নবীগঞ্জে ১৪টি বিদ্যালয় ভবন ঝুঁকিপূর্ণ : দুর্ঘটনার আশঙ্কা
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ জানুয়ারি ২০১৭, ৬:২৯ অপরাহ্ণ
নবীগঞ্জ প্রতিনিধি:
নবীগঞ্জ উপজেলার ৮০ নম্বর জন্তরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে পাঠগ্রহণ করছে। যে-কোনো সময় ঝুঁকিপুর্ণ ভবনটি ধসে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা। এ ছাড়া বৃষ্টির দিনে শ্রেণিকক্ষে ক্লাস করতে না পেরে স্কুলের বারান্দায় ক্লাস করতে হয়।
শুধু জন্তরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই নয়; নবীগঞ্জে এরকম আরো ১৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করছে।
শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকেরা জানান, নবীগঞ্জ উপজেলার করগাঁও ইউনিয়নের জন্তরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৮৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ২৪ শতক ভূমিতে স্থাপিত এই স্কুলটি জাতীয়করণ করা হয় ১৯৭৩ সালে। তখন একটি ভবন দিয়েই স্কুলের যাত্রা শুরু হয়। পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে এলইজিডির বাস্তবায়নে নতুন একটি ভবন নির্মিত হয়। স্কুলের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ২৯৮ জন। এর ফলে নতুন ভবনে স্থান সংকুলান না হওয়ায় পুরাতন ভবনে প্রাক প্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে হয়। বি-গ্রেডের এই স্কুলটি ২০১০ সাল থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাস করার গৌরব অর্জন করে আসছে। এছাড়া এই স্কুলে রয়েছে পিএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। প্রায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ শত শিক্ষার্থী ওই পরীক্ষায় অংশ নেয়। কিন্তু পুরাতন ভবনটি ঝুঁকিপুর্ণ হওয়ায় নতুন ভবনেই অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা নিতে হয়। পুরাতন ভবনের জরাজীর্ণ অবস্থার বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বরাবরে একাধিকবার জানানো হলেও অদ্যাবধি কোনো ফল হয়নি।
৮ নম্বর বড় শাখোয়া ক্লাস্টারের এই স্কুলে জন্তরী, রাজাপুর, মিলিক ও কলেজপাড়া এলাকার ছেলেমেয়ের একমাত্র ভরসা জন্তরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। জরাজীর্ণ ভবন ছাড়াও ওই স্কুলে রয়েছে আর্সেনিকমুক্ত বিশুদ্ধ পানির অভাব, স্যানিটারি সমস্যা এবং শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য মাঠের অভাব। অথচ স্কুলের সামনের ভূমি ও পুকুরটি মাটি ভরাট করলে শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একটি উপযোগী মাঠ গড়ে উঠতে পারে। পাঁচজন শিক্ষকের এই স্কুলে প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে জানা গেছে, স্কুলে লেখাপড়ার মান আশানুরূপ। কেবল একটি ভবনের কারণে ছেলেমেয়েদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। পুরাতন ভবনের চার পাশে টিন দিয়ে ঘেরা, দরজা-জানালা ভাঙা। কনকনে শীতের হিমেল হাওয়া প্রবেশ করে শিক্ষার্থীদের ঠান্ডার কারণে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। বৃষ্টির মৌসুমেও পড়তে হয় বিপাকে। এর ফলে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করা সম্ভব না হওয়ায় বাধ্য হয়ে বারান্দায় ক্লাস করতে হচ্ছে। ঝুকিঁপুর্ণ এই ভবনে ক্লাস নেয়ার কারণে কোমলমতি শিশুরা আতঙ্কের মাঝে লেখাপড়া করছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, যে সব স্কুলে ভবনের খুবই প্রয়োজন, সেখানে ভবন হচ্ছে না। যে স্কুলগুলোতে ভবন আছে, সেখানেই আবার নতুন ভবন নির্মিত হচ্ছে। জন্তরী স্কুলসহ উপজেলার অনেক স্কুলের ভবন সমস্যা রয়েছে। ঝুঁকিপুর্ণ ভবনে ছেলেমেয়েরা ক্লাস করছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নজর দেয়ার দাবি জানাই।
জন্তরী স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন জ্যোতি রায় বলেন, ২০০৮ সাল থেকে পুরাতন ভবনটি জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। স্থান সংকুলানের অভাবে ক্লাস নিতে হিমশিম খেতে হয়। বৃষ্টির সময় বারান্দায় ক্লাস নিতে হচ্ছে। নতুন ভবনের জন্য একাধিকবার আবেদন করেছি। কোনো প্রতিকার হচ্ছে না।
ওই স্কুলের শিক্ষিকা আলেয়া ফেরদৌস আলো জানান, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ক্লাস নিতে গিয়ে আতঙ্ক থাকে, কখন যে ভেঙে পড়ে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত মাঠ নাই।
জন্তরী স্কুলসহ উপজেলার ১৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে বলে জানাগেছে। যে-কোনো মুহূর্তে এ সব ভবন ধসে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ১৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পুরোনো আধাপাকা ভবন জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে এ বিদ্যালয়গুলো অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অভাবে ঝুঁকি নিয়েই পাঠদান কার্যক্রম চলছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় ও পড়াশোনায় বিঘ্ন ঘটায় অনেক শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়গুলো হলো, বড় ভাকৈর (পশ্চিম) ইউনিয়নের সোনাপুর-জগন্নাথপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড় ভাকৈর (পূর্ব) ইউনিয়নের হরিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের নাদামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মোস্তফাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুর্শি ইউনিয়নের এনাতাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, তাহিরপুর বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নের মান্দারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা ইউনিয়নের বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাইকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন গ্রাম ইমামবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দেবপাড়া ইউনিয়নের ঝিটকিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
কোনো কোনো বিদ্যালয়ের দুই পাশের দেয়াল ভেঙে পড়েছে। আবার কোনো বিদ্যালয়ে দেয়ালে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। ছাদের পলেস্তারা খসে পড়েছে। অনেক বিদ্যালয়ের উপরের টিনের ছাউনি ভেঙে গেছে। তবুও শিক্ষার্থীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণ করছে। অনেক আগে ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমে গেছে। অনেক শিক্ষার্থী ব্র্যাক ও আশ্রয় প্রকল্পের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ভবনজনিত নানা সমস্যার কারণে এ সব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অচিরেই দু’একটি ঝুঁকিপুর্ণ ভবনের মেরামত বা পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হবে।