লন্ডন অফিসঃ ব্রিটেনের নির্বাচনে সবচেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি আসনের জন্য লড়াই করতে হবে টিউলিপ সিদ্দিককে। প্রথম সেই কঠিন লড়াইয়ে বিজয়ের হাসি হেসেছিলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনী টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। গত নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে টিউলিপ ২৩ হাজার ৯৭৭ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী সায়মন মার্কাস পেয়েছিলেন ২২ হাজার ৮৩৯ ভোট। ২৩ বছর ধরে লেবার পার্টির দখলে থাকা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনটি ধরে রাখা টিউলিপের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ ছিল। কারণ কনজারভেটিভ পার্টি এই আসনটিকে ‘টার্গেট সিট’ বানিয়েছিল। এবারো তারা মাঠে নামবে শক্ত হয়ে।
লন্ডনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ১০টি আসনের শীর্ষে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন। এ কারণে আসনটির প্রতি গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি থাকবে ভিন্ন। কিন্তু জয়ের ব্যাপারে এবারো শতভাগ আশাবাদী টিউলিপ সিদ্দিক ও লেবার পার্টির সমর্থকরা।
টিউলিপ এমন এক পরিবারের সদস্য যে পরিবারটির বেশির ভাগ সদস্যকে ৪০ বছর আগে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে তার মায়ের বাড়িতে সেনারা হানা দিয়ে খুন করে সবাইকে। তাদের টার্গেট ছিল টিউলিপের নানা শেখ মুজিবুর রহমান, দেশটির অবিসংবাদিত নেতা। তাকে সর্বাংশে নির্মূল করার চেষ্টায় সেনারা তার তিন ছেলেকেও গুলি করে হত্যা করে। কিন্তু তার দুই কন্যা জার্মানিতে থাকায় তারা প্রাণে বেঁচে যান। তারা ঘুম থেকে জেগে শুনতে পান বাংলাদেশে সেনাঅভ্যুত্থানের সেই খবর।
অনাথ দুই বোন নিজেদের গড়ে তোলেন একেবারে আলাদা ধাঁচে। বড় বোন শেখ হাসিনা (টিউলিপের খালা) বাংলাদেশে ফিরে যান তার বাবার অসমাপ্ত কাজ এগিয়ে নিতে। এখন তিনি দেশটির প্রধানমন্ত্রী । আর সে সময়ের কিশোরী রেহানা উত্তর লন্ডনে নিভৃতে শুরু করেন এক নতুন জীবন। রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার পর বিয়ে করেন এবং ১৯৮২ সালে তার গর্ভজাত কন্যা সন্তানটিই হ্যাম্পস্টিড এবং কিলবার্নের লেবার পার্টির এমপি, নাম তার টিউলিপ সিদ্দিক।
বড় এক ভাই ও ছোট এক বোন নিয়ে টিউলিপের পরিবার। টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, নিজের পরিবারের লোকজনকে হারিয়ে আমার মা আমাদের নিয়ে ভীষণ উদ্বিগ্ন। তাদের খালা শেখ হাসিনা ১৯ বার হত্যাচেষ্টা থেকে প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি এখনো সারাক্ষণ খোঁজখবর নেন আমি কোথায় আছি, কী করছি। আমার মনে হয় না রাজনীতিতে আমার জড়ানোর ব্যাপারে তিনি খুব সন্তুষ্ট, কারণ এই রাজনীতি তার জীবনের একটা বড় অংশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। ব্রিটেনের রাজনীতি সে রকম নয়, এটা তাকে বুঝাতে আমার অনেক সময় লেগেছে। এটা এখানে বিরল ঘটনা- কেউ এসে আপনাকে ঘরে ঢুকে খুন করে চলে যাবে।
তবু ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনের মান অনুযায়ী, ৩২ বছর বয়সী টিউলিপ সিদ্দিক ভয়ঙ্কর এক লড়াইয়ে অবতীর্ণ। ৭ মে ২০১৫ সালে মাত্র এক হাজারের কিছু বেশী ভোট পেয়ে টিউলিপ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১০ সালে গেন্ডা জ্যাকসন তার প্রতিদ্বন্ধি কনজারভেটিভ দলের প্রার্থীর চেয়ে মাত্র ৪২ ভোট বেশি পেয়ে ১৭ হাজার ৩৩২ ভোটে লেবার পার্টির হয়ে এই আসনটি জিতেছিলেন। এটা ছিল ব্রিটেনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ প্রতিদ্বন্ধিতা এবং ত্রিমুখী হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আসন (লিবারেল ডেমোক্রেট দলের প্রার্থী ছিলেন সাবেক অস্কার বিজয়ী অভিনেতা জেসন, তিনি জ্যাকসনের চেয়ে মাত্র ৮৪১ ভোটে পিছিয়ে ছিলেন)।
রাজনৈতিকভাবে ব্যাপক তোলপাড় করা আর বিতর্কপূর্ণ এমন একটি আসনে টিউলিপ সিদ্দিক টানা ২য় বার জেতার জন্য কোনো সুযোগই হাতছাড়া করবেন না। ইতিমধ্যেই নির্বাচনী কাজে নেমে পরেছেন তিনি ও তার পক্ষের সমর্থকরা।
চলনে-বলনে টিউলিপ সিদ্দিক চিরাচরিত উত্তর লন্ডনের অধিবাসীদের মতো নন। তিনি খুশি হন ওয়েস্ট মিনিস্টারের বৈচিত্র্যময় নাজুক অবস্থার উন্নতিতে; লিঙ্গ, ধর্ম (সংস্কৃতিগতভাবে মুসলিম) বা নৃতাত্তিক পরিচয়ে পরিচিত হতে অস্বস্তিবোধ করেন তিনি। তিনি বলেন, রাজনীতির চেহারা পাল্টাব বলে আমি লেবার পার্টিতে যোগ দেইনি, আমি যোগ দিয়েছি আমার মূল্যবোধের পক্ষে কথা বলতে। আগামী ৮ জুন অনুষ্টিত ব্রিটেনের মধ্যবর্তী এ নির্বাচনে টিউলিপ আবারো নির্বাচিত হবেন সেই প্রত্যাশা প্রতিটা বাংলাদেশীর।