সকল জনপ্রতিনিধিরা যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সেখানে দুর্নীতি হয় কী করে : রাষ্ট্রপতি
প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০১৭, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত মত বিনিময় সভায় জেলার সকল সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র-সহ জনপ্রতিনিধিরা হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্ছার বক্তব্য দিয়ে জড়িতদের শাস্তি দাবি করলে রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, ‘সকলেই (জনপ্রতিনিধি) যেখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে, সেখানে দুর্নীতি হয় কী করে।’
মত বিনিময় সভায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের নদী আর হাওরগুলো ভরাট হয়ে গেছে। এগুলোকে খনন করে পানির ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করে দীর্ঘ মেয়াদে হাওরের একমাত্র বোরো ফসলকে আগাম বন্যার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।
তিনি বলেন, পাহাড়ি নদী থেকে শুরু করে ভৈরব বাজার পর্যন্ত ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি। হাওরের মাটির বাঁধের পরিবর্তে পাকা ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ করা হলে বোরো ফসল আরও সুরক্ষিত হবে। পাশাপাশি হাওরে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বিশেষ শিল্পাঞ্চল স্থাপন করা দরকার। না হলে ফসলহারা মানুষ শ্রোতের মতো ঢাকার দিকে প্রবাহিত হবে। মানুষের সেই চাপ সহ্য করার ক্ষমতা যে ঢাকা ইতিমধ্যে হারিয়ে ফেলেছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বৈশাখে ধান তুলার সময় আসলে সুনামগঞ্জে যে কান্না শুরু সেটা কিশোরগঞ্জে গিয়ে থামে। একজন কৃষকের সন্তান হিসেবে এই কান্না আমার হৃদয়কে স্পর্শ করে বলেই আপনাদের দাওয়াতের অপেক্ষা না করে ফসলহারা মানুষের কষ্ট দেখতে এখানে ছুটে এসেছি। যেভাবে ১৯৭১ সালে দেশকে স্বাধীন করার প্রত্যয় নিয়ে এই সুনামগঞ্জে ছুটে এসেছিলাম।
অকাল বন্যায় সুনামগঞ্জে হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে বিস্তৃর্ণ হাওরের বোরো ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের জন্য দুই দিনের সফরে এসে এক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন রাষ্ট্রপতি।
তাঁর আগমন উপলক্ষে সোমবার রাত ৮টায় সুনামগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির হাছন রাজা অডিটোরিয়ামে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
রাষ্ট্রপতি তাঁর স্বভাবসুলভ রসাত্মক ভঙ্গিতে বলেন, আমি আজীবন রাজনীতি করে আসলেও ডেপুটি স্পিকার, স্পিকারের মতো নিরপেক্ষ পদগুলো আমার ভাগ্যে জুটেছে। আর এখন তো রাষ্ট্রপতির মতো মহানিরপেক্ষ জায়গায় আছি। তাই আমি সরকারের কেউ না। এই দুর্যোগের সময় আপনাদের জন্য কতটুকু কি করতে পারবো জানা নেই, তবে হাওরের মানুষের দুর্দশা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী-সহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো সঙ্গে কথা বলবো, যাতে তারা মানুষের দুর্দশা দূর করতে পারেন। ফসলহানির পর আগামী বোরো ফসল তোলার আগ পর্যন্ত সরকারের সকল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করে সেটা অব্যাহত রাখার সুপারিশ করবো।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মত বিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন, অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নান, মুহিবুর রহমান মানিক এমপি, জয়া সেনগুপ্তা এমপি, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ এমপি, রেজওয়ানুল আহমদ তৌফিক এমপি, শামছুন্নাহার বেগম শাহানা এমপি, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নূরুল হুদা মুকুট, পুলিশ সুপার বরকত উল্লাহ খাঁন, সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আয়ুব বখত জগলুল, সাবেক এমপি আব্দুল মজিদ, দোয়ারাবাজার উপজেলা চেয়ারম্যান ইদ্রিছ আলী বীর প্রতীক, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হাজি আবুল কালাম, সাংবাদিক কামরুজ্জামান চৌধুরী সাফি, বিজন সেন রায়, পঙ্কজ কান্তি দে প্রমুখ।
দিনে হেলিকপ্টারে করে আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শন করে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ। বিকালে জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা হাওরের ফসলহানি নিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আলোচনা করেন। রাতে সার্কিট হাউসে সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন রাষ্ট্রপতি। সুনামগঞ্জে রাত্রিযাপন শেষে মঙ্গলবার তাঁর ঢাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে।
উল্লেখ্য, হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে আগাম বন্যায় হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে আবাদকৃত ফসলের বেশিরভাগ তলিয়ে যায়। জেলায় এবার সোয়া দুই লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়।