“হ্যাপী ভ্যালেনটাইনস ডে”
প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ৩:৪৪ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
আজ বিশ্ব ভালবাসা দিবস। শিশু- কিশোর, তরুন-তরুনী,প্রেমিক-প্রেমিকা, ভাই- বোন, স্বামী-স্ত্রী সকলেই অন্ততপক্ষে আজকের দিনের জন্য হলেও ভালবাসার বহি:প্রকাশ ঘটাবে। বিভিন্নভাবে শুভেচ্ছা জানাবে তার ভালবাসার মানুষটিকে। তাই এই সুযোগটিকে আমিও হাতছাড়া করতে চাই না। যদিও এই শুভেচ্ছা তাঁর কাছে পৌছাবে না।
আমার সমস্ত ভালবাসা আজ তাঁর জন্য। যার জন্ম না হলে আজ আমারও জন্ম হত না। আমি না খেলে সেও সারাদিন না খেয়ে থাকত। খাবার নিয়ে আমার পিছু পিছু ছুটত। আমার পছন্দ করা খাবার প্রায়ই সে রান্না করত। আমার ঘুম আসলে তবেই সে ঘুমুতে যেত। সকালে তাঁর ডাক না শুনলে আমার ঘুমই ভাঙত না। সে আমার সমস্ত প্রেরণার উৎস। আমার সুখ-দু:খের অংশিদার। আমার মা।
১৪ ফেব্রুয়ারি কিভাবে বিশ্ব ভালবাসা দিবস হিসেবে রুপ লাভ করল এ নিয়ে ইতিহাসে অনেক মতবেদ আছে। সবচেয়ে আলোচিত যে কাহিনীটি প্রচলিত আছে তা হলো- তৃতীয় শতাব্দীতে ক্লডিয়াস নামে এক সম্রাট শাসন করতেন রোম সম্রাজ্য। তিনি এশটি বিশাল সেনাবাহিনী গড়তে চাইলেন। কিন্তু বিনা ছুটিতে সেনাবাহিনীতে নাম লেখাতে রাজি হচ্ছিল না জনগণ। ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন রাজা ক্লডিয়াস। তিঁনি ভাবলেন প্রেম ভালবাসা, পরিবার-পরিজন না থাকলে মানুষ সেনাবাহিনীতে আসতে বাদ্য হবে। এই ভ্রান্ত ধারনা থেকে তিনি তার রাজ্যে প্রেম-ভালবাসা, বিয়ে নিষিদ্ধ করে দিলেন। সারা রাজ্যের প্রেমিক-প্রেমিকেরা এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের পাশে এসে দাঁড়ালেন সেন্ট ভ্যালেইনটাইন। কারাগারে নিক্ষেপ করা হল তাকে। প্রতিদিন অসংখ্য তরুন-তরুনী, প্রেমিক জুটি কারাগারে এসে ভিড় জমায়। সেন্ট ভ্যালেইনটাইনের জন্য উপহার সামগ্রী নিয়ে আসে এবং তার মুক্তির জন্য আন্দোলন করে। এরই মধ্যে এক কারারক্ষীর অন্ধ মেয়েটি প্রায়ই সাক্ষাত করত সেন্ট ভ্যালেইনটাইনের সঙ্গে। ঘন্টার পর ঘন্টা তারা গল্প করত। হঠাৎ করে ১৪ই ফেব্রুয়ারি তারিখে সেন্ট ভ্যালেইনটাইন রহস্যজনকভাবে কারা অভ্যন্তরে মারা যান। মৃত্যুর আগে তিনি অন্ধ মেয়েটিকে এশটি চিরকুট লিখে যান। তাতে লেখা ছিলো লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেনটাইন। ভ্যালেনটাইনের ভালোবাসার সেই অমর কাহিনীকে স্মরণ করে পোপ জুলিয়াস ৪৯৬ খ্রিস্টাব্দে ১৪ ফেব্রুয়ারি চালু করেন ভ্যালেনটাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস। সেই থেকে দেশে দেশে বিভিন্নভাবে পালন হয়ে আসছে ভ্যালেনটাইন ডে বা বিশ্ব ভালোবাসা দিবস।
বাংলাদেশ মানুষের হৃদয় সবসময়েই ভালবাসায় ভরপুর। তাদের কাছে এর জন্য বিশেষ কোন দিনের প্রয়োজন হয় না। তারপরও দিবসটি আসলে সবার হৃদয়েই একটু বেশি ভালবাসার জন্ম নেয়। এই দিন বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ধরনের পার্টি হয়ে থাকে। বিনিময় হয় চকলেট, কার্ডসহ নানান জিনিস। শিশুরাও অনেকেই তাদের বন্ধুদের সাথে কার্ড বিনিময় করে। অনেকেই বাবা-মাকে ঐ দিন বিভিন্ন ইপহার সামগ্রী দেয়। তরুন-তরুনীরা দিবসটি উৎযাপন করে তাদের নিজস্য আঙ্গীকে। তাদের উপহারের তালিকায় ক্যান্ডি, পারফিউম, গোলাপ থেকে শুরু করে থাকে ডায়মন্ডও। অনেক তরুন-তরুনীরা দিনটিকে শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনে করলেও আসলে ভালবাসা তো ভালবাসাই। সেটা হতে পারে বাবা-মার প্রতি সন্তানের ভালবাসা, স্বামী-স্ত্রীর প্রতি ভালবাসা, ছেলে-মেয়েদের জন্য বাবা-মায়ের ভালবাসা, ভাইয়ের জন্য বোনের এবং বোনের জন্য ভাইয়ের ভালবাসা, বন্ধুর জন্য বন্ধুর ভালবাসা। তবে সবচেয়ে সত্যি কথা হলো এই ভালবাসার জন্য সানুষের জীবন এত সুন্দর। তাই আজ প্রথমেই ভালবাসার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি আমার সবচেয়ে আপনজন, সবচেয়ে প্রিয় আমার বাবা-মাকে, তারপর আপনাদের সবাইকে।
লেখক: মিহির রঞ্জন তালুকদার
শিক্ষক,
বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ,সিলেট।