‘কমছে পানি মরছে মাছ ত্রান মন্ত্রীর আশ্বাস’
প্রকাশিত হয়েছে : ২০ এপ্রিল ২০১৭, ৪:৪৬ অপরাহ্ণ
শামীম আহমদ:
বালাগঞ্জে অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওর পরিদর্শনে এসে সময় স্বপ্লতার কারনে বক্তৃতা দিয়েই চলে গেলেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগের দিন থেকে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্থ হাওরগুলোর ক্ষয়ক্ষতির চিত্র সরজমিন ঘুরে দেখবেন এবং কৃষকদের সাথে কথা বলেবেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে বালাগঞ্জে মন্ত্রীর আগমন ঘটলেও হাওর পরিদর্শন করেননি। মন্ত্রীর আগমনের খবরে কৃষকরা আশায় বুক বাধলেও হাওর পরিদর্শন না করে চলে যাওয়ায় তারা হতাশ হয়েছেন। উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভায় বক্তৃতাকালে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এমপি বীর বিক্রম বলেন, অকাল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারি ভাবে যথাযথ সহায়তা প্রদান করা হবে। এ ক্ষেত্রে চিন্তার কোনো কারন নাই, আপনারা যা চাইবেন তা পাবেন। পরবর্তী বুরো ফসল কাটার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়ার কথা উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সিলেট বিভাগ সহ আরো দু’একটি জেলা বন্যা আক্রান্ত হয়ে ফসল হানি হয়েছে। সারা দেশে আশাতিত ফসল উৎপাদন হয়েছে। এতে সরকারের পক্ষে এ দূর্যোগ কাটিয়ে উঠা কোনো ব্যাপারই না। আপনারা আওয়ামীলীগ সরকারের ওপর ভরসা রাখুন এই সরকারের আমলে কোনো মানুষ না খেয়ে মরবে না। মন্ত্রীকে বন্যা কবলিত এলাকার পরিস্থিতি অবগত করে ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারী সহযোগীতা প্রদানের আহবান জানিয়ে বক্তৃতা করেন, সিলেট-২ আসনের এমপি ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী এহিয়া, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, ত্রান মন্ত্রনালয়ের সচিব শাহ্ কামাল আহমদ, উপজেলা চেয়ারম্যান আবদাল মিয়া, ইউএনও প্রদীপ সিংহ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাকুর রহমান মফুর, উপজেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী ইউপি চেয়ারম্যান আনহার মিয়া, সাবেক চেয়ারম্যান এমএ মতিন ও সাংবাদিক রজত দাস ভুলন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সিলেটের জেলা প্রশাসক রাহাত খান, পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ও ওসমানীনগরের ইউএনও মনিরুজ্জামান। এদিকে বালাগঞ্জের হাওরগুলোতে গত এক সপ্তাহ ধরে মাছের মোড়ক দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন প্রজাতির ছোটবড় মাছ গুলো মরে পানিতে ভেসে উঠেছে। চৈত্রের শেষ দিকে অতি বৃষ্টিতে অকাল বন্যায় হাওর গুলোর কাঁচা বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এখন হাওরগুলোতে পানি কমতে শুরু করলেও পানিতে বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টি হয়ে কালচে রং ধারণ করেছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া ধান পচে বাতাসে এক ধরনের বিকট দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়ায় মাছ মরে যাচ্ছে। ধান এবং মাছ পচা গন্ধ যেন আরো প্রকট হচ্ছে। মানুষের মধ্যে পানি বাহিত রোগ সহ বিভিন্ন রোগের পাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। বিষাক্ত পানি শরীরে লাগলেই চুলকানি শুরু হয়ে যায়। ফসলহানির পর এবার মাছে মোড়ক দেখে মৎসজীবিরা চোখে শর্ষে ফুল দেখছেন। পানি বিশুদ্ধ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বুধবার উপজেলার গুরাপুর হাওরে চুন ছিটানো হয়। এবার সাড়ে সাত হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছিল যার শতভাগই পানিতে তলিয়ে গেছে। কিন্তু বালাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মালক জানিয়েছেন ২৭শ ৭৫ হেক্টর বোরো ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিয়ে মাঠের চিত্র এবং কৃষি কর্মকর্তার পরিসংখ্যান নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। অনেকেই বলছেন ক্ষয়ক্ষতির পরিসংখ্যান নিয়ে কৃষি কর্মকর্তার এমন লুকোচুরির রহস্য কি। উপজেলা লা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা নির্মল চন্দ্র বনিক জানান, পানিতে ফসল পচে যাওয়ায় এমোনিয়া গ্যাস সৃষ্টি হওয়ায় মাছগুলো গ্যাসের বিষক্রীয়ায় আক্রান্ত হয়ে মরে যাচ্ছে। ইুতমধ্যে গুরাপুর হাওরে ২০ হাজার টাকার চুন ছিটানো হয়েছে। বালাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রদীপ সিংহ জানান, রোগ জীবানু থেকে মৎস্য সম্পদ সংরক্ষনে প্রশাসনের উদ্যোগে নদ-নদী, জলায়শ ও হাওরের বিলগুলো রক্ষা করতে চুন ছিটানো হচ্ছে তা অব্যাহত থাকবে।