বাংলাদেশসহ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য ভিসানীতি সহজ করার প্রস্তাব ব্রিটিশ এমপিদের
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২:৪৯ পূর্বাহ্ণ
লন্ডন অফিসঃ কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে সরকারকে তাগিদ দিয়েছেন ব্রিটিশ এমপিদের একটি দল। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ৪৫ জন এমপি হোম সেক্রেটারি অ্যাম্বার রাডের কাছে লেখা এক চিঠিতে প্রস্তাব করেছেন, যাতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য ভিসানীতি সহজ করা হয়। সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশগুলো নিয়ে গঠিত কমনওয়েলথ জোটে মোট ৫৩টি দেশ রয়েছে। এই জোটের নেতৃত্বে রয়েছে ব্রিটেন। বাংলাদেশও এর অন্যতম সদস্য। ফলে কমনওয়েলথ দেশগুলোর সাথে ব্রিটেনের সম্পর্ক উন্নয়নের যে কোনো চেষ্টা নি:সন্দেহে বাংলাদেশিদের জন্যও ইতিবাচক। দ্য টেলিগ্রাফ এক প্রতিবেদনে ওই চিঠির বিস্তারিত প্রকাশ করে।
১১ ফেব্রুয়ারি, শনিবার লেখা ওই চিঠিতে ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা বলেন, ব্রিটেন ইউরোপিয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে সদস্যপদ প্রত্যাহার করে নেয়ার পর কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোই হতে পারে যুক্তরাজ্যের বিকল্প সহযোগী। ব্যবসা বাণিজ্যের নতুন বাজার তৈরিসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ব্রিটেনের প্রভাব ধরে রাখার জন্য কমনওয়েলথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর সাথে ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভিসানীতি সহজ করা প্রাথমিক পদক্ষেপ হতে পারে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য ফার্স্টট্রেক ভিসা (দ্রুততম সময়ে ভিসা প্রদান) চালুর প্রস্তাব করেন তারা।
এতে বলা হয়, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের জন্য ভিসার শর্ত শিথিল করার মাধ্যমে বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে পারে যুক্তরাজ্য। ব্রেক্সিট পরবর্তী সময়ে কনমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর জন্য সহজ ও দ্রুত সময়ে ভিসা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। কমনওয়েলথভুক্ত দেশের শিক্ষার্থীরা যাতে সহজে যুক্তরাজ্যে এসে পড়াশুনা করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়ার আহবান জানান। এছাড়া যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিকরা যাতে দ্রুত অভিবাসন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারে সে উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব করেন তারা। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি এসব প্রস্তাবের ওপর হাউজ অব কমন্সে বিতর্ক হওয়ার কথা রয়েছে।
গত শতাব্দির দুটি মহাযুদ্ধে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর ভূমিকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাজ্যে অস্তিত্ব যখন হুমকিতে পড়েছিল, তখন কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলো যুক্তরাজ্যের পাশে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাজ্য যতই ইউরোপের দিকে ঝুঁকেছে, ততই কমনওয়েলথ বন্ধুদের দূরে ঠেলে দিয়েছে।
কনজারভেটিভ দলীয় এমপি জ্যাক বেরির নেতৃত্বে লেখা ওই চিঠিতে কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের যুক্তরাজ্যের বিমানবন্দরে দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে রাখারও সমালোচনা করা হয়। তারা বলেন, ইইউভুক্ত দেশের নাগরিকরা ব্রিটিশ নাগরিকদের লাইন দিয়ে দ্রুত অভিভাসন পার হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কমনওয়েলথভুক্ত দেশের নাগরিকদের আলাদা লাইনে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়। এই পরিস্থিতি বলে দেয়, কমনওয়েলথ দেশগুলোর সাথে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের কতটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে।
গত বছর অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইইউ ত্যাগের পক্ষে মত দেয়। আগামী মার্চ থেকে দুই বছরের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করার প্রক্রিয়া শেষ হবে বলে ধারণা। ইইউ ত্যাগের পর কমনওয়েলথ জোটকে কীভাবে কাজে লাগানো যায় তা নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। ৯ ও ১০ মার্চ কমনওয়েলথভুক্ত দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীদের নিয়ে লন্ডনে এক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। যা ব্রিটিশ সাবেক উপনিবেশগুলোর জোট কমনওয়েলথের ইতিহাসে এই প্রথম।
চিঠিতে স্বাক্ষরকারী এমপিদের মধ্যে সাবেক ফরেন অফিস মিনিস্টার স্যার হেনরি বেলিংহাম, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী টিম লাউটন এবং সাবেক জ্বালানিমন্ত্রী লর্ড লাউটনও রয়েছেন। লাউটন বর্তমানে কমনওয়েলথ এন্টারপ্রাইজ অ্যান্ড ইনভেস্টম্যান্ট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। যার নেতৃত্বে মার্চে কমনওয়েলথভুক্ত দেশের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
মার্চে অনুষ্ঠেয় সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রস্তাবগুলো বিবেচনার আহবান জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, এই সম্মেলনের লক্ষ্য হওয়া উচিত কমনওয়েলথ দেশগুলোর সাথে বাণিজ্য ও বন্ধুত্বকে নবায়ন করা। তাঁরা হোম সেক্রেটারির উদ্দেশে বলেন, কমনওয়েলথ বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের এই ইতিবাচক সুযোগকে কাজে লাগানো না যায় তাহলে সেটি হবে খুব লজ্জাজনক।
ভ্রমণ ভিসা সহজ করার আহবান জানিয়ে তারা বলেন, ২০১৫ সালে কমনওয়েলথভুক্ত তিন দেশ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা এবং ভারত থেকেই ২২ লাখ টুরিস্ট যুক্তরাজ্য ভ্রমণ করে। এরা ব্রিটেনে প্রায় ২ বিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে গেছেন।
চিঠির জবাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এক মূখপাত্র দ্য ইন্ডিপেনডেন্টকে বলেন, ইইউ ত্যাগের পর অভিবাসন নীতি কী হবে তা সরকারই ঠিক করবে। গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ অভিবাসন নিয়ন্ত্রণের বার্তাই দিয়েছে। যে বিষয়টি মাথায় রেখে সরকার গ্রহণযোগ্য একটি নীতি ঠিক করবে।