“বসন্ত ভাবনা”
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২:৫৯ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ:
কারো হৃদয় আজ ভালবাসায় আন্দোলিত করোক আর না করোক আজ বসন্তের প্রথম দিন। প্রকৃতি চলে তার নিজস্ব গতি ধারায়। তাতে কারো ভাল লাগুক আর নাইবা লাগুক। ঋতুচক্রের পালাবদলে কনকনে শীতের হিম বাহ ঠান্ডা অতিক্রম করার পরই আসে বসন্ত। যদিও বাংলাদেশ ছয় ঋতুর দেশ কিন্তু ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট এখন আর নেই। ঋতু তার আপন মহিমা হারিয়ে ফেলেছে বহুত আগেই। এখন শীতে আর অতিথি পাখি যেমন আসে না, তেমনী শীতের পিঠা-পুলির আমেজও নেই। তারপরও বসন্ত শব্দটি শুনলেই মানব হৃদয়ে এক অজানা অনুভূতির নাড়া দেয়। তাইত জীবন থেকে ত্রিশটি বসন্ত চলে গেলেও আজও ভুলিনি বস্তকে বরণ করতে। এজন্যই বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ। কনকনে শীতে শুধুযে বাঘ কাঁপে তা কিন্তু নয় অধিকাংশ মানুষই কাঁপে তরতর শীতে। আমাদের গ্রামগুলোতে বুঝা যায় শীতের তীব্রতা কত ভয়াবহ। যেন তাদের কষ্ট দেওয়ার জন্যই শীতের আগমন। তাদের কাছে বসন্ত মানে শীতের সাথে দুই মাস যুদ্ধ করে ফিরে আসা।
কবিদের কাছে বসন্ত পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা। শীতে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া প্রকৃতি যেন ফিরে পায় নতুন রুপ, নতুন যৌবন। চা-বাগানে গজানো নতুন কুড়ি সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ভরে উঠবে আপন মহিমায়। কবিদের হৃদয়ে দোলা দিবে নতুন নতুন ছন্দে। এসব ছন্দ সমৃদ্ধ করবে আমাদের সাহিত্য ভান্ডার।
মানুষের কর্মব্যস্ততা, প্রকৃতির প্রতি বিরুপ আচরণের কারণে বসন্তের বার্তা আর আগের মত আমাদের কানে এসে পৌছায় না। সর্বাগ্রে বসন্তের বার্তা যে আমাদের কাছে নিয়ে আসত সেই বসন্ত দূতের সাক্ষাৎ এখন দুষ্কর। আমরা মানুষই এর জন্য দায়ী। আমরা তাদের আবাসন, নিরাপত্তা দিতে অক্ষম। ফলে হারিয়ে গেছে আমাদের চিরচেনা সেই মধুর কুহু কুহু কন্ঠ। আমরা কখনো বুঝে আবার কখনো না বুঝে তাদের ধ্বংশ করে ফেলেছি। তাদের অস্তিত্য সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছি। শিমুল-পলাশ এখন শুধু বই পুস্তকেই রয়েছে প্রকৃতিতে পাওয়া দুষ্কর। বড় বড় দালান কোটায় ছেয়ে গেছে দেশ। এই দালান কোটার ইট-পাথর ভেদ করে বসন্তের আগমন আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না। আমারমত যারা প্রকৃতি প্রেমি রয়েছে সাবাই চেষ্টা করি প্রকৃতিকে রক্ষা করার, প্রকৃতির কাছা কাছি থাকার কিন্তু শত বাধার মধ্যে তা আর হয়ে ওঠে না। আমারা এখন টাকা দিয়ে সুখ কেনার চেষ্টা করি কিন্তু প্রকৃতির মধ্যে যে সুখ লুকিয়ে রয়েছে তা আমরা অনুধাবন করতে পারি না।
আমাদের কবি গুরু বলে গেছেন-‘আহা আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,এত বাঁশি বাজে,এত পাখি গায়।’
আসলে এত ফুল এখন ফুটবে কোথায় আমরা কী ফুল ফুটানোরমত এতটুকু জায়গা রেখেছি?
ফলে বর্তমান কবি সাহিত্যিকদের মনেও বসন্ত তেমন একটা দুলা দেয় না। অতিতের কবি সাহিত্যিকদের রেখে যাওয়া বসন্তের সম্পদ দিয়েই চলছে বর্তমান প্রজন্ম। সেই সম্পদের পরিমান স্থবির হয়ে রয়েছে।
এই সম্পদ স্থবির হয়ে যাওয়ার আভাবটুকু বুঝতে পেরেছেন কবি সুফিয়া কামাল। তাঁর ভাষায় ‘হে কবি নীরব কেন, ফাগুণ যে এসেছে ধরায়, বসন্তে বরিয়া তুমি ল‘বে নাকি তব বন্দনায়?’ আসলে ফাগুল আসলে কী হবে আমরা ফাগুনের সেই রস, সেই স্বাদ আস্বাদন করতে পারছি না। আমরা ফাগুণের সেই অমৃতই হারিয়ে ফেলেছি। প্রকৃতি থেকে শুধু রস আস্বাদন করলেই চলবে না, সেই রসের যোগানও প্রকৃতিকে দিতে হবে।
বসন্ত শুধু বৃক্ষরাজীরই প্রাণ সঞ্চার করে না, মানব হৃদয়েও প্রাণের পূনজাগরণ ঘটায়। বাউল স¤্রাট শাহ আবদুল করিমের গানের ভাষায়- ‘বসন্ত বাতাসে সই গো, বসন্ত বাতাসে, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে।’ সময় এসেছে বসন্তকে নিয়ে নতুন করে ভাবার। নতুন অনুভূতি নতুন চিন্তা-চেতনা এবং বসন্তের পূর্বের রুপ ফিরিয়ে আনার। তবেই আমরা কবি-সাহিত্যিকের কাছ থেকে নতুন কিছু আশা করতে পারি। মানুষের মনে ভালবাসার বীজ বুনতে পারি। বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আবার যেন আমার বাড়ি আসে। এর জন্য প্রকৃতিকে তৈরি করতে হবে। তানাহলে ফাগুণের দিনগুলি সত্যিই একদিন শেষ হয়ে যাবে।
লেখক: মিহির রঞ্জন তালুকদার
শিক্ষক,
বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ,সিলেট।