ক্বাবা শরীফ অবমাননাকারীর ফাঁসির দাবীতে উত্তাল নবীগঞ্জ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৩:২৫ পূর্বাহ্ণ
ছনি চৌধুরী, নবীগঞ্জ সংবাদদাতা:
পবিত্র ক্বাবা শরীফ অবমাননা করায় ফাঁসির দাবীতে নবীগঞ্জের ইনাতগঞ্জে দফায় দফায় বিক্ষোভ, পুলিশের সাথে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও অবমাননাকারীসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়ি ঘরে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করেছে হাজারো উত্তেজিত জনতা। এ নিয়ে এলাকায় তুমুল উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জানা যায়, আজ সোমবার সকাল ১০টার দিকে আপামর মুসলিম জনতার উদ্যোগে উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারে মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সকাল ৯টা হতেই বিভিন্ন এলাকার গ্রাম অঞ্চল থেকে খন্ড খন্ড মিছিলে মিছিলে সবাই জড়ো হতে শুরু করেন। সকাল ১০টা হতেই কাজীগঞ্জ বাজারে জনসমুদ্রে পরিনত হয়ে যায়।
ফাসিঁর দাবীতে মানববন্ধনে সকল শ্রেণীর মুসলিম জনতা অংশ গ্রহন করেন। বাজারের পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু করে দীর্ঘ আধা কিঃ মিঃ পূর্বে লম্বা লাইনের একটি মানববন্ধন হয়। কেউ কেউ অপরাধী রজত রায়ের কুশপুত্তলিকা তৈরী করে ফাসির রশি টানিয়ে নিয়ে আসে মানববন্ধনে। মানববন্ধন শেষে উপস্থিত জনতা ইনাতগঞ্জ বাজারে মিছিল নিয়ে চলে গেলে সাথে সাথে ইনাতগঞ্জ বাজার সহ আশে পাশের গ্রাম থেকে খন্ড খন্ড মিছিল এসে ইনাতগঞ্জ ফুটবল মাঠ কানায় কানায় ভরে যায়। সেখানেই উত্তেজিত জনতা মিছিল নিয়ে রজত রায়ের বাড়ি ঘেরাও করেন। এতে এক পর্যায়ে মিছিলটি মধ্যসমেত গ্রামস্থ রজত রায়ের বাড়ীর দিকে গিয়ে ওই গ্রামের ৪টি বাড়িতে ঢিল ছুড়তে থাকেন। এতে অভিজিৎ রায়, সঞ্জয় রায়, শুভাষ রায়, গোবিন্দ রায় এর বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এ উত্তাল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন পুলিশ ও স্থানীয় জনতা। বিক্ষোব্ধ জনতা মিছিল নিয়ে ফেরার পথে বাজারের দিকে আসার মাত্রই নারায়ন নামের এক স্বর্নকার ঐ মিছিলটি লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করার দৃশ্য দেখলে ফের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। এতে এক পর্যায়ে পুলিশের সাথেও বিক্ষোভ কারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে প্রতিবাদকারীরা স্ব-জোরে উচ্চারণ করে বলেন, র্যাব, পুলিশ সহ প্রশাসনের সকল শক্তি নিয়েও যদি কেউ এই অপরাধকে ভিন্ন খ্যাতে প্রবাহিত করতে চান তাহলে জিহাদ ঘোষনা করবো আমরা। মুসলমান হিসাবে আমাদের একটাই দাবী, এই কুলাঙ্গারের ফাঁসি চাই, দিতে হবে। এছাড়াও রজতের ফাঁসির দাবীতে নবীগঞ্জ উপজেলা সদর, কাজির বাজার, বড় ভাকৈরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে।
এসময় বিক্ষোভকারীরা আরো বলেন, প্রচলিত আইনে দোষী রজতের শাস্তি না দিয়ে তাকে বিশেষ ট্রাইবুনাল গঠন করে তার বিচার করতে হবে। যদি তা সম্ভব না হয় আমরা আমাদের ইসলাম ধর্ম রক্ষা করতে যেকোন অবস্থান যেকোন সময় নিতে বাধ্য!
এ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটের উচ্চ পর্যায় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ। এ নিয়ে গতকাল দুপুর ২টার দিকে বিক্ষোব্ধ জনতাকে সাথে নিয়ে স্থানীয় হাই স্কুল মাঠে প্রশাসনের কর্মকর্তারা পরিস্থিতি শান্ত করার লক্ষ্যে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন।
এতে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন, সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম, পুলিশ সুপার জয় দেব কুমার ভদ্র, বিজিবির কর্নেল সাজ্জাদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উপ-সচিব) সফিউল আলম, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার, সহকারী কমিশনার ভূমি জীতেন্দ্র কুমার নাথ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, থানার অফিসার ইনর্চাজ এস.এম আতাউর রহমান, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, বজলুর রশীদ, হাজী মুহিবুর রহমান হারুন, সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ আহমেদ জিহাদী, আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান প্রমুখ। এসময় বিক্ষোভকারীরা মিছিলে ঢিল নিক্ষেপকারী নারায়নের গ্রেফতারের দাবী জানান। এতে উপস্থিত প্রশাসনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, অপরাধী যে কেউই হোক না কেন সে কিন্তু আইনের উর্ধ্বে নয়! ঘটনার পরপরই দোষী রজত রায়কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনের ধারাই তার সর্বোচ্চ শাস্তি হবে। এ ব্যাপারে তিনি বিক্ষোভকারীদের আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, অপরাধ করেছে একজন তার শাস্তি হবে নিশ্চিত, কিন্তু আপনারা কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে অপরাধী হবেন না। এদিকে, ফেইসবুকে পোষ্টের পর জনতা বিক্ষোভ মিছিল করার খবর পেয়ে রজত রায়কে গত রবিবার বিকেলে গ্রেফতার করে পুলিশ।
অপর দিকে ইনাতগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ইনাতগঞ্জ বাজার ও আশপাশ এলাকায় দুই প্লাটুন বিজিবি, দুই প্লাটুন র্যাব, দশ প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তৎপর রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নজরুল ইসলাম বলেন, অপরাধীকে আমরা গ্রেফতার করেছি। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি। তাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে এবং আইনশৃংখলা বাহিনীও তৎপর রয়েছে।