মৌলভীবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বৈদ্যুতিক খুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বাঁশ ও সুপারি গাছ!
প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ জানুয়ারি ২০১৭, ২:১১ পূর্বাহ্ণ
সুরমা নিউজ ডেস্ক:
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের ৪ ইউনিয়নের ৩৫টি গ্রামে পিডিবির আওতাধীন প্রায় ৫০ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর ফলে অধিকাংশ লাইনে খুঁটি হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে বাঁশ ও সুপারি গাছ।
এছাড়াও ২৫০ কেভির একটি ট্রান্সফরমারে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাঁশের উপর রাখা হয়েছে ফিউজ লাইন। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বিদ্যুৎহীন হয়ে যায় এসব এলাকা। প্রায়ই ঘটে কোন না কোন দুর্ঘটনা।
দুর্ঘটনায় গত ৪ বছরে শিশুসহ ১০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। পড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে প্রায় অর্ধশতাধিক গরু-মহিষ ও ছাগল মারা গেছে। এক যুগেও সংস্কার কাজ না হওয়ায় চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় গ্রাহকদের মাঝে।
জানা যায়, উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের হাসিমপুর, বাবনিয়া, বেরী, কোনাগাঁও, নোনা, নলডরী, মহিষমারা, কান্দীগাঁও, গুতুমপুর, রাঙ্গিছড়া বাজার, ফাড়ি বাগান, কালিটি চা-বাগান, রাউৎগাঁও ইউনিয়নের কবিরাজী, পালগ্রাম, রস্তুমপুর, সদর ইউনিয়নের গাজীপুর, হাসনপুর, প্রতাবী, বনগাঁও, বালিচিরি, গুতগুতি, লক্ষ্মীপুর, বনগাঁও (২),শংকরপুর, ঝিমাই পুঞ্জি, পৃথিমপাশা ইউনিয়নের পুরশাই গ্রামসহ প্রায় ৩৫টি গ্রামে রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন। গত ৪ বছরে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অর্ধশত মানুষ।
সদর ইউনিয়নের পশ্চিম প্রতাবী গ্রামের একই পরিবারের কাশেম চৌধুরী (১২) ও কামিল চৌধুরী (৭) নাম দুই ভাই জমিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। ছেলে শোকে এখনও আর্তনাদ করছেন বাবা।
লক্ষীপুর গ্রামের সুনু মিয়া (৪৫), আইন উল্লাহর মেয়ে মুমিনা বেগম (২২) এবং কর্মধা গ্রামের হায়দর আলীর স্ত্রী আজিরুন বেগম (৩৫) ছেড়া তারে স্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছেন। এছাড়া বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রায় শতাধিক গরু-মহিষ ও ছাগলের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় একাধিক বাসিন্দাদের মধ্যে অধ্যক্ষ মুফতি আহসান উদ্দীন, শিক্ষক অজয় দেব, পারভেজ হোসেন ভূঁইয়া, ব্যবসায়ী আব্দুল মতিন, হেলাল আহমদ, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রসময় দেব নাথ, শিক্ষার্থী পল্লবী দাস, সুজিতা রানী দেব, পঞ্চমী রাণী দেব ক্ষোভের প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় থেকে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ঝুঁকিপূর্ণ ওই বিদ্যুৎ লাইনগুলো মেরামতের দাবি জানিয়ে আসলেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি বিদ্যুৎ বিভাগ। অনেক স্থানে বিদ্যুৎ লাইনের খুঁটি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও সুপারি গাছ। এসব খুঁটিতে বিদ্যুতের তারগুলো খুবই দুর্বল। প্রতিদিনই বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়ে আগুন লেগে দুর্ঘটনা ঘটছে নয়তো খুঁটি ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, কখনো বা দিনের পর দিনও। অনেক সময় দায়ে পড়ে এগুলো স্থানীয় গ্রাহকরা নিজেদের উদ্যোগেই সাময়িকভাবে মেরামত করে নিতে বাধ্য হন। বর্ষা মৌসুমে একটু বাতাসেই ভেঙে যায় খুঁটিগুলো।
এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন স্থানীয় গ্রাহক মো. তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ বিতরণ সিস্টেম উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এনে ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটি ও লাইন সংস্কার করলে এলাকাবাসী দুর্ঘটনার কবল থেকে মুক্তি পাবে। পাশাপাশি লো-ভোল্টেজ সমস্যা দূর হবে।
মৌলভীবাজার বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দুলাল হোসেন জানান, এলাকাবাসীর আবেদন পেয়েছি। খোঁজ নিয়ে নতুন প্রকল্পের আওতায় এনে ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মেরামত করা হবে।
উল্লেখ্য, মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল মতিনের ডিও লেটারসহ জনস্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে এ লাইনটির উন্নয়নের জন্য ২০১৫ সালের মার্চ মাসে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।