সিলেটে ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতায় চরম নিরাপত্তাহীন মুক্তিযোদ্ধা কন্যা
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:১২ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
সিলেটে ভূমিদস্যুদের অপতৎপরতায় চরম নিরাপত্তাহীন মরহুম এক বীর মুক্তিযোদ্ধার এক বিধবা মেয়ে। বসতভিটে থেকে তাড়িয়ে দিতে হুমকি-ধামকিসহ তার ও তার স্বজনদের উপর চালানো হচ্ছে রকমফের নিপীড়ন। বুধবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক জনাকীর্ন সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নিরাপত্তা বিধানে বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরের কামারখাল গ্রামের প্রবাসী হাজী আব্দুল হামিদ স্ত্রী, এক ছেলে ও ৬ মেয়ে নিয়ে স্থায়ীভাবে যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছিলেন। প্রথম স্ত্রীর অসুতস্থার কারণে তার সম্মতিক্রমে ২০১৫ সালের ২৭ মার্চ তিনি মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে নিজু আক্তারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। নিজু আক্তার সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার মকসুদপুর গ্রামের মরহুম মুক্তিযোদ্ধা আবুল বরকতের মেয়ে। নিজুর স্বামী প্রবাসী আব্দুল হামিদের গ্রামের বাড়িতে ১৮ কক্ষবিশিষ্ট দ্বিতল ভবন ও ২৪ থেকে ২৫ হাল ক্ষেতের ভূমিও রয়েছে। রয়েছে যুক্তরাজ্যে কয়েকটি রেষ্টুরেন্টসহ অনেক সহায় সম্পত্তি। তাই তিনি তার প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সম্মতিতে দ্বিতীয় স্ত্রী নিজু আক্তারকে সিলেট নগরীর পশ্চিম আখালিয়ার মাহমুদাবাদ এলাকাধীন তার এক ইউনিটের বাসা হাজী আব্দুল হামিদ ভবনে রেখে তার সাথে ঘরবাস করেন এবং বাসাটির দখল নিজুকে সমঝে দিয়ে ফের যুক্তরাজ্য চলে যান।
সেখানে গিয়ে হাজী আব্দুল হামিদ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে নিজু নিজের অর্থায়নে ওই বাসার দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণসহ যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন এবং কিছু অংশ ভাড়া দিয়ে এককভাবে ভোগদখল ও ভোগব্যবহার করতে থাকেন। এমতাবস্থায় ২০১৬ সালের ২৮ নভেম্বর তার স্বামী হাজী আব্দুল হামিদ যুক্তরাজ্যে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তিনি ২ স্ত্রী, ৬ মেয়ে ও এক ছেলে উত্তরাধিকারী রেখে যান। নিজুর বর্তমান আবাসস্থল হাজী আব্দুল হামিদ ভবন নিয়ে তার সাথে মরহুম স্বামী আব্দুল হামিদের যুক্তরাজ্যে থাকা প্রথম স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদেরও কোন বিরোধ নেই। এমতাবস্থায় মুক্তিযোদ্ধা কন্যা নিজুকে অসহায় পেয়ে তার স্বামীর উত্তরাধিকারী নয় এমন একদল ভূমিখেকোচক্র নগরীর আখালিয়াস্থ নিজু আক্তারের বাসা আব্দুল হামিদ ভবন জবরদখল করে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তারা নিজুর বাসা আব্দুল হামিদ ভবনে বারবার অনধিকার প্রবেশ করে তাকে বাসা ছেড়ে দিতে মানসিকভাবে নিপীড়নের পাশাপাশি নানাভাবে হুমকিধামকি দিয়ে চলেছে। ওই ভূমিদস্যুরা হচ্ছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার আমরিয়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আলেয়া বেগম, জগন্নাথপুর উপজেলার কামারখাল গ্রামের মৃত হাজী তারিফ উল্লার পুত্র আব্দুল হাসিম, জনৈকা ফাতেমা বেগম, শামসুদ্দীন এবং তাদের সহযোগী একদল লোক। তারা সকলেই বহিরাগত এবং কেউই মরহুম প্রবাসী হাজী আব্দুল হামিদের উত্তরাধিকারী নন।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর ও এ বছরের ৯ জানুয়ারি ভূমিদস্যু আলেয়া ও হাসিমরা নিজুর বাসায় হানা দিয়ে জোরপূর্বক তাকে তাড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। এ ঘটনায় মরহুম মুক্তিযোদ্ধা নিজু আক্তার গত ১০ জানুয়ারি জালালাবাদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন, যা থানার এসআই লোকমানের তদন্তে রয়েছে। থানায় সাধারণ ডায়েরি করেও নিরাপত্তা পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধা কন্যা নিজু আক্তার। গত ৯ ফেব্রুয়ারি আব্দুল হাসিম, আলেয়া, শাসুদ্দীনরা দলবল নিয়ে নিজুর বাসায় অনধিকার প্রবেশ করে তাকে বাসা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। অন্যথায় তাকে অপহরণ হত্যা ও লাশ গুম করে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। ভূমিদস্যু হাসিম ও আলেয়া চক্রের এহেন হুমকি-ধামকিতে মুক্তিযোদ্ধাকন্যা নিজু আক্তার স্বজনদের নিয়ে চরম নিরপত্তাহীনতায় ভোগছেন।
নিজু ও তার স্বজনরা তাদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নিজু আক্তারের মা নেহার বেগম, মুক্তিযোদ্ধা ওয়াছিব উল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদির, মুক্তিযোদ্ধা কুটু মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা মছদ্দর আলী, মুক্তিযোদ্ধা আমির আলী, মুক্তিযোদ্ধা সেলিম উল্লাহ, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর করিম, মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ নূর, মুক্তিযোদ্ধা নূর মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিস আলী, মুক্তিযোদ্ধা নূরুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা আশ্রব আলী প্রমুখ।