় প্রকাশ করার নয়। কিন্তু সবার চেষ্টা, শ্রম ব্যর্থ করে দিয়ে এখন হাওরটি তলিয়ে যাচ্ছে। এই হাওরে প্রায় আট হাজার হেক্টর জমি আছে। হাওরে যেভাবে পানি ঢুকছে, এতে মনে হয় ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সব ধান তলিয়ে যাবে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, সুনামগঞ্জে ইতিমধ্যে ছোট-বড় ১৪২টি হাওরের ফসলহানি হয়েছে। এতে তলিয়ে গেছে প্রায় দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই হাওর আমাদের শেষ ভরসা ছিল। গতকাল রাত ১২টা পর্যন্ত স্থানীয় কৃষক, এলাকাবাসী, ইউএনওসহ কয়েকশ মানুষ ছিল। প্রবল বৃষ্টি থাকায় সকালে আবার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই খবর এল বাঁধ ভেঙে গেছে। প্রবল পানির চাপে বাঁধ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়েছিল।’